ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড’

নারীর এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ৪ আগস্ট ২০১৭

নারীর এগিয়ে চলা

মলয় বিকাশ দেবনাথ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড’- এ ভূষিত হলেন। বাংলাদেশ অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড’- পেয়েছেন। গত ২৫ জুলাই নিউ ইয়র্কের প্রিন্সটন ক্লাবে ‘সিমা কলাইনু’ নামে একটি শিশু অটিজম কেন্দ্র ও স্কুল এবং এর আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আই কেয়ার ফর অটিজম’র বার্ষিক প্রাতঃরাশ অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের পক্ষে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। এ্যাওয়ার্ড গ্রহণকালে রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, অটিজম বিষয়ক জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টি, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অটিজমের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তার জন্য বাংলাদেশ গর্ব করতে পারে। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অটিজম ও অন্যান্য নিউরো- ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার আক্রান্ত মানুষের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। অটিজম শিশু সার্বিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা যা শিশু জন্মের তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা সাধারণত যোগাযোগ ও সামাজিক আচরণে বয়সের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকে। তিনটি প্রধান সমস্যা সব অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির ভিতর থাকে। * মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগে সমস্যা। * সামাজিক আচরণে সমস্যা। * পূনরাবৃত্তিমূলক আচরণ সমস্যা। অটিজমকে মোট পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। ১। ক্লাসিক্যাল অটিজম : ক্লাসিক্যাল অটিজম আক্রান্ত শিশুর মধ্যে অটিজমের প্রধান তিনটি শিষ্টের সবই থাকে। যেমন: (ক) এদের ভাষার বিকাশের সমস্যা (খ) অন্যের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলাতে সমস্যা (গ) এরা অন্য শিশুদের মত খেলে না এবং এদের মধ্যে অনাবশ্যক কোন বস্তুপ্রীতি সৃষ্টি হয় অর্থাৎ কোন একটি বস্তু ধরলে সেটার প্রতি তার মনোযোগ নিবিষ্ট রাখে। ক্লাসিক্যাল অটিজমের কারণে শিশুর মধ্যে কোন কিছু শিখতেও সমস্যা হয় এবং কেউ কেউ পুনরাবৃত্তিমূলক অঙ্গভঙ্গি যেমন-অনবরত হাত পা দোলানো, চুলটানা, হাত কামড়ানো, মাথায় আঘাত করার মতো আচরণ করতে থাকে। ২। এসপারজার সিনড্রোম : এসপারজার সমস্যার শিশুদের মধ্যে (ক) ভাষার বিকাশ সময় মতো ঘটে। (খ) তাদের বুদ্ধিমত্তা সাধারণত স্বাভাবিক কিংবা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। (গ) সামাজিক কার্যকলাপে পিছিয়ে থাকে। এরা বস্তু বা ঘটনার সুশৃঙ্খলতার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করে অর্থাৎ ঘরের কোন বস্তু যেমন- টেবিল, চেয়ার, বা অন্য যে কোন জিনিস যেভাবে রাখা হয় তার সেভাবেই থাকতেই হবে। ব্যতিক্রম ঘটলে সেটা পছন্দ করে না। ৩। পারভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার নট আদারওয়াইজ স্পেসিফাইড : ক্লাসিক্যাল অটিজম এবং এর লক্ষণ এর মধ্যে কিছু লক্ষণ যেগুলো একত্রে অবস্থান করে তাদের শ্রেণী করণে সমস্যা দেখা দেয়। এরূপ অবস্থায় আক্রান্ত শিশুকে অটিজমের কোন বিশেষ শ্রেণীভুক্ত করা যায় না। সে কারণে বিশেষজ্ঞরা এরূপ মিশ্র সমস্যাকে পরিব্যাপক বিকাশমূলক বিকৃতি যা অন্যভাবে নিরূপণ যোগ্য নয় বা পারভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার নট আদারওয়াইজ স্পেসিফাইড (পিডিডি-এনওএস) বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই বিকৃতি অতি শৈশবে ধরা পড়ে। তবে তিন বছর পর থেকে এর পরিপূর্ণ রূপ প্রকাশ পায়। পিডিডি-এনওএস এর লক্ষণের মধ্যে। ক) এদের ভাষার ব্যবহার ও বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। খ) আই কন্টাক্ট ও কোন কিছু নির্দিষ্ট করে দেখাতে সমস্যা হয়। গ) খেলনা নিয়ে খেলতে পারে না। ঘ) পরিচিত পরিবেশ ও রুটিন পরিবর্তনে সমস্যা হয়। ঙ) অঙ্গ সঞ্চালনে পুনরাবৃত্তি করে। ৪। রেট সিনড্রোম : এটাও শৈশবকালীন মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক বিকাশমূলক সমস্যা। এই সমস্যায় আক্রান্ত শিশুরা জন্ম থেকেই ছয় মাস বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে বিকাশ ঘটে। ছয়মাস থেকে আঠার মাস বয়সের মধ্যে যে কোন সময় থেকে অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়া শুরু করে। রেট আক্রান্ত শিশুটির মানসিক ও সামাজিক বিকাশ দ্রুত গতিতে কমে আসে। এক সময় দেখা যায় শিশুটি বাবা মার ডাকে সাড়া দেয় না, শিশুটি কথা বলা বন্ধ করে দেয়, সামাজিক আচরণ করে না, শরীর সঞ্চালনের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায়। সাধারণত মেয়ে শিশুদেরই রেট সিনড্রোম এ আক্রান্ত হতে দেখা যায়। রেট লক্ষণ চারটি স্তরে বিকশিত হয়। যথা: ক) প্রথম স্তর: এই স্তর ছয় থেকে আঠার মাসের মধ্যেই শুরু হয়। এই স্তরে আই কন্টাক্ট কমে যায়, খেলনার প্রতি আগ্রহ দেখায় না, স্থুল পেশীর বিকাশ ধীর হয়, ফলে বসতে ও দাঁড়াতে অনেক সময় নেয়। খ) দ্বিতীয় স্তর: এই স্তরে এক থেকে চার বছরের মধ্যে এর প্রকাশ ঘটে। এই সময়ে হাতের বিশেষ কোন দক্ষতা এবং কথা বলার ক্ষমতা লোপ পায়। এই সময়ে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে পিছনে বা পাশে রাখে। হঠাৎ এটা ওটা স্পর্শ করে। কারও কারও শ্বাসেরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। গ) তৃতীয় স্তর : এই স্তরে দুই থেকে দশ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। দৈহিক অঙ্গ সঞ্চালন ও খিঁচুনী এই পর্যায়ের বৈশিষ্ট্য। এই স্তরে আক্রান্ত ব্যক্তি তার পরিবেশের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এবং যোগাযোগ দক্ষতায় উন্নতি হয়। ঘ) চতুর্থ স্তর : এই স্তরে পেশীর দুর্বলতা বা কাঠিন্য সমস্যা উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। ৫। সিডিডি শৈশবকালীন সমন্বয়হীনতার বিকৃতি : এই সমস্যা চেনার সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো যে শিশু দুই বছর বয়স পর্যন্ত অত্যন্ত স্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে ওঠে এবং তার মধ্যে বয়সোপোযোগী যোগাযোগ ও সামাজিক দক্ষতায় বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎ করে সিডিডি লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথমে সবচেয়ে প্রকটভাবে যে লক্ষণ দেখা যায় তা হলো শিশু কথা বলা বন্ধ করে দেয় এবং অতি শৈশবের এক শব্দের কথায় ফিরে আসে। শিশুর পেশী নিয়ন্ত্রণ, ভাষা ও সামাজিক কার্যকলাপে দক্ষতাও কমে আসে। এছাড়া পাকস্থলী ও মূত্রাশয়ের ওপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। সিডিডি এর ক্ষেত্রে কখনও কখনও খিঁচুনিও দেখা যায়। সিডিডির ক্ষেত্রে হারানো দক্ষতাগুলো প্রশিক্ষণ ও চর্চার ফলে কখনও ফিরে আসে না। সর্বোপরি সামাজিক সচেতনতা ও অটিজম আক্রান্তদের প্রতি যথাযথ আচরণে ওদের সুন্দর ভবিষ্যত উপহার দেয়া সম্ভব।
×