ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ লাখ টন চাল ও ৫ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ আগস্ট ২০১৭

১৫ লাখ টন চাল ও ৫ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে চলমান বন্যা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ১৫ লাখ টন চাল ও ৫ লাখ টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন বন্দরে ভেড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। পাশাপাশি চাল আমদানিতে শুল্কের হার এখনকার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। আজকালের মধ্যে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বুধবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের একথা বলেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চাল আমদানির শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। আজকালের মধ্যে এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে। আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে চাল আমদানির সম্ভাবনা আরও বাড়বে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যেভাবে বন্যা আসছে তাও একটা বিপদের অবস্থা। সবমিলিয়ে আমরা এবার ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম বিদেশ থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এপ্রিলের শুরুতে আগাম বন্যায় হাওড়ে ফসলহানি এবং মজুদ তলানিতে নেমে আসার প্রেক্ষাপটে বাজার সামলাতে গত ২০ জুন আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। এর আগে বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। জুনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পাশপাশি রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়। এর পাশাপাশি সরকারী পর্যায়েও চাল আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু মজুদ পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি তাতে হয়নি। গত বছর এপ্রিলে যেখানে সরকারী গুদামগুলোতে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল ছিল, সেখানে এ বছর ১৫ জুলাইয়ে তা ১ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টনে ঠেকে। সরকারী পর্যায়ে চাল আমদানি শুরুর পর ১০ আগস্ট চাল মজুদের পরিমাণ বেড়ে ২ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন হলেও গত বছরের মজুদের তুলনায় এই পরিমাণ প্রায় অর্ধেক। সরকারের পদক্ষেপে চালের দাম কিছুটা কমলেও আশানুরূপ কমেনি। তবে দেশের চলমান বন্যা বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম এখনও মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। ট্যাক্স কমানোর ফলে বাজারে চালের দাম আরও কমবে। বাজারে চালের দাম খুব একটা বেশি নাই, এখন একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। সবার কাছে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আছে। বুধবারের বৈঠকে সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এবার এক কোটি ৯১ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে উৎপাদন হয়েছে তারচেয়ে ২০ লাখ টন কম। বোরো মৌসুমে সরকার মোট ১০ লাখ টন চাল এবং দেড় লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিল। কিন্তু সবমিলিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টন বোরো এবার সংগ্রহ করা যাবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, দেশে কোনরকম খাদ্য সঙ্কট নেই। আমাদের গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে, বাজারেও পর্যান্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য আছে। আমরা কেবল সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য কোনরকম সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় সেজন্য বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি করছি। মন্ত্রী জানান, আমদানির শুল্ক কমিয়ে দেয়ার পর ভারত থেকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৬০ হাজার টন চাল এবং ৫ লাখ ৭০ হাজার টন গম এসেছে। সরকারী পর্যায়ে ভিয়েতনাম থেকে যে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছিল, তার বেশিরভাগ অংশ চলে এসেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাকিটাও এ মাসের মধ্যে চলে আসবে। কম্বোডিয়ার সঙ্গে আড়াই লাখ টন চালের চুক্তি হয়েছে। শীঘ্রই চুক্তিপত্র ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের জন্য তোলার কথা। সরকারীভাবে চাল আমদানি ছাড়াও টেন্ডারের মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আসছে। এরমধ্যে তিন লাখ টনের চুক্তিপত্র হয়েছে, বাকি ৫০ হাজার টনের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। যে ১৫ লাখ টন চাল এ অর্থবছরে আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তারমধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে তথ্য দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের কোনরকম সমস্যার কোন কারণ নাই, কোন কিছুতেই কোন সমস্যা হবে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন।
×