ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিমের বাম্পার ফলনে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৬ আগস্ট ২০১৭

শিমের বাম্পার ফলনে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর গ্রামের আলহাজ মোঃ আব্দুল হাকিম শেখের খামারসহ এলাকার প্রায় প্রতিটি শিমচাষীর ক্ষেতে ‘রূপবান শিমের’ ফুলে ফুলে ভরে গেছে বিস্তীর্ণ শিমের মাঠের পর মাঠ। দূর থেকে শিম ক্ষেতের দিকে তাকালে প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এ জন্য এবার এলাকার শিমচাষীদের ঘরে ঘরে আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিমের বাম্পার ফলনে এলাকার কৃষককুলে অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন লক্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জানা যায়, দেশের প্রধান শিম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়ন। এ এলাকায় প্রতিবছর প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকার শিম উৎপাদন হয়ে আসছে। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর থেকে এলাকার চাষীরা শিম চাষে উৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে মুলাডুলির ঐতিহাসিক আমবাগানে শিমের বিশাল আড়ত চালু হয়েছে ৮/৯ বছর থেকে। ফলে গত ১৫ বছর ধরেই এ এলাকায় ট্রাকে মালামাল পরিবহন, হোটেল ব্যবসাসহ নানাভাবে অর্থনৈতিক কর্মকা- জোরদার হয়েছে। এলাকার মানুষের আর্থিক পরিবর্তনও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। তার ওপর গত কয়েক বছর থেকে এলাকায় শুরু হয়েছে শিমের আগাম জাত রূপবান শিম চাষ। এ শিমের ফলন বেশি এবং লাভও করছেন বেশি চাষীরা। এ জন্য এ শিম চাষে প্রত্যেকটি চাষী বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। শিমের আগাম জাত রূপবান শিম চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন শিম চাষী আব্দুল হাকিমসহ বেশকিছু চাষী। শিমচাষী হাকিম বলেন, তিনি তার ৫ বিঘা শিম ক্ষেত থেকে ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। তার খামারে তাকালে শুধুই শিম চাষের সমারোহ চোখে পড়ে। শিমের ফুলের মুর্হুমুহু গন্ধে এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ৩৫শ’ টাকা মন দরে আগাম লাগানো ৫ বিঘা জমি থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার ‘রূপবান’ শিম ইতোমধ্যে বাজারে বিক্রি করেছেন। খরচের তুলনায় দাম একটু বেশি পাওয়ায় সকল চাষীর মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। পাড়ায়-মহল্লায় আনন্দের জোয়ার বইছে। কৃষককুলে আনন্দের জোয়ারে যাতে ভাটা না পড়ে সে জন্য কৃষকরা এখন ‘রূপবান’ শিমের মরা ফুল বাছাই ও ফুল রক্ষার কাজে মহাব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে শিমের ক্ষেতে ফুল-ফলের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অতি বৃষ্টিতে কিছুটা ফুল শিম গাছ থেকে ঝরে পড়লেও তারা তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়েননি। শিমচাষীরা বলেন, সহজ শর্তে তাদের ব্যাংক ঋণ দরকার। সহজ শর্তে কোন ব্যাংক-বীমা কিংবা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ঋণ প্রদান করলে হাকিমেখামারসহ বেশকিছু চাষীর শিম চাষ আরও প্রসারিত করা সহজ হতো। এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকা-ও বৃদ্ধি পেত। সফল শিমচাষীরা শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরির পেছনে না ঘুরে এবং বসে না থেকে শিম চাষে ঝুঁকে পড়ারও আহ্বান জানান। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন জামাল জানান, গত বছর শিম মৌসুমে ঈশ্বরদীতে এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছিল। কৃষকরা এখন আগাম জাতের ‘রূপবান’ শিম চাষে ব্যস্ত রয়েছেন, তাছাড়া ফলনও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ‘রূপবানের’ ফুলে ফুলে ভরে গেছে এলাকার অনেক কৃষকের শিমের মাঠ। অন্যদিকে দেশীয় জাতের শিম চাষের জন্যও কৃষকরা পুরোদমে বেড তৈরি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
×