ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন ॥ মিয়ানমারকে ওআইসি মহাসচিব

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৪ আগস্ট ২০১৭

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন ॥ মিয়ানমারকে ওআইসি মহাসচিব

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বৈঠকে মিলিত হন। ঢাকা সফররত ওআইসির মহাসচিব বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওআইসির মহাসচিব মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। ওআইসির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। সামনের দিনগুলোতে কিভাবে অগ্রসর হওয়া যায় সে বিষয়ে তিনি মিয়ানমারকে একটি রোডম্যাপ বা প্রোগ্রাম দেয়ার কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি গোটা মুসলিম বিশ্বের সমস্যা। তাই তাদের শুধু মানবিক সাহায্য নয়, তাদের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্যও আমাদের কাজ করতে হবে। ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন বলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে কারণ তাদের দেশ মিয়ানমার। আমরা এটি সমর্থন করি। এ সময় ওআইসির মহাসচিব জাতিসংঘকে একাধিক প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ দেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথক দ্বীপের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এ দ্বীপে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থাকবে। ওআইসি মহাসচিব বলেন, এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য আমি সব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশেও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে এবং ওআইসি বাংলাদেশের পাশে আছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ওআইসি মহাসচিব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি বলেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা এবং বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। চার দিনের সফরে বুধবার ঢাকায় পৌঁছানো ওআইসি মহাসচিব বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইসহানুল করিম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় ওআইসি মহাসচিব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা ও বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা এ সমস্যার সমাধানের পথ বের করবে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ওআইসি মহাসচিবকে জানান, বাংলাদেশকে এ সমস্যা নিয়ে নিয়ে ভুগতে হচ্ছে ১৯৯১ সাল থেকে। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে নোয়াখালীর হাতিয়ায় সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা রয়েছে সরকারের। ওআইসি মহাসচিব রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের ওই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বলে ইসহানুল করিম জানান। শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয় সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রেস সচিব জানান, ওআইসি মহাসচিব সাক্ষাতকালে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রীও সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তাকে জানান। শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং এ কাজে ইমাম, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক দল জঙ্গীবাদে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন বলে জানান তার প্রেস সচিব। শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণ করা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবনের কথাও তিনি এ সময় স্মরণ করেন। বৈঠকের শুরুতেই আল-ওথাইমিন ওআইসির কর্মকা- সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। ইহসানুল করিম বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে ওআইসি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মুসলিম বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং তাকে সফল নেত্রী হিসেবে অভিহিত করেন। আল-ওথাইমিন ওআইসির সদস্য দেশগুলোর জন্য বিজ্ঞান, কারিগরি এবং চিকিৎসা বৃত্তি চালুর কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে ওআইসির অংশগ্রহণের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসিভুক্ত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ পেলে বাংলাদেশ তাকে স্বাগত জানাবে। আগামী বছর ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যটনমন্ত্রীদের দুটি সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে ওআইসির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করেন আল-ওথাইমিন। ওআইসির মহাসচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। এ সফরে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে ওআইসি মহাসচিব বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু, ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া এক নৈশভোজে ওআইসি মহাসচিব অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওথাইমিন বুধবার রাতে চার দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। নবেম্বরে দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিন দেখার জন্য আজ শুক্রবার কক্সবাজার যাবেন ওআইসির মহাসচিব। তিনি সেখানে কুতুপালং ক্যাম্প ও কক্সবাজারের আশপাশের অঞ্চল ঘুরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
×