ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রবাসী মুমু আনসারীর আবৃত্তি পরিবেশনা ‘স্বদেশের আঙিনায়’

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ আগস্ট ২০১৭

 প্রবাসী মুমু আনসারীর আবৃত্তি পরিবেশনা ‘স্বদেশের আঙিনায়’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মার্কিন মুলুকে থাকলেও হৃদয়জুড়ে তার বাংলাদেশের প্রতি অসীম অনুভব। আর সেই অনুভবটাকে খুঁজে নেন কবিতার মাঝে। তাই তো যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসকারী আবৃত্তিশিল্পী মুমু আনসারীর নিত্যসহচর হয় এ দেশের কবিদের কবিতা। কখনও সেই কাব্যিক মোহ তাকে এপার বাংলা পেরিয়ে নিয়ে যায় ওপার বাংলার কবির কবিতায়। দুই বাংলার বিখ্যাত কবিদের কালজয়ী সেসব কবিতা উচ্চারিত হলোÑ তার কণ্ঠে। কবিতাপ্রেমী একঝাঁক শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলেন মুমুর কারুকার্যময় কণ্ঠে পঠিত অনেকগুলো কবিতা। শুক্রবার শ্রাবণের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা অবধি প্রবাসী এ বাচিকশিল্পী উজার করে উপস্থাপন করেন কবিতায় সাজানো অনবদ্য পরিবেশনা। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো ‘স্বদেশের আঙিনায়’ শীর্ষক আবৃত্তিসন্ধ্যা। পরিবেশনার শুরুতেই চারটি ধর্মগ্রন্থের আশ্রয়ে কাব্যিক উচ্চারণে সাম্যের গান গাইলেন মুমু আনসারী। কোরআন শরিফ, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটকের নির্বাচিত অংশ পাঠের মাধ্যমে মানববন্দনায় সূচনা হয় উপস্থাপনা। এরপর মিলনায়তন পরিপূর্ণ শ্রোতার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ঘটিয়ে শিল্পী বলেন, এ শোকের মাসে আজকের আবৃত্তি পরিবেশনাটি উৎসর্গ করলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বদেশে কবিতাপাঠের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করে বলেন, বাবার পেশার সুবাদে আমার শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে এ প্রেসক্লাবে। ছোটবেলার সেই চেনা জায়গায় কবিতাপাঠে ভিন্ন রকম আনন্দ অনুভূত হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন নিজের ঘরের উঠানে বসে কবিতা পড়ছি। সংক্ষিপ্ত আলাপন শেষে শিল্পী পুনরায় চলে যান কাব্যভুবনে। কুণ্ঠে তুলে নেন শহীদ কাদরীর কবিতা ‘প্রবাসের পঙ্্ক্তিমালা’। মুমুর অদ্ভুত সুন্দর উচ্চারণে বইয়ের পৃষ্ঠায় থাকা কবিতাখানি সজীব হয়ে ওঠে প্রাণের পরশে। মোহাবিষ্ট আবৃত্তিতে শিল্পী আদায় করে নেন শ্রোতাদের মুহুর্মুহু করতালি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে স্মরণ করে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ থেকে উচ্চারণ করেনÑ আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর ...। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে পাঠ করেন ‘আগমনী’ কবিতা। চড়া কণ্ঠে শব্দের নিনাদ ছড়িয়ে উচ্চারিত হয়Ñ একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন/ঝন রণরণ রণ ঝনঝন ...। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশও আপন কবিতার আশ্রয়ে হাজির হন মুমুর শিল্পিত উচ্চারণে। পড়ে শোনান ‘নির্জন স্বাক্ষর’ শিরোনামের কবিতা। একে একে শিল্পীর পঠিত কবিতায় যুক্ত হয় শামসুর রাহমানের ‘রাত আড়াইটার পঙ্ক্তিমালা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুরলদীনের সারা জীবন’, সিকান্দার আবু জাফরের ‘বাংলা ছাড়ো’ ও আনিসুল হকের ‘মানুষ জাগবে ফের’। এছাড়াও শিল্পী পাঠ করেন হেলাল হাফিজ, নবারুণ ভট্টাচার্যসহ দুই বাংলার বিখ্যাত কবিদের এগুচ্ছ আলোচিত কবিতা। কবিতার বাইরে ছড়াও পাঠ করে শ্রোতাদের নির্মল আনন্দে ভাসিয়েছেন শিল্পী। বাদ্যযন্ত্র তবলার তালে পড়ে শুনিয়েছেন সুকুমার রায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য, সুকুমার বড়ুয়া, মঞ্জুর কাদের ও লুৎফর রিটন রচিত বেশকিছু ছড়া। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কবিতাপাঠ করেছেন নিউইয়র্কে বসবাসকারী মুমুর দুই শিক্ষার্থী আবৃত্তিশিল্পী মুন জেবিন হাই ও নাহরীন ইসলাম। তারা পাঠ করেন নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘গবর্নমেন্টের টাকা’, ভবানী প্রসাদ মজুমদারের ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’, সুকুমার রায়ের ‘হিংসুটেদের গান’সহ বেশকিছু কবিতা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেনÑ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলা সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও মুমুর বাবা মুহাম্মদ ফজলুর রহমান।
×