ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নজরদারিতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা

মেজর জিয়াকে যে কোন মূল্যে ধরতে ফের কঠোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ আগস্ট ২০১৭

মেজর জিয়াকে যে কোন মূল্যে ধরতে ফের কঠোর নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ এখন শুধু শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীদের একজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সামরিক শাখার প্রধান সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াই অধরা। যে কোন মূল্যে মেজর জিয়াকে ধরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তাকে ধরার জন্য ইতোমধ্যেই নজরদারি শুরু করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর নব্য জেএমবির জঙ্গীরা আলোচনায় আসায় মেজর জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়টি অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে যায়। এখন নব্য জেএমবি নামক জঙ্গী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব জঙ্গী নেতাই নিহত অথবা গ্রেফতার হওয়ায় আবারও এবিটির সামরিক প্রধান মেজর জিয়াকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানান, গত বছর গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল নব্য জেএমবির জঙ্গীরা। একের পর এক জঙ্গীবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুখে দিয়েছে নব্য জেএমবির জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা। ধ্বংস করা হয়েছে তাদের জঙ্গী আস্তানা। আত্মঘাতী হামলায় নব্য জেএমবির সদস্যরা মারাও গেছে। গত এক বছর ধরেই আলোচনায় ছিল না আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গী সংগঠনটি। জঙ্গী সংগঠনটির কার্যত কোন অপতৎপরতার খবরও নেই। খবর নেই জঙ্গী সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকেরও। নতুন করে আবার এ জঙ্গী নেতাকে ধরতে নতুন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু করেছে। তবে মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ঢাকাতেই আত্মগোপন করে আছে কিনা সেই বিষয়ে নতুন করে নজরদারি ও খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানান, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জঙ্গী নেতা মেজর জিয়া গত ৪ বছর ধরেই পলাতক থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের অন্যতম মাথা হিসেবে কাজ করছে। মেজর জিয়াকে ধরতে অসংখ্যবার অভিযান হয়েছে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু তার টিকিটিও ছোঁয়া যায়নি। ধূর্ত প্রকৃতির জঙ্গী নেতা গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে সব সময় নিত্য-নতুন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মেজর জিয়া কারাগারের বাইরে থাকা মানে যে কোন সময় সে সংগঠনকে সংগঠিত করতে পারে। এ অবস্থায় তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরী হয়ে পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেন, মেজর জিয়া নজরদারিতে রয়েছে। তখন তার এ বক্তব্য নিয়ে অনেকটাই আগ্রহ তৈরি হয় গণমাধ্যমে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সংস্থাই চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াকে আটক কিংবা গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেনি। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় মেজর জিয়া অধরা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানান, গত বছরের ২৫ এপ্রিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা রাজধানীর কলাবাগানে ঘরে ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার ও বাংলাদেশে সমকামীদের একমাত্র ম্যাগাজিন ‘রূপবান’-এর সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য জুলহাস মান্নান (৩৫) ও তার বন্ধু তন্ময় মজুমদার। ওই ঘটনার পর পুলিশ ও র‌্যাব এবিটি সদস্যদের ধরতে ধারাবাহিক অভিযান শুরু করে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ ১৯ মে ব্লাগর, প্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ৬ সদস্যকে ধরিয়ে দিতে ১৮ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে। এই ৬ জন হলেন শরীফ, সেলিম, সিফাত, রাজু, সিহাব ও সাজ্জাদ। তাদের মধ্যে গত বছরের জুনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১ নিহত হয়। যার প্রকৃত নাম মুকুল রানা। গ্রেফতার হয় আরেক নেতা সুমন হোসেন পাটোয়ারী ওরফে সিহাব ওরফে সাইফুল। সামির ওরফে সিফাতও ধরা পড়ে। গ্রেফতার হয় সবুর ওরফে সুজন। তবে এখনও সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২, সাজ্জাদ ওরফে সজিব ওরফে সিয়াম, তাহসিন ওরফে তাহের এবং জুনায়েদ ধরা পড়েনি। পুলিশের গ্রেফতারের তালিকায় থাকা সংগঠনটির আরও অন্তত ১২ গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, মেজর জিয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে হালনাগাদ কোন তথ্য নেই। সে হয়ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে বিরত অথবা দেশত্যাগ করেছে। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান এবং এর কদিন পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নব্য জেএমবির সদস্যরা পৃথক ২টি জঙ্গী হামলা চালায়। এতে তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন নব্য ধারার জেএমবি সদস্যরা দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। তখন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ঘোষণা দিয়েছিল তারাও বড় ধরনের জঙ্গী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু ঘোষণা দিয়েও এবিটি সদস্যরা আর হামলা করতে পারেনি। তার আগেই তাদের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এতে এবিটির সাংগঠনিক কাঠামো অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে-বিদেশে আলোচিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার অনুসারী। এবিটির আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী ২০১৩ থেকে কারাবন্দী। আর কারাগারের বাইরে থেকেই কথিত ‘বড়ভাই’ মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক সংগঠনটি পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি মূলত সংগঠনের অপারেশন শাখার নিয়ন্ত্রক। কাকে হত্যার টার্গেট করতে হবে সে সিদ্ধান্ত তিনিই দিয়ে থাকেন। গত বছরের ২ আগস্ট নব্য ধারার জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরী এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরতে ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে তামিম চৌধুরী দুই সহযোগীসহ নিহত হয়। তবে এখনও অধরা রয়ে গেছে এবিটির জঙ্গীদের কাছে ‘বড়ভাই’ হিসেবে পরিচিত সেনা বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া।
×