ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা -মস্কো ফের সরাসরি ফ্লাইট চলাবে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩১ জুলাই ২০১৭

ঢাকা -মস্কো ফের সরাসরি ফ্লাইট চলাবে রাশিয়া

আজাদ সুলায়মান ॥ আবারও ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করছে রাশিয়া। যাত্রী ও কার্গো দুটিতেই বেশ আগ্রহ নিয়ে ঢাকায় আসছে এককালের সুপার পাওয়ার রাশিয়া। এরই মধ্যে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট (এসএ) হালনাগাদ করেছে ঢাকা ও মস্কো। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে রাশিয়া সফরকারী সিভিল এভিয়েশনের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এতে স্বাক্ষর করে। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে রাশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ট্রান্সপোরেশন। এদিকে রাশিয়ার মতো আরও কয়েকটি দেশ ঢাকা থেকে যাত্রী ও কার্র্গো ফ্লাইট চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব দেশের মধ্যে কয়েকটি ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে চায়। নতুন করে রুট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, অস্ট্রিয়া ও কানাডা। কয়েকটি দেশ বর্তমানে ঢাকার সঙ্গে আকাশপথে বেশ রমরমা ব্যবসা করায় ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ভারত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া এক সময় ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা করত। সে সময় এরোফ্লোট নামে একটি এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে নিয়মিত যাত্রী বহন করত। বিশেষ করে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের আমলে এরোপ্লেট একচেটিয়া আকাশপথের বাণিজ্য করত। পরে রাশিয়া বিভক্ত হয়ে অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়ায় ঢাকায় বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ইতোমধ্যে গত ত্রিশ বছরে ঢাকার সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য সম্প্রসারণ ঘটায় আকাশপথে পণ্য চলাচলের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বর্তমানে ঢাকা থেকে প্রতিদিনই চায়না ইস্টার্ন নামে একটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে বিপুল পরিমাণ কার্গো যাচ্ছে। বেড়েছে যাত্রীর সংখ্যা। এ সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশনের এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গণি চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে পুনরায় বিমান চলাচল চালু করাটা দুদেশের জন্যই একটি বড় অর্জন। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এতে আরও শক্তিশালী হবে। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই বেশ আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে। এবার মূলত আগের এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্টকে আরও হালনাগাদ করা হয়েছে। এতে এটা বলা চলে দুদেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করাটা সময়ের ব্যাপার। বিমান হয়তো ঠিক এখনই যেতে পারবে না, কিন্তু রাশিয়ার এয়ারলাইন্স চাইলে শীঘ্রই ফ্লাইট অপারেট করতে পারবে। বিমান জানিয়েছে, বর্তমানে অন্য দেশের ট্রানজিট হয়ে ঢাকা থেকে রাশিয়া পাঠানো হচ্ছে তৈরি পোশাক ও চামড়া পণ্য। ইতিহাদ কাতার এমিরেটস ও টার্কিশ এয়ারলাইন্স নিয়মিত এসব পণ্য পৌঁছে দিচ্ছে মস্কোতে। সপ্তাহে প্রায় তিনশ’ টন কার্গো যাচ্ছে রাশিয়ায়। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে খরচের পরিমাণ কমে আসার পাশাপাশি রফতানিও বাড়বে। রাশিয়া ছাড়াও ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইন্দোনেশিয়া ব্রুনাই, মালদ্বীপ, কানাডা ও অস্ট্রিয়া। এসব দেশের সঙ্গেও খুব শীঘ্রই এয়ারসার্ভিস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিভিল এভিয়েশন। আগামী মাসেই হতে পারে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চুক্তি। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ছাড়াও ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রুনাইয়ে রাষ্ট্রদূত এয়ারভাইস মার্শাল মাহমুদ হাসান বলেছেন, দুদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিনই গভীর হচ্ছে। এখানে বাংলাদেশী শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দুদেশের স্বার্থেই কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে বিমান চলাচল বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীর অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ইন্দোনেশিয়া ঢাকার সঙ্গে বিমান চলাচলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে মার্কেট স্টাডি করেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক ছাড়াও যাচ্ছে বেশকিছু পণ্য। ফলে কার্গো ও যাত্রী উভয়টাতেই রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। ইন্দোনেশিয়ায় এখন যেতে হচ্ছে মালদিভো, মালিন্দো নামের দুটো এয়ারলাইন্সে। এদিকে বর্তমানে একচেটিয়া বাণিজ্য করার পরও নতুন করে আরও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন। বর্তমানে এসব দেশ ঢাকা থেকে যে অনুপাতে যাত্রী নিতে পারে, বিপরীতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেটা পারছে না। আরব আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশীদের ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে। বার বার কূটনৈতিক দেন দরবারের পরও আমিরাত বিন্দুুমাত্র সহযোগিতা না করে বরং কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তেলসমৃদ্ধ ওই দেশটিতে বর্তমানে যেসব প্রবাসী শ্রমিকের ভিসার চাকরির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে- তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে গত চার বছরে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের সংখ্যা কমে আসছে উল্লেখযোগ্য হারে। এমন বাস্তবতায় আমিরাত ঢাকা থেকে আরও বেশি করে যাত্রী নেয়ার জন্য ফ্রিকোয়েন্সির জন্য চাপ দিচ্ছে। আগামী মাসেই এ সংক্রান্ত চুক্তি করতে যাচ্ছে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, দুদেশের মধ্যেকার বিমান চলাচল যত বেশি গতিশীল হবে তত বেশি কূটনৈতিক সম্পর্কও জোরদার হবে। আজকের যুগে একতরফা এভিয়েশন শিল্পকে প্রসার বা সংকোচন করার কোন সুযোগ নেই। তবে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার রাশিয়ার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি বিমান চলাচলের যে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট চুক্তি করা হয়েছিল, এবার সেটারই হালনাগাদ করে আবারও ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটা অবশ্যই দুদেশের জন্য একটা ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত বলা চলে। দীর্ঘদিন পর রাশিয়া আবারও এখানে আসছে সরাসরি এবং সেটা বেশ আগ্রহ নিয়ে। দেশের এভিয়েশন সেক্টরের জন্য এটা অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। এদিকে সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে প্রথমে এয়ারব্রিজ নামের একটি এয়ারলাইন্স কার্গো ফ্লাইট চালু করবে। তারপর যাত্রী বহনের জন্য আগের মতো দিল্লী হয়ে অথবা সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করার সুযোগ রাখা হয়েছে বর্তমান সমঝোতা স্মারকে। এক্ষেত্রে এরোফ্লেট আবারও ঢাকায় সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে পারে। রাশিয়া থেকে ফিরে আসা ওই প্রতিনিধিদলের এক সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশী চামড়াজাত পণ্য ও টাটকা সবজির খুব চাহিদা রয়েছে। রাশিয়া প্রবাসী বেশ কজন বাংলাদেশী সফররত প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে, কার্গোর পাশাপাশি যাত্রীবাহী ফ্লাইটেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রচুর বাংলাদেশী প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে মস্কো যাতায়াত করেন। সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় বর্তমানে অন্য দেশের ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে ঢাকায় আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।
×