ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জে আলোচিত পাঁচ খুন মামলায় ভাগ্নে মাহফুজের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৮ আগস্ট ২০১৭

না’গঞ্জে আলোচিত পাঁচ খুন মামলায় ভাগ্নে মাহফুজের মৃত্যুদণ্ড

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ নগরীর বাবুরাইলে মা ও দুই সন্তানসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ে একমাত্র আসামি ভাগ্নে মাহফুজকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আকতারের আদালত আসামি মাহফুজের উপস্থিতিতে এই রায় দেন। এদিকে এ মামলার বাদী ও নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা আদালতের এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, আদালত পাঁচ খুনের ঘটনায় তাসলিমা বেগমকে হত্যার দায়ে আসামি মাহফুজকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করেছেন। উচ্চ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রশিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। সেই সঙ্গে অন্য চারজনকে হত্যার দায়ে আলাদা আলাদা চার্জে আলাদা আলাদাভাবে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। তবে রায় কার্যকর হবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে একই সঙ্গে। আদালত আদেশে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আদালত তার রায়ে বলেছেন, আসামি পক্ষ যদি এই রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন তাহলে তাকে বিনামূল্যে মামলার রায়ের কপির নকল সরবরাহ ও আপীল দায়ের করতে পারবেন। আদালতের এই রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। পরকীয়ার সম্পর্ক জের ধরে মসলার বাটার শিল দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং গলায় ওড়না ও শার্ট পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে একে একে তাসলিমা, তার ছেলে শান্ত, মেয়ে সুমাইয়া ও ভাই মোশারফ ও জা লামিয়াকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম জানান, অল্প সময়ের মধ্যে এই রায় ঘোষণা হওয়ায় আমরা খুশি। আমরা চাই এই মামলার রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। আসামির মৃত্যুদ- যাতে বহাল থাকে সেই দাবি জানাই। নিহত তাসলিমা বেগমের মা মোর্শেদা বেগম জানান, যত তাড়াতাড়ি এই মামলার রায় কার্যকর হবে আমরা ততই খুশি। আমরা চাই দ্রুত যাতে ওর (মাহফুজ) ফাঁসি হয়। আমাদের দুনিয়াতে কিছুই রাখে নাই। বিনা দোষে আমার মেয়ে-নাতিনগুলোকে শেষ করে দিয়েছে। আমরা দ্রুত ওর ফাঁসি চাই। আমার সবশেষ করে দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী মোঃ সুলতানুজ্জামান জানান, আসামিপক্ষ মনে করে এ রায়ে সে অসন্তুষ্ট। সে প্রকৃত ন্যায় বিচার পায়নি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতে আপীল করলে সে ডেথরেফান্সে ন্যায় বিচার এবং খালাস পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ নগরীর বাবুরাইল খানকা মোড় এলাকায় ইসমাইল হোসেনের ভাড়াটিয়া বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে একই পরিবারের পাঁচজনকে নৃংশসভাবে মসলা বাটার শিল দিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাগ্নে মাহফুজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়ির ফ্ল্যাটের তালা ভেঙ্গে তাদের লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেনÑ ঘাতক মাহফুজের মামার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৪০) তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ভাই মোরশেদুল (২৫) এবং তার জা লামিয়া (২৫)। এই ঘটনায় নিহতের তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাগ্নে মাহফুজ, ঢাকার কলাবাগানের ঋণদাতা নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওইদিন রাতেই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরদিন গ্রেফতার করা হয় শফিকুল ইসলামের ভাগ্নে মাহফুজকে। ২১ জানুয়ারি আদালতে মাহফুজ হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের ভাগ্নে মাহফুজকে আসামি করে অন্যদের অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। এই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামি আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর আগে গত ৩০ জুলাই এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ধার্য করেন। যে ভাবে হত্যা করা হয় ৫ জনকে নগরীর বাবুরাইল এলাকার ভাড়াটিয়া শফিকুল ইসলামের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে তার ভাগ্নে মাহফুজের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি জানা জানি হলে মাহফুজকে পারিবারিক বিচার সালিশে জুতা পেটা করে মামা শফিকুল তার বাড়িতে আসা বন্ধ করে দেয়। ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি রাতে মাহফুজ গোপনে শফিকুলের বাবুরাইল এলাকার ভাড়া বাসায় প্রবেশ করে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকে। গভীর রাতে তাসলিমার ভাই মোশারফ বাথরুমে যাওয়ার সময় মাহফুজকে দেখতে পেয়ে রেগে যায়। এ সময় মাহফুজ ক্ষিপ্ত হয়ে মসলা বাটার শিল দিয়ে মোশারফকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। শব্দ শুনে তাসলিমা ঘুম থেকে উঠে এগিয়ে আসলে তাকেও মাহফুজ শিল দিয়ে আঘাত করে একই কায়দায় হত্যা করে। তারপর তাসলিমার জা’ লামিয়া, মেয়ে সুমাইয়া ও ছেলে শান্তকে একই কায়দায় হত্যা করে মাহফুজ বাসাটি তালাবদ্ধ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ১৫ জানুয়ারি মধ্য রাত থেকে ১৬ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত এ হত্যাকা-গুলো ঘটায়। ওই রাতে শফিকুল ইসলাম বাসায় ছিলেন না। ১৬ জানুয়ারি রাতে আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে এসে সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তালা ভেঙ্গে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ দেখতে পায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করে।
×