ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপায় ট্রিপল মার্ডার

জমিজমার বিরোধ নিয়ে ৬ মাস আগেও পরিবারের আরেক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৪ আগস্ট ২০১৭

 জমিজমার বিরোধ নিয়ে ৬ মাস আগেও পরিবারের আরেক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর গলাচিপা ছৈলাবুনিয়া গ্রামে একই পরিবারের তিন সদস্য বাবা, মা ও মেয়ে হত্যার ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। নারকীয় কায়দায় নির্মম এ হত্যাকা-ের নেপথ্যের কারণ নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। তবে এ ঘটনার মাত্র ৬ মাস আগে একই পরিবারের আরেক সদস্য খুন হয়েছিল। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সংঘটিত প্রথম খুনের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় বার পরিবারের তিন সদস্যকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে, এমন ধারণার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। নিহত তিনজন হলেনÑ দেলোয়ার মোল্লা (৬৫), তার স্ত্রী পারভীন বেগম (৫৫) ও মেয়ে কাজলী বেগম (১৫)। নিহত দেলোয়ার মোল্লার বড়ভাই মোঃ ইদ্রিস মোল্লা বৃহস্পতিবার গলাচিপা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে কোন এক সময়ে স্ত্রী, সন্তানসহ তার ছোটভাই দেলোয়ার মোল্লা খুন হয়ে থাকতে পারেন। তবে প্রতিবেশীদের কাছে খুনের এ ঘটনাটি নজরে আসে বুধবার সন্ধ্যার পরে। প্রতিবেশী হনুফা বেগম তার হাঁস খুঁজতে গিয়ে খুনের ঘটনা জানতে পারেন। হনুফা বেগম বলেন, হাস খুঁজতে গিয়ে দেলোয়ার মোল্লার ঘরের ভেতর ছাগল-মুরগির ডাকাডাকি শুনতে পান। তার ডাকাডাকিতে কেউ সাড়া না দেয়ায় দরজার ফাঁক গলে চোখ ভেতরে যেতেই দেখেন মশারির ভেতরে কোলাকুলি অবস্থায় রক্তমাখা দুটি লাশ পড়ে আছে। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কাজলী বেগমের মাথা ছিল দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন। পেটের নাড়িভুঁরি বেরিয়ে পড়েছিল। তার লাশ বারান্দায় পড়েছিল। দেলোয়ার মোল্লার মাথা এমন ভাবে কোপানো হয়েছে, যেন মুরগির মাংস কাটা হয়েছে। পুরো মাথা জুড়ে অসংখ্য কোপ। পারভিন বেগমের শরীরেও অসংখ্য কোপের চিহ্ন রয়েছে। এ দুজনের লাশ ঘরের মধ্যে চৌকির ওপরে ছিল। সব লাশে পচন ধরেছিল। পুলিশের ধারণা, মশারির ওপর থেকে তাদের কোপানো হয়েছে। রাতভর সুরতহাল শেষে বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ ঘটনার মাত্র ৬ মাস আগে এ বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ইদ্রিছ মোল্লার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে শফি মোল্লাকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করা হয়। শফি হত্যার পর তার বাবা ইদ্রিছ মোল্লা পরিবার নিয়ে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। ইদ্রিছ মোল্লা পরিবার নিয়ে রক্ষা পেলেও ছোট ভাই দেলোয়ার মোল্লা খুনীদের হাত থেকে রেহাই পাননি। পরিবারসহ তাকে হত্যা করা হয়। শফি মোল্লা হত্যার ঘটনাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তদন্ত করছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম সরদার এ বিষয়ে বলেন, ঘটনার পর থেকেই হত্যার মামলার আসামিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, হত্যা মামলার দুই সাক্ষী দেলোয়ার মোল্লা ও তার স্ত্রী পারভীন বেগম সম্প্রতি ১৬১ ধারায় সাক্ষী দিয়েছেন। এরপরই তারা খুন হয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শফি হত্যা মামলার তদন্ত এগিয়ে নেয়া হবে। পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, শফি হত্যা মামলার আসামিরা ঘটনার পর থেকেই পলাতক। নিহত দম্পতি ওই মামলার সাক্ষী। তাদের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই আসামিদের বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সাক্ষীদের খুনের সময় তাদের মেয়ে কাজলী বেগম দেখে ফেলায় তাকেও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তদন্তেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে, কারা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
×