ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড়ে কৃষিক্ষেত্রে নিয়মিত প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩০ জুলাই ২০১৭

হাওড়ে কৃষিক্ষেত্রে নিয়মিত প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শ্রমিক অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে হাওড়াঞ্চলে ফসলের উৎপাদন কমছে। এজন্য হাওড়ে কৃষিক্ষেত্রে নিয়মিত প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ফ্রেডরিখ নুউম্যান ফাউন্ডেশন (এফএনএফ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ জরিপ প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘এক্সপার্ট গ্রুপ মিটিং অন বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড পলিসি অব হাওড় রিজিয়ন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ তাজউদ্দিন এটি উপস্থাপন করেন। হাওড়ের কৃষক ন্যায্যমূল্য পান না জানিয়ে তাজউদ্দিন তার উপস্থাপনায় উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য চুক্তিভিত্তিক সমবায় সংঘ গঠনের সুপারিশ করেন। এ ছাড়া হাওড় এলাকায় বীজ ও সার ভা-ার গড়ে তোলা, পণ্য পরিবহন নিশ্চিত, কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন, যথাযথ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ নিয়মিত হাওড় খনন, বাঁধ সংস্কার, ঢেউ প্রতিরোধী দেয়াল নির্মাণ এবং হাওড়ের সৌন্দর্য উপভোগে পর্যটকদের উৎসাহিত করতে উদ্যোগ নেয়ারও সুপারিশ করা হয় অনুষ্ঠানে। সুপারিশগুলো সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের হাওড় অধ্যুষিত জেলা সাতটি- সুনামগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এ সাত জেলায় ৮৫৮ হাজার হেক্টর জমিজুড়ে মোট ৩৭৩ হাওড় রয়েছে। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দুটি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার দুটি ইউনিয়নের দুটি গ্রামসহ মোট চারটি গ্রামের ১২০ কৃষকের ওপর জরিপটি চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক ও ২৬ দশমিক ১ শতাংশ মাঝারি কৃষক। হাওড়ের মূল ফসল হচ্ছে বোরো ধান। মূল উপস্থাপনায় বলা হয়, হাওড়ে ডাল-সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া যেতে পারে। যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় হাওড়ে হাঁস পালন, ষাঁড় মোটাতাজাকরণ ও ছাগল পালনের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হাওড়ের পানিতে খাঁচায় মাছ পালন এবং ফলগাছ রোপণ, আগর ও বাঁশ চাষ করে কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ারও সুযোগ রয়েছে। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন বলেন, আমাদের কৃষক, আমাদের শ্রমিক আর আমাদের উদ্যোক্তা- এরাই কিন্তু বাংলাদেশের অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে যারা বাস্কেট কেস বলে সমালোচনা করেছেন আজকে তারা এই দেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে। আমরা ৭ পয়েন্ট ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। অর্থাৎ লাস্ট মোর দেন এ ডিকেইড (শেষ এক দশকের বেশি) আমরা ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি করছি। তিনি বলেন, হাওড়ে অকালবন্যা, অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে আজকের এই ভয়াবহ অবস্থা। যে জায়গায় বাংলাদেশ গতবারও শ্রীলঙ্কাকে চাল দিয়ে সাহায্য করেছে, সেই জায়গায় আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমরা সক্ষমতা অর্জন করব। সরকারের পাশে থেকে এফবিসিসিআই কাজটাকে এগিয়ে নেবে আগামীদিনে। অনুষ্ঠানে সাবেক মুখ্য সচিব ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম বলেন, যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তা হলো হাওড়ের জমি ইজারা না দেয়া। এটা উন্মুক্ত করে দিয়ে এটার কোব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে। এফবিসিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল মীর শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক সচিব কারার মাহমুদুল হাসান ও এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনতাকিন আশরাফ।
×