ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যা সমাধানে ওআইসি বিশেষ ভূমিকা রাখবে

মুসলিম দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৬ আগস্ট ২০১৭

মুসলিম দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে

তৌহিদুর রহমান ॥ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) বিশেষ ভূমিকা রাখবে। রোহিঙ্গাদের সরকারী উদ্যোগে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তরে সমর্থন দিয়েছে ওআইসি। এছাড়া মুসলিম দেশগুলো এই ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপও বাড়াবে। রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিকভাবে সমাধান চেয়েছে ওআইসি। এছাড়া বাংলাদেশকে এক লাখ মার্কিন ডলার ( প্রায় ৮০ লাখ টাকা) প্রতীকী মানবিক সহায়তা দেবে সংস্থাটি। ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন চারদিনের বাংলাদেশ সফরে শেষে শনিবার সকালে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তিনি এই সফরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়া তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পও পরিদর্শন করেছেন। সূত্র জানায়, ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে এসব বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ওআইসি মহাসচিব রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সৃষ্টি করতে ওআইসির কাছে জোরালো আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্যও চাপ দিতে একাধিকবার ওআইসির সহায়তা চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি বরাবরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে এই ভূমিকা আরও জোরালো হোক। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই ইস্যুতে সম্পৃক্ত করার কাজে ওআইসির ভূমিকা বিশেষ জরুরী। ওআইসি মহাসচিবের ঢাকায় সফরের সময় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ওআইসি মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে এই প্রথম বাংলাদেশে আসলেন ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন। সে কারণে বাংলাদেশকে এক লাখ মার্কিন ডলার ( প্রায় ৮০ লাখ টাকা) প্রতীকী মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল ল্যাবরেটরি উদ্বোধন করেছেন। রোহিঙ্গাদের হাতিয়ার ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তরে বিভিন্ন মহলের মতবিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছে। তবে ওআইসি সরকারের এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে। যেটা সরকারের জন্য খুবই ইতিবাচক। ওআইসি মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে কারণ তাদের দেশ মিয়ানমার। আমরা এটি সমর্থন করি। জাতিসংঘকে একাধিক প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এ দ্বীপে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকবে। এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য আমি সব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ওআইসি মহাসচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আগামী দিনগুলোতে কিভাবে অগ্রসর হওয়া যায় সে বিষয়ে মিয়ানমারকে একটি রোডম্যাপ বা প্রোগ্রাম দেয়ার কথাও বলেন। রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা না, এটি গোটা মুসলিম বিশ্বের সমস্যা। তাই তাদেরকে শুধু মানবিক সাহায্য নয়, তাদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় ওআইসি মহাসচিব প্রশংসা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা ও বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা এই সমস্যার সমাধানের পথ বের করবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে অবহিত করা হয়েছে, মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ওআইসি মহাসচিব জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা জানিয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তাকে জানানো হয়েছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং এ কাজে ইমাম, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে এটাও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন বুধবার রাতে চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। নবেম্বরে দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে দেখার জন্য শুক্রবার কক্সবাজার সফরে যান ওআইসি মহাসচিব। তিনি সেখানে কুতুপালং ক্যাম্প ও কক্সবাজারের আশেপাশের অঞ্চল ঘুরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখেন। শনিবার সকালে জেদ্দার উদ্দেশে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
×