ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদায় হবে আগস্ট থেকেই, অনেকেই দেশে ফেরার কথা ভাবছেন

সৌদিতে প্রবাসী কর্মীদের ওপর অত্যধিকহারে করের বোঝা চেপেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ আগস্ট ২০১৭

সৌদিতে প্রবাসী কর্মীদের ওপর অত্যধিকহারে করের বোঝা চেপেছে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি কর্তৃপক্ষ এ মাস থেকেই কর্মীদের বেতন থেকে কর কেটে নেবে। প্রবাসী কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়ের ওপর অস্বাভাবিক হারে কর আরোপ করা হয়েছে। বিরাট অঙ্কের করের ঘানি টানতে পারবেন না এমন অনেক বৈধ কর্মী ও ব্যবসায়ী দেশে ফেরার জন্য ‘আউট পাস’ নিয়েছেন। তারা যে কোন সময় দেশে ফিরবেন। প্রতি কর্মীকে মাসে বাংলাদেশী টাকায় ২ হাজার ২শ’ টাকা করে কর দিতে হবে। এই পরিমাণ কর দিয়ে কর্মীরা কাজ করে দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না। উল্টো তাদের নিজেদের চলতে ঋণ করতে হবে। একইভাবে সৌদিতে যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আসছেন তাদের ওপরও করের বোঝা চেপেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গত দুই বছরে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় সৌদি সরকার গত জুনে এমন সিদ্ধান্ত নেয়। সৌদি সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য ‘২০৩০ ভিশন’ বাস্তবায়ন করার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার জন্য সৌদি সরকার প্রবাসী কর্মী ও ব্যবসায়ীদের ওপর মোটা অঙ্কের কর ধার্য করেছে। ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বাজেট ঘাটতি মেটাতে এ ঘানি টানতে হবে বিদেশী কর্মীদেরও। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিএমইটি জানিয়েছে, প্রবাসী কর্মীদের ওপর সৌদি সরকার কর আরোপ করবেন এমন একটি খবর তারা শুনেছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি কোন চিঠিপত্র পাননি। চিঠিপত্র না পাওয়া পর্যন্ত কোন আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। আগস্ট থেকে কর্মী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর দিতে হবে এমন খবর বিএমইটির এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, তারা বিষয়টি জানেন না। একজন ব্যবসায়ী টেলিফোনে জানান, তারা যে পরিমাণ করের বোঝায় পড়েছেন তাতে তাদের আর সৌদি আরবে থাকা সম্ভব না। এ কারণে আউট পাস নিয়ে রেখেছি। যাতে যে কোন সময় দেশে ফিরে যাওয়া যায়। দিনরাত হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যদি পরিবারের সুখ শান্তি না আনতে পারেন তাহলে কেন সেখানে তারা থাকবেন। কর্মীদের ওপর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকেই ২ হাজার ২শ’ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। ২০১৮ সালে এই ট্যাক্সের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তখন মাসে প্রতি কর্মীকে ৪ হাজার ৪শ’ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। ২০১৯ সালে ৬ হাজার ২শ’ টাকা ও ২০২০ সালে ৮ হাজার টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদি থেকে কয়েকজন টেলিফোনে জানিয়েছেন, সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মী কমিয়ে স্থানীয় জনশক্তির কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে প্রবাসী কর্মীদের ওপর বড় অঙ্কের ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। এ মাস থেকেই কর কাটা শুরু করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। সৌদি কর্তৃপক্ষ সরাসরি কর্মীদের কাছ থেকে কর কেটে নেবে না। কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কর আদায় করে নেবে। আর কোম্পানিগুলো কর্মীদের কাছ আনুপাতিক হারে কর কেটে নেবে। কোম্পানিগুলো এমন অবস্থায় বিদেশী কর্মী নিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা এখন নিজ দেশের কর্মী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিজ দেশের কর্মী নিয়োগ করলে কোন কর দিতে হবে না। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে বিদেশী কর্মী নিয়োগ দিলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রতি ৩শ’ রিয়াল করে মাসিক ফি দিতে হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এটা বেড়ে ৫শ’ রিয়াল করা হবে। আর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে জনপ্রতি দিতে হবে ৭শ’ রিয়াল। এত বেশি ট্যাক্স দিয়ে কোম্পানিগুলো বিদেশী কর্মী নিয়োগ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যদিও বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ কর্মী দেশটিতে যাচ্ছেন। বিভিন্ন খাতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পাবেন। এখান থেকে যদি বড় অংকের টাকা ট্যাক্স দিতে হয়, তাহলে তারা কাজ করে শুধু নিজেরাই চলতে পারবেন। বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারবেন না। জমি জমা ঘরবাড়ি ও ঋণ ধার করে একজন কর্মী যদি সৌদিতে গিয়ে এমন অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে। অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনগুলো বলছে, সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরী ভিত্তিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কথা বলা উচিত। যদি উল্লিখিত হারে কর দিতে হয় তাহলে কর্মীরা দেশে কোন টাকাই পাঠাতে পারবে না। কর্মীদের বড় অংশ দেশে ফিরে আসবে। তখন বেকার সমস্যা ও ঋণে জর্জরিত কর্মীরা না পারবে ঋণ ধার শোধ দিতে না পারবে কোন কিছু করতে। এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। এমন সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই সমাধান করা প্রয়োজন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) বলছে, সৌদি আরব বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। এই বাজার থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে। প্রবাসী কর্মীদের ওপর ট্যাক্সের বোঝা চাপলে সত্যিই রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাবে। কিন্তু এ ধরনের কোন খবর তারা অফিসিয়ালি পাননি। বিষয়টি সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছ থেকেও জানতে পারেননি।
×