ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে বললেন সিনহা

কিছু মন্ত্রী এজলাসে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করেন, এটা কি ফেয়ার?

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২ আগস্ট ২০১৭

কিছু মন্ত্রী এজলাসে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করেন, এটা কি ফেয়ার?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা কি কোর্টে কিছুই মন্তব্য করতে পারব না?’ বিচারিক বিষয়ে কথা বলতে পারব না? ‘আপনারা প্রধান বিচারপতি ও কোর্টের স্বাধীনতা খর্ব করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন আমরা কি কিছুই বলতে পারব না?’ পত্রিকায় এসেছে একজন, একজন বলেছেন। কোর্ট প্রসিডিংসে আদালতের কার্যক্রমে যা হয় তা নিয়ে পার্লামেন্ট এবং পাবলিকলি কথা বলার সুযোগ নেই। মঙ্গলবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্ত আপীল শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপীল বেঞ্চে এ মন্তব্য করেন তিনি। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর সংসদে এই নিয়ে সমালোচনা এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সোমবার আইনমন্ত্রীর এ্যাডভোকেট আনিসুল হকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে এ বক্তব্য আসল। সোমবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (সুপ্রীমকোর্ট) সংশোধন করে যেটা দিয়েছিল সেখানে দেখা গেছে, আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে, ১১৬ অনুচ্ছেদে মহামান্য রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা সেটা তারা নিয়ে নিতে চায়। আমি কি করে সেটা দেই? আপনারা আমাকে রায় দিয়ে দেন, বলেন? আমি তো দিতে পারি না।’ মঙ্গলবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা জাজদের মধ্যে ডিভিশন সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। আমরা কি কোর্টে বসে মন্তব্য করতে পারব না? কিছু কিছু মন্ত্রী এজলাসে বসে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করেন। এটা কি ফেয়ার? আপনাকে প্রশ্ন করছি।’ তখন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘দুই দিক থেকে বক্তব্য আসে। বক্তব্য মিডিয়া লুফে নেয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন এ কথা বলছেন? বিচারে আমরা পলিটিক্যাল মন্তব্য দেই না। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বক্তব্য দেই। বিচার বিভাগে যখন যে ইস্যু চলে আসে। যেমন আজকে (মঙ্গলবার) মোবাইল কোর্ট সম্পর্কে। না বললে কি থাকল, মাসদার হোসেন মামলা। আমরা পলিটিক্যাল কথা বলছি না।’ এ সময় বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহাব মিঞা বলেন, ‘শৃঙ্খলাবিধির খসড়ার গেজেট প্রকাশের বিষয়টি আমরা সুপ্রীমকোর্টের কথা অনুসারে বলেছিলাম। কিন্তু আপনারা সেখানে সরকারের কথা বলেছেন।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পলিটিক্যাল কথা বলছি না। মি. এ্যাটর্নি জেনারেল, আপনারা জাজদের মধ্যে ডিভিশন সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। পত্রিকায় এসেছে একজন, একজন বলেছেন। কোর্ট প্রসিডিংসে আদালতের কার্যক্রমে যা হয় তা নিয়ে পার্লামেন্ট এবং পাবলিকলি কথা বলার সুযোগ নেই।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলায় ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের (ক) এর ব্যাখ্যা দিয়ে রায় হয়েছে। এখন যদি আপনাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা শুনতে হয় তাহলে দুঃখজনক। ‘এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিত আদেশের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বৃদ্ধি করেছেন আপীল বিভাগ। ফলে এই সময় পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় আইনী কোন বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সময় আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যবিশিষ্ট আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। মোবাইল কোর্টের শুনানিতে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে উপস্থিত ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম। গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯ এর ১৪টি ধারা ও উপধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। এছাড়া তিন রিটকারীর সাজা অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং জরিমানাও বাতিল করেছেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করেছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন-২০০৯ এর কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়। জানা গেছে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মোঃ মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওইদিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মোঃ সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সেই তিনটি রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১১ মে রায় দেন হাইকোর্ট।
×