ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তার কথা বলে দেহ তল্লাশি

সাগরিকা পশুর হাট নিয়ে ক্রেতারা শঙ্কিত

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২০ আগস্ট ২০১৭

সাগরিকা পশুর হাট নিয়ে ক্রেতারা শঙ্কিত

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে এবার পশুর ব্যবসা নিয়ে শঙ্কিত ক্রেতারা। এর কারণ হিসেবে প্রত্যক্ষ করা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত নজরদারিতার অজুহাত। আর মাত্র ১২ দিন বাকি কোরবানি ঈদের। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে বাজার জমে উঠা। কিন্তু পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর কারণে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে এবার ক্রেতারাও শঙ্কিত সাগরিকা পশুর বাজারকে ঘিরে প্রশাসনের অতিরঞ্জিত পদক্ষেপে। শুক্রবার থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন টিম কড়া নজরদারি শুরু করেছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠিতব্য ক্রিকেট টেস্ট সিরিজকে ঘিরে। কারণ সাগরিকা গরু বাজার ও জহুর আহম্মদ স্টেডিয়াম অনেকটা গা ঘেঁষা হবার কারণে। এদিকে, পশুর হাটের নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এখনও। উল্টো পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা সাগরিকা গরু বাজার ব্যবসায়ীদের নানাভাবে চাপাচাপি শুরু করেছে। এদিকে জাল টাকার নোট শনাক্ত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ বা শাখায় স্ক্যানিং মেশিন সংরক্ষণ করা হয়েছে হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধে। কারণ, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জাল টাকার কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠে প্রতি বছর। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী রাসেদুল জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, পুলিশের কারণে বাজারে ঢোকা ও বের হওয়ায় নানা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। খেলার নামে পুলিশ নিরাপত্তার কথা বলে দেহ তল্লাশি থেকে শুরু করে সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগও তল্লাশি করছে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। এভাবে জনসমক্ষে টাকার ব্যাগ তল্লাশি করায় আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ার কারণে এখনও পশুর হাট জমতে শুরু করেনি চট্টগ্রামে। তবে কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি এবার কুমিল্লা থেকেও গরু ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে আসতে শুরু করেছে। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ দুটি পশুর হাটকে কেন্দ্র করে যোগান দিয়ে থাকে। এই পর্যন্ত ৫ শতাধিক ট্রাক কোরবানির পশু এসেছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ দুটি পশুর বাজারকে ঘিরে। ভারতীয় ও করিডোরের গরু এখনও আসছে না বাজারে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাগরিকা ও বিবিরহাট হচ্ছে স্থায়ী গরুর বাজার। প্রতিবছর ইজারার মাধ্যমে এ দুটি বাজার নির্ধারিত হয় বৈশাখ-চৈত্র হিসাব অনুযায়ী। বাকি ৮টি বাজার মৌসুম ভিত্তিক। তবে এর মধ্যে কর্ণফুলী থানা এলাকায় শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বাজারটি ইজারাবিহীন হলেও সারা বছরই এ বাজারে পশু কেনাবেচা হয়। সাগরিকা ও বিবিরহাটসহ প্রত্যেকটি বাজারেই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ ও পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাজারের বাইরে সড়কে যেন কোন ধরনের বাজার বসতে না পারে সে বিষয়ে বাজার পরিচালনা কমিটিকে নিষেধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা বিধানে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়েছে সিএমপি কমিশনার বরাবর। শনিবার সাগরিকা গরু বাজার প্রত্যক্ষ করে দেখা গেছে, বাজারে ভারত কিংবা মিয়ানমার কোন দেশের গরুই নেই। দেশীয় গরুতে ভরপুর এ বাজার। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে গরু আসছে এ বাজারে। এখনও পর্যন্ত দেশীয় পশুতেই এ বাজারের পরিপূর্ণতা রয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী বাজারের ওপর নির্ভরশীল পশুর দর উঠানামা। একইভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছাগল ও ভেড়া এসব বাজারে আনা শুরু হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী এ ধরনের পশুর চাহিদা কম হওয়ায় মূল্য একটু বেশি গুনতে হয় ক্রেতাদের। এবার গরু আসছে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, খুলনা, পাবনা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা ও লাকসাম থেকে। এ ব্যাপারে সাগরিকা গরু বাজার কমিটির পক্ষ থেকে জানা গেছে, ক্রিকেট খেলার নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরাও একমত। কিন্তু পশুর বাজারে ব্যাপক সাড়া তুলতে না পারলে সিটি কর্পোরেশনের হাট নিলামের টাকা আমরা তুলতে পারব না। ফলে একদিকে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে অন্যদিকে হাসিল আদায় করতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিলাম গ্রহীতারা। কারণ পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া নজরদারি ও দেহ তল্লাশির মতো হয়রানির কারণে ক্রেতারা ভিড়বে না এ বাজারে।
×