অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি বিবিএস কেবলের অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, কমিটির সদস্যরা হলেনÑ বিএসইসির উপ-পরিচালক মোঃ শামসুর রহমান, সহকারী পরিচালক মোঃ রাকিবুর রহমান ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মোঃ আরিফুর রহমান চৌধুরী। কোম্পানিটির অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে হবে। প্রসঙ্গত, বিবিএস কেবল ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। আর তালিকাভুক্তির পর থেকেই শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই শেয়ারটি দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে ছিল। লেনদেনের প্রথম দিনে কোম্পানিটি ৯০ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন শেষ করে। মঙ্গলবার দিনশেষে কোম্পানিটি ১৪৪ টাকায় লেনদেন শেষ করেছে।
জানা গেছে, কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির পর থেকেই অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ে। প্রথম দিনেই কোম্পানিটির ৮০ গুণ দর বাড়ে। উচ্চ দরে কোম্পানিটির শেয়ার সংগ্রহ করে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। এছাড়া আরও দর বাড়বে- বাজারে এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে কোম্পানির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন মহলও শেয়ারটি সংগ্রহ করে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে। এছাড়া সেখানে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এমন একজন ইনসাইডার হলেন কোম্পানিটির এমডির বাবা আবদুল হান্নান হাওলাদার। উচ্চমূল্যে তার শেয়ার কেনাবেচার তথ্য মিলেছে। তিনি কোম্পানিটির প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার। তার কাছে রয়েছে মোট শেয়ারের ২ শতাংশ বা ২০ লাখ শেয়ার। তার সঙ্গে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের শেয়ারধারীরাও শেয়ারটি কিনতে থাকে। প্রতিদিনই হু হু করে দর বাড়তে থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে শেয়ারটির দর ১৫৫ টাকায় ওঠার পর মঙ্গলবার কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালিকাভুক্তির পর দ্বিতীয় কোম্পানির গত ১ আগস্ট আবদুল হান্নান হাওলাদার ৮৮ টাকা দরে ৬০ হাজার শেয়ার ৫৩ লাখ টাকায় কেনেন। এরপর ৮ আগস্ট ১০৭ টাকা দরে ১০ হাজার শেয়ার কিনেছেন। ওই দিনই তিনি ১০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন ১০৬ টাকা দরে। এর পরের দিন ১১১ টাকা দরে ৫০ হাজার শেয়ার সাড়ে ৫৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। গত ১৬ আগস্ট ১২০ টাকা দরে ৩৫ হাজার শেয়ার কেনেন। পরে গত রবিবার ওই ৩৫ হাজার শেয়ার ১৩৩ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। গত কয়েকদিনে শেয়ার কেনাবেচা করে তার মুনাফা হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা। আবদুল হান্নান হাওলাদারের মতো প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী আরও অন্তত ১৫ জন উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে দর বাড়াতে ভূমিকা রাখছেন। অবশ্য তাদের প্লেসমেন্ট শেয়ার লকইন থাকায় আগামী বছর ২৬ এপ্রিলের আগে এসব শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।
অন্যদিকে অস্বাভাবিক দর বাড়ানোর ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তির দুই সপ্তাহ পর গত ১৮ আগস্ট বিবিএস কেবলস (ইউনিট-২) লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গঠনের ঘোষণার বড় ভূমিকা রয়েছে। পৃথক এ কোম্পানিরও এমডি আবু নোমান। ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানে তিনি কোম্পানি গঠন ও মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে চুক্তি করার ঘোষণা দেন। উভয় কোম্পানির নাম প্রায় একই রকম হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ভাবছেন নতুন প্রকল্পটিও বিবিএস কেবলের অংশ। প্রকৃতপক্ষে এটি সম্পূর্ণ পৃথক কোম্পানি। এতে বিবিএস কেবলের কোন মালিকানা নেই। এছাড়া কোম্পানিটি অন্তত ১৫ শতাংশ বোনাসসহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে বলেও গুজব ছড়ানো হয়েছে।