ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে শুরু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল, শিরোপাধারীদের প্রতিপক্ষ নবাগত সাইফ স্পোর্টিং

জয় দিয়ে শুরু চায় চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৮ জুলাই ২০১৭

জয় দিয়ে শুরু চায় চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনী

রুমেল খান ॥ দীর্ঘ ৪৭ দিন বিলম্ব এবং প্রতীক্ষার পর অবশেষে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের দশম আসর। লীগের নতুন পৃষ্ঠপোষক সাইফ পাওয়ার ব্যাটারি। লীগে এবার অংশ নেবে ১২ ক্লাব। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ উদ্বোধনী দিনের একমাত্র ম্যাচে বিকেল সাড়ে ৪টায় নবাগত সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের মুুখোমুখি হবে বর্তমান শিরোপাধারী ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করবে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক টিভি চ্যানেল বাংলা টিভি। তারা লীগের ১৩২ ম্যাচের মধ্যে ১২১টি ম্যাচ লাইভ দেখাবে। তবে তারা চট্টগ্রামের ম্যাচগুলো নয় কেবল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচগুলোই সম্প্রচার করবে। এক্ষেত্রে অন্য দিনগুলোতে দুটি করে ম্যাচ থাকলে তারা প্রথম ম্যাচটি লাইভ দেখাবে এবং দ্বিতীয় ম্যাচটি রেকর্ড করে পরের দিন ম্যাচ শুরুর আগে সম্প্রচার করবে। কথায় আছে, ‘মুকুট পরার চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন।’ এই প্রবাদটিই এখন ভুল প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে দুটি জনপ্রিয় ক্লাবের একটি তারা। সর্বশেষ প্রিমিয়ার লীগের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন তারাই। আসন্ন লীগের হট ফেভারিট তারাই। সেজন্য চাপটাও একটু বেশি। তবে চাপকে অগ্রাহ্য করে তারা চায় ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসরটির শিরোপাটা ধরে রাখতে। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতির কাজটাও তারা নিয়ে ফেলেছে ভালমতোই। স্বাধীন বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের ধারক-বাহক ঐহিত্যবাহী এই দলটি এ পর্যন্ত মোট লীগ শিরোপা জিতেছে ১২ বার। শিরোপা সংখ্যায় ছুঁয়ে ফেলেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে (অবশ্য পাকিস্তান আমলে মোহামেডান আরও ৭ বার লীগ শিরোপা জেতায় তাদের সার্বিক লীগ শিরোপা সংখ্যা ১৯)। এবারের লীগে ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’দের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানম-ি এবং একবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। দুটো ক্লাবই বড় বাজেটের বিনিময়ে এবার দলগঠন করেছে। দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় দুটি নাম ঢাকা আবাহনী এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বিগত বছরগুলোতে মোহামেডানের অবস্থা যেখানে করুণ থেকে করুণতর হচ্ছে, সেখানে আবাহনীর ঈর্ষণীয় সাফল্য চোখে পড়ার মতো। ‘ব্ল্যাক এ্যান্ড হোয়াইট’রা সর্বশেষ লীগ শিরোপার স্বাদ পেয়েছে সেই ২০০২ সালে। তাছাড়া পেশাদার লীগের জামানা শুরুর পর যেখানে আবাহনী পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেখানে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি মোহামেডান। আবাহনী সর্বশেষ লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত আবাহনীই প্রথম ক্লাব যারা তৎকালীন ঢাকা লীগ (১৯৭২-৯২) এবং বর্তমানে পেশাদার লীগ (২০০৭ থেকে চলমান) উভয় ক্ষেত্রেই প্রথম হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে। ঢাকা লীগে জেতে ১৯৮৩, ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে। আর পেশাদার লীগে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। গত মৌসুমে আবারও লীগ জিতে দীর্ঘ আট মৌসুমের লীগ-বন্ধ্যাত্বের অবসান ঘটায় তারা। শুধু তাই নয় জিতে নেয় চলতি মৌসুমসূচক আসর ফেডারেশন কাপেরও শিরোপা। এ আসরটি জিতেও তারা শিরোপা সংখ্যায় ছুঁয়ে ফেলে মোহামেডানকে (১০ বার)। এছাড়া স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হেরে না গেলে ১৯৮২ সালের মোহামেডান এবং ২০১২-১৩ সালের শেখ রাসেলের পর তৃতীয় ক্লাব হিসেবে এক মৌসুমে ‘ট্রেবল’ জিততে পারতো। তবে এবার লীগ ও স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতে সেই অপ্রাপ্তি ঘোচাতে চায় তারা। গত মৌসুমের মতো চলতি মৌসুমেও নিজেদের সমর্থকদের সাফল্য উপহার দিয়ে তাদের খুশি রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আবাহনী। তবে জামাল-রাসেল ছাড়া যেসব ক্লাব যথেষ্ট বেগ দিতে পারে আবাহনীকে তারা হলো : নবাগত সাইফ পাওয়ারটেক, চট্টগ্রাম আবাহনী এবং মোহামেডান। এছাড়া চমকে দিতে পারে ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জও। গত মৌসুমে লীগে যারা শুরুটা বেশ চমক দিয়েই করেছিল। এবার তাই জমজমাট লড়াইয়ের আভাস প্রিমিয়ার ফুটবল লীগে। আর সেটা উপলব্ধি করেই এবার শুরু থেকেই আটঘাট বেঁধে নেমেছে আবাহনী। আবাহনীকে দুটি শিরোপা এনে দেয়া ৬২ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ান (জন্ম অধুনালুপ্ত যুগোসøাভিয়ার সার্বিয়ায়) কোচ দ্রাগো মামিচের ওপর অগাধ আস্থা ক্লাবটির ম্যানেজমেন্টের। তরুণ আর অভিজ্ঞদের নিয়ে দল দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ায় এবারও শিরোপা ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী কোচ। আর খেলোয়াড়রাও চান নিজেদের সর্বোচ্চটা নিংড়ে দিতে। গতবারের দলটার চেয়ে এই দলটা একেবারেই ভিন্ন। অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশ্রণে দারুণ ভারসম্যপূর্ণ দল আবাহনী। আগের কোচ জর্জ কোটানের ফর্মেশন ৪-৪-২ এ মৌসুমের প্রথম শিরোপা ফেডারেশন কাপ জিতেছিল আবাহনী। দলে রয়েছেন বাদশা, রুবেল মিয়া, সোহেল কিংবা শাহেদের মতো ফুটবলার। তবে মূল একাদশে দেখা মিলতে পারে রায়হান, ইয়াসিন, ফয়সাল, মামুন মিয়াদের। আর দুই বিদেশী কোটায় থাকছেন ঢাকার মাঠের পরীক্ষিত মুখ ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে ও এমেকা ডার্লিংটন। গোলপোস্টের নিচে থাকছেন শহীদুল আলম সোহেল। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব পরীক্ষিত ডিফেন্ডার রায়হান-নাসির-সামাদ ইউসুফের। মিডফিল্ডারে ওয়ালী-প্রাণতোষ সঙ্গে এ্যাটাক লাইনআপ জীবন-এমেকাদের। মামিচ পুরো মৌসুমে ধরে রাখতে চান ধারাবাহিকতা। এবারের মৌসুমে কাগজে-কলমে অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবকে। অবশ্য ফেভারিটের তকমা না নিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চায় চট্টগ্রামের এই ক্লাবটি। অভিজ্ঞতায় একেবারেই নতুন হলেও ক্লাব কাঠামো আর আর্থিক সচ্ছলতাই মূলত চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ থেকে উঠে আসা নবাগত এই ক্লাবটিকে জোগাচ্ছে আত্মবিশ্বাস। যদিও একাধিক তারকা নিয়েও এবারের ফেডারেশন কাপে প্রত্যাশিত রেজাল্ট করতে পারেনি তারা। দলের কোচ স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিকে দায়ী করেছিলেন সে সময়। এবার বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে প্রিমিয়ার লীগ। তাই সবগুলো ক্লাবই পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে নিজেদের প্রস্তুত করার। এখন দেখা যাক লম্বা রেসে কে টিকে থাকতে পারে শুরুর কাতারে।
×