স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুর উঁচু শহর, এ শহরে কোনদিন বন্যা হবে না। দিনাজপুরের মানুষ বন্যার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ ধারণা ছিল দিনাজপুরের মানুষের। কিন্তু তারপরও ১২ আগস্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দিনাজপুর শহরকে কিভাবে তছনছ করে দিয়েছে, এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়েই জানা গেছে, স্বাধীনতার ৪৫ বছর দিনাজপুরের নদ-নদী, খালবিল খনন করা হয়নি। শহর রক্ষা বাঁধের অবৈধ স্থাপনা ও বাঁধ কেটে বাড়িঘর নির্মাণ এর মূল কারণ। অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করে দিয়েছে পানি নিষ্কাশনের পথ। প্রায় সব সরকারের আমলেই জেলার প্রতিটি বাঁধের জমি ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীদের বাহুবলে বিক্রি হয়েছে। তৈরি হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। পাকা ঘর নির্মাণ করে এখনও বসবাস করছে এসব মানুষ। দিনাজপুর শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘড়া ও গিরিজা ক্যানেল। ঘাঘড়া খালটি কাহারোলে শুরু হয়ে পূর্বদিকে বাস টার্মিনাল হয়ে দিনাজপুর শহরে ঢুকেছে। এ খাল শহর হয়ে মিশে গেছে পুনর্ভবা নদীতে। আর গিরিজা খালটি শহরের কালিতলা থেকে শুরু করে পাটুয়াপাড়া, বালুয়াডাঙ্গা, কসবা হয়ে পুনর্ভবায় মিশেছে। এ দুটি ক্যানেল কোনদিনই খনন করা হয়নি। দিনাজপুর শহরের ৩ দিক থেকে বয়ে এসেছে ৩টি নদী। পূর্বদিকে আত্রাই, পশ্চিম দিকে পুনর্ভবা, উত্তরদিকে ঢেপাসহ ছোট-বড় ১৯টি নদী রয়েছে। এসব নদী স্বাধীনতার পর খননের মুখ দেখেনি। ফলে এসব নদীর ধারণক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। শহরের পূর্বদিকে চাটগাঁও থেকে কাউগাঁ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কিমি পশ্চিমদিকে গোসাইপুর থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত ১৫ কিমি বাঁধ রয়েছে। পৌরসভা বলছে, ঘাঘড়া ও গিরিজা ক্যানেলটির বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বাঁধ রয়েছে। এ বাঁধের দু’ধারে অবৈধ দখলের ছড়াছড়ি। বাঁধ কেটে মাটি সরিয়ে অবৈধ স্থাপনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে বাঁধ। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, বাঁধের অবৈধ স্থাপনা প্রায় ৭শ’রও ওপর। অনিয়ম ও নক্সা ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ করায় বাঁধগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ কারণেই বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। শহরে ঢুকে পড়েছে পানি, ভেঙ্গেছে বাঁধ, ডুবেছে দিনাজপুর। দিনাজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম পৌরসভাকে দায়ী করে বলেন, বাঁধ দখল মুক্ত ও খনন করার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: