ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসি তিন মাসেও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ঠিক করতে পারেনি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১১ আগস্ট ২০১৭

বিটিআরসি তিন মাসেও মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ঠিক করতে পারেনি

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিটিআরসি। গত মার্চে আইটিইউর এক কর্মকর্তাকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য বিটিআরসি নিয়োগ দিলেও ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ সম্ভব হয়নি। বলা হচ্ছে, কস্ট মডেলিং করতে কিছুটা সময় লাগছে। কস্ট মডেলিং হয়ে গেলে বোর্ড সভায় আলোচনা করে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করা হবে। পরামর্শকের সুপারিশ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য দাম ধরা হবে। যাতে কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। অভিযোগ আছে, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের চাপের মুখে বিটিআরসি মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেছে। বিটিআরসির সিদ্ধান্ত এ বছরেও বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করছে তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ৭ কোটি ইন্টারনেট গ্রাহক সৃষ্টি হওয়াকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। এর মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ গ্রাহকই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাকি ৫ ভাগ গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে গ্রাহকদের খরচ অনেক বেশি। এই খরচ কমানোর জন্য বিটিআরসি তিন মাস আগে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত তিন মাসেও ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি সংস্থাটি। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেটের দাম সহনীয় না হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে বড় বাধা হয়ে দ৭াড়াবে। মোবাইল ইন্টারনেটের চেয়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়াতে না পারলেও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতি খুব একটা আসবে না। দেশে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহক সাড়ে ১৩ কোটি। এর মধ্যে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বাকি এক কোটি গ্রাহক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইন্টারনেটের দাম গ্রাহক পর্যায়ে কমাতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিটিআরসিকে বেশ কয়েক দফা তাগিদ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তাগিদের পর বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে আইটিইউ থেকে একজন পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে। পরামর্শকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলে বিটিআরসি জানিয়েছে। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণের কাজ চলছে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোন কাজই হচ্ছে না। অপারেটররা মোবাইলে ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি টাকা কেটে নিচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কস্ট মডেলিং’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার জন্য বিটিআরসি এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার কথা। বিটিআরসি জাতিসংঘের অধীন প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক কর্মকর্তাকে পরামর্শক হিসেবে মার্চের শুরুর দিকে নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগকৃত পরামর্শক ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের বিষয়ে বিটিআরসিকে পরামর্শ দেবে। বিটিআরসি ওই পরামর্শের ভিত্তিতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের জন্য আমরা আইটিইউর এক কর্মকর্তাকে কস্ট মডেলিংয়ের জন্য নিয়োগ দিয়েছি। কস্ট মডেলিং করতে কিছুটা সময় লাগবে। কস্ট মডেলিং হয়ে গেলে বোর্ড সভায় আলোচনা করে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করব। তবে এখনই ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে না। পরামর্শকের সুপারিশ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য দাম ধরা হবে। যাতে কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিটিআরসির তথ্য মতে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৫ শতাংশ এ সেবা নিচ্ছেন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের গ্রাহক যত বাড়বে পরিকল্পিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ আরও বেগবান হবে। তবে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ইন্টারনেটের দাম রাখতে না পারলে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। সম্প্রতি ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণের জন্য বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা সবার হাতে পৌঁছে দিতে গত মাসের মধ্যে ইন্টারনেটের দাম ঠিক করার কথা ছিল। কিন্ত এ মাসেও ইন্টারনেটের দাম পুনঃনির্ধারণের কাজটি শেষ হবে না। বর্তমানে বাজারে ইন্টারনেটের যে দাম রয়েছে তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার রাইরে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে ইন্টারনেটের নতুন দাম নির্ধারণ করার কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। যাতে গ্রাহক এবং ব্যবসায়ী কোন পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটি মূল্য থাকবে। যার মধ্য থেকেই গ্রাহক এবং ব্যবসায়ীদের চলতে হবে। দেশের সব প্রান্তে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ চলছে। ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর জন্যও কাজ করা হচ্ছে। দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা না হলে কাজেরও কোন গতি আসবে না। বিটিআরসি জানিয়েছে. তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তরুণ প্রজন্ম যাতে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করা হবে। তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে গড়ে উঠবে। মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানো না হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হবে। সবার জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করা সরকারের অঙ্গীকার। কিন্তু মোবাইল অপারেটররা নানা প্যাকেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম বেশি নিচ্ছে। এমন অভিযোগ পাওয়ার পরই মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় দাম কমানোর। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নামে মাত্রেই রয়ে গেছে। বাস্তবে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেটের দাম কমানো হয়নি।
×