ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

ডেট লাইন ১৫ আগস্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২০ আগস্ট ২০১৭

ডেট লাইন ১৫ আগস্ট

(শেষাংশ) বড় বোনের সহপাঠী হিসেবে তাকে দেখেছি দারুণ স্মার্ট, আদব-কায়দাসম্পন্ন তরুণ। স্বাধীনতার পর প্রতিক্রিয়াশীল প্রতি বিপ্লবীরা যেভাবে বঙ্গবন্ধু সরকারের কুৎসা রটাচ্ছিল ঠিক একইভাবে শেখ কামাল সম্পর্কেও যা তা বানোয়াট কাহিনী প্রচার করছিল। তৎকালীন জাসদের মুখপাত্র ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকা বা ভাসানী ন্যাপের ‘হক কথা’ এ ক্ষেত্রে জঘন্য ভূমিকা পালন করে। আমি কাজ করতাম ‘ইত্তেফাকে’। তাতে নিউজ সেকশনের সতর্কতায়, বিশেষ করে মরহুম আসাফ-উদ-দৌলা রেজা ভাইয়ের নেতৃত্বের কারণে হার্ড নিউজে গ-গোল করার সুযোগ না থাকলেও সম্পাদকীয় পাতায় খন্দকার আবদুল হামিদ, আবুল মনসুর আহমদরা গণকণ্ঠের ভূমিকা পালন করেছে। শেখ কামালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছিল, এ যে কত বড় মিথ্যা তার প্রমাণ হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট বাইরের কারও পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব নয়। তাছাড়া শেখ কামাল যে কেবল রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী বা প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের ছেলে তা তো নয়, সে বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্মদাতা পিতার সন্তান তার অর্থের প্রয়োজন পড়লে কি ব্যাংক ডাকাতি করতে হয়? অথচ এক শ্রেণীর মতলববাজ মুখে মুখে কুৎসা রটিয়েছে। বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। সর্বশেষ দেখলাম গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দুর্নীতির মামলায় লন্ডন পলাতক জিয়া-খালেদার ছেলে তারেক শেখ কামালের কুৎসা রটাল। শেখ কামালের পায়ের নখের সমান শিক্ষা, যোগ্যতা যার নেই, বরং দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত, সে যখন কামালকে কটাক্ষ করে তখন ওদের আসল চেহারাই ফুটে ওঠে। শেখ কামালের মধ্যে যেমন দেখেছি, তেমনি দেখছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার মধ্যেও। শেখ হাসিনা যেমন সাদামাটা জীবনযাপন করেন, তেমনি দেশের এক নম্বর পরিবারের সন্তান হয়েও শেখ কামাল ব্যবসায় নামেনি, হাওয়া ভবন-খোয়ার ভবন-ডান্ডি ডায়িং-কোকো ওয়ান টু গড়ে তোলেনি, বরং লেখাপড়া করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি যেমন করেছে (ছাত্রলীগ), তেমনি আবাহনী ক্রীড়াচক্র, স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী, ঢাকা থিয়েটার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, যেগুলো আজ এত বছর পরও আধুনিক স্পোর্টস, সঙ্গীত এবং নাটাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়ে চলছে। বস্তুত ‘ঝরসঢ়ষব ষরারহম যরময ঃযরহশরহম’ বঙ্গবন্ধু পরিবারে চর্চা হতো বলেই তাদের মধ্যে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে দেশ ও জাতির স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। জাতির পিতার উত্তরাধিকার আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে। আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশের আত্মপ্রত্যয়ী নাগরিক। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে ৮৫/৯০-এর মধ্যেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হতো এবং এখন আমরা আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের ফ্লাইওভারে হাঁটতাম। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যোগসাজশে তাদের এজেন্ট মোশতাক-জিয়াকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করায়। হত্যা করায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ জাতীয় ৪ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম. মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান, শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রব সেরানিয়াবাতকে। বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলকে হত্যা করে, যাতে ভবিষ্যতেও এ পরিবারের আর কেউ দেশের হাল ধরার সুযোগ না পায়। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ঊসবৎমবহপব ড়ভ ইধহমষধফবংয রং সু ঢ়বৎংড়হধষ ফবভবধঃ. এই মানসিকতা তারা পরিহার করেছে বলে মনে হয় না আজও। মূলত বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দেবার পর থেকেই কিসিঞ্জাররা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কিন্তু না ৬ দফা, না ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, না মুক্তিযুদ্ধে বিজয় কোনটাই ঠেকাতে না পারলেও চক্রান্ত অব্যাহত রাখে। মুক্তিযুদ্ধের মাঝেই মোশতাক-জিয়া ভারতের মাটিতে বসে চক্রান্ত শুরু করে। মুজিবনগর গবর্মেন্ট জানতে পেরে তাদের ওহধপঃরাব করে রাখে। কিন্তু পশুর খাসলত যার সেকি সংশোধন হয়? আর তাই ’৭৪-এ দুর্ভিক্ষ লাগিয়েও যখন দেখল দেশের অগ্রগতি এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ঠেকানো গেল না তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল। আগেই বলেছি শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু খুনী মোশতাক-জিয়ার চররা আজও তৎপর। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ১৯ বার হামলা করা হয়েছে চট্টগ্রাম, নাটোর, জামালপুর, ৩২ নম্বরের বাসভবন, রাসেল স্কোয়ার, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ- কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে আছেন এবং জাতি-রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। ভাড়াটিয়া খুনী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ফারুক যেমন টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়ে জিয়ার সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে, তেমনি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মুফতি হান্নান বলেছে হাওয়া ভবনে তারেকসহ বসে কিভাবে ২০০৪-এর ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হামলা করা হয়েছে, যাতে নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৩ জন নেতাকর্মী ঙহ ঃযব ংঢ়ড়ঃ নিহত হন এবং তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ঢাকায় তখনকার মেয়র মুহম্মদ হানিফ, আবদুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গ্রেনেডের স্পিন্টার বয়ে আলটিমেটালি ইন্তেকাল করেন। আজও অনেকে শরীরে স্পিøন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন। চক্রান্ত শেষ হয়ে যায়নি। আজও সরকারের কাছাকাছি ঘাপটিমেরে আছে চক্রান্তকারীরা। আমরা যেন না ভুলি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব যেমন ছিল অপ্রতিরোধ্য, তেমনি শেখ হাসিনাও আজ বিশ্বের প্রথম কাতারের রাষ্ট্রনেতা। সদা সতর্কতা জরুরী। ঢাকা ॥ ১৭ আগস্ট ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×