ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেলতে আসবে অস্ট্রেলিয়াÑ বিশ্বাস সাকিবের

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৩১ জুলাই ২০১৭

খেলতে আসবে অস্ট্রেলিয়াÑ বিশ্বাস সাকিবের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ মুহূর্তে সবারই আশা অস্ট্রেলিয়া আসবে। তাদের আর্থিক সমস্যা বাংলাদেশ সিরিজে আসার সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাবে। তাতে করে বাংলাদেশও গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজ খেলতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ খেলে এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিশনে নামতে পারবে। সাকিবও সেই আশাই করছেন। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তিনি জানিয়েছেন, ‘আশাকরি অস্ট্রেলিয়া আসবে এবং ভাল একটা সিরিজ হবে।’ ক্যারিবিয়ার প্রিমিয়ার লীগে (সিপিএল) খেলতে যাবেন সাকিব। তবে এখনও তার যাওয়া নিশ্চিত হয়নি। কারণ ভিসার জন্য অপেক্ষা করছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিসা নয় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য অপেক্ষা করছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে নেমেই ভিসা নেয়া যাবে। কিন্তু সাকিব চাচ্ছেন সিপিএল মিশন শেষ হলে দুই একদিন যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে আসতে। সেই ভিসার জন্য এ্যাম্বাসিতে পাসপোর্ট জমাও আছে। এখন শুধু পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা। যখনই পাসপোর্ট ফেরত পাবেন তখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিপিএল খেলতে উড়াল দেবেন। সেটি আজও হতে পারে। আবার মঙ্গলবারও হতে পারে। সিপিএলে উড়াল দেয়ার আগে তাই সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘আগে অস্ট্রেলিয়া আসুক। বড় একটা গ্যাপ গেল। তাদের আসার মাধ্যমে মৌসুম শুরু হবে। তারা যদি না আসে তাহলে সরাসরি দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে আমাদের জন্য খেলাটা কঠিন হবে। আশাকরি অস্ট্রেলিয়া আসবে এবং ভাল একটা সিরিজ হবে।’ সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলেছে বাংলাদেশ। ১৫ জুন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শেষ হয়েছে। এরআগে আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজ খেলেছে। তারও আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি২০ ও ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। সেই মার্চে শেষ টেস্টটি খেলেছে বাংলাদেশ দল। চারমাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে বাংলাদেশ দল টেস্ট সিরিজ খেলেছে। যখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ তখন সাড়ে পাঁচ মাসের বেশি সময় টেস্ট থেকে বিরতি হয়ে যাবে বাংলাদেশের। এই দীর্ঘ বিরতি আরও বেড়ে যেতে পারে যদি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল খেলতে না আসে। তখন সেপ্টেম্বরের শেষদিকে যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ, টেস্ট ক্রিকেট থেকে সাড়ে ছয় মাসের বিরতি হয়ে যাবে। তাই অসিদের বিপক্ষে সিরিজকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই সিরিজ খেলেই যে দীর্ঘপরিসরের ক্রিকেটে আবার অভ্যস্ততা বাড়বে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের। ২০০৭ সালের মে মাসে টেস্ট অভিষেক হয় সাকিবের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলতে নামতেই সাকিবের ৫০তম টেস্ট খেলা হবে। ১০ বছর লেগে গেল ৫০ টেস্ট খেলতে। সাকিবকে তাই প্রশ্নও করা হলো সামনে ৫০তম টেস্ট, অনেক বছর লেগে গেল? সাকিব এ নিয়ে জানান, ‘আর কয়েক বছর আগের কথা বললে মনে হয় ৩০ টেস্ট খেলতাম। সে হিসেবে ঠিক আছে! আশাকরি অস্ট্রেলিয়াও আসবে, আমিও ফিট থাকব এবং ভাল একটা সিরিজ হবে।’ সাকিব সিপিএল নিয়েও কথা বলেছেন। আবারও সাকিব খেলবেন জ্যামাইকা তালাওয়াহসের হয়ে। দলটির প্রথম খেলা ৫ আগস্ট, বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের বিপক্ষে। বিসিবির বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী যদি সাকিবের ১৫ আগস্টে বাংলাদেশে থাকতে হয় তাহলে সর্বোচ্চ ৩টি ম্যাচ খেলতে পারবেন। ১৪ আগস্ট পর্যন্ত সাকিবের দলের তিনটি ম্যাচই রয়েছে। সাকিব এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সিপিএলে খেলবেন। গতবারও তিনি একই দলের হয়ে খেলেছিলেন। গতবার সাকিবের দল চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (সিপিএল) এবার পঞ্চম আসর অনুষ্ঠিত হবে। গত আসরে ১৩ ম্যাচের মধ্যে ১১ ম্যাচে বোলিং করার সুযোগ পেয়ে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ব্যাট হাতে ১৩ ম্যাচের মধ্যে ১০ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ২২.৮৫ গড়ে ১৬০ রান করেছিলেন। এবারও সাকিবকে জ্যামাইকা দলটি ধরে রেখেছে। এই দলে সাকিব ছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডল সিমন্স, শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার কুমারা সাঙ্গাকারা, পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ সামিরা রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সিপিএলে ২১ ম্যাচ খেলে বল হাতে ২৩ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৮২ রান করেছেন সাকিব। সেরা বোলিং ৬/৬। সিপিএলেই সাকিবের দুর্দান্ত সময় কাটে বলেও জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘মজা তো লাগেই। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই নতুন নতুন অভিজ্ঞতা থাকে। মজা থাকে। রোমাঞ্চ থাকে। গত ১০-১৫ বছর ধরে ক্রিকেটই খেলছি। যেখানেই খেলি মজাই লাগে। মজার কারণেই খেলে যাচ্ছি। অন্য টুর্নামেন্টের চেয়ে এটার (সিপিএল) পরিবেশ অন্য রকম। খেলার সিরিয়াসনেসটা মাঠেই বেশি। মাঠের বাইরে তেমন কোন ব্যাপার নেই। জায়গাগুলো খুব সুন্দর। সবাই রিলাক্স থাকতে পছন্দ করে। সেদিক থেকে বলতে গেলে অনেক বেশি এনজয় করি।’ আইপিএলের সঙ্গে সিপিএলের খানিক পার্থক্যও তুলে ধরলেন সাকিব, ‘আইপিএলে হয় কি, সেখানে প্রতি দলে ১০ জন বিদেশী খেলোয়াড় থাকে। এ কারণে সেখানে প্রতিযোগিতাটা বেশি। কোন্ চারজন খেলবে। ভাল খেলেও পরের ম্যাচে কম্বিনেশনের কারণে খেলা যায় না। সিপিএল বা পিএসএলে যেটা হয়, চারজন মোটামুটি ফিক্সডই থাকে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে তারা পরিবর্তন করে না। এছাড়া আর কোন পার্থক্য আমি দেখি না। সব জায়গায় পরিবেশ এবং খেলার কোয়ালিটিই ভাল।’ সব জায়গাতেই সাকিব এনজয় করেন, ‘সব জায়গায়ই (এনজয়) থাকে। খেললে ভাল খেলার প্রতিযোগিতা থাকে, এটা একটা এনজয় করার ব্যাপার। না খেললে খেলার জন্য অপেক্ষা থাকে। সেটা একরকম ব্যাপার।’ ক্রিস গেইলের সঙ্গে খেলা কেমন এনজয় করেন? যদিও এ বছর সাকিবের দলে নেই গেইল। গত বছর ছিলেন। দলও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সাকিব জানান, ‘এ বছর তো আর সে আমাদের দলে নেই। তবে গত বছর খুব এনজয় করেছি। এছাড়া তার সঙ্গে বিপিএলে এক দলে খেলেছি। দ্বিতীয় মৌসুমে সম্ভবত।’ এবার মেহেদী হাসান মিরাজও খেলছেন সিপিএলে। এটা কতটা পজিটিভ? সাকিব জানান, ‘আমি তো শিউর যে, এ বছর যদি পুরো টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ থাকতো, তাহলে আরও দুই একজন যেতে পারতো। দুই একজনের নামও বলাবলি হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের তো খেলা আছে। টাইমিং ফিক্সড থাকে না। অন্য টিমগুলোর জন্য আমাদের নিতে ঝামেলা হয়ে যায়। কারণ পরে যদি বলা হয়, টিম আসবে, আমাদের ফিরতে হবে।’ ফিটনেস ক্যাম্প শেষে এখন ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং অনুশীলন শুরু হয়েছে। অনুশীলনে হার্ডওয়ার্কের ব্যাপারে সাকিব জানান, ‘প্রতিটি সিরিজের পর যদি দুই তিন সপ্তাহের ব্রেক হয়, কন্ডিশনিং ক্যাম্প করা যায়; তাহলে খেলোয়াড়দের জন্য সেটা ভাল হয়। এতে ফিটনেস নিয়ে বা ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে নানা কাজ করা যায়। একজন খেলোয়াড় তার অনেক ব্যাপার চিহ্নিত করে কাজ করতে পারে। খেলার মধ্যে থাকলে এগুলো করা যায় না।’ নতুন সিজনে নতুন কী করতে চাইবেন? সাকিব বলেন, ‘অবশ্যই উন্নতি চাইব। গত বছরের তুলনায় আরও ভাল করতে চেষ্টা করব। উন্নতির তো শেষ নাই। যে জায়গাগুলোতে আমার মন মতো কিছু হয় নাই, সেখানে আর ভাল করতে চাই।’
×