ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় আদালতে তিন ঘাতকের স্বীকারোক্তি

পরকীয়ার জেরে খুন চালক রাসেল

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২১ জুলাই ২০১৭

পরকীয়ার জেরে খুন চালক রাসেল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ২০ জুলাই ॥ চৌদ্দগ্রামে আসমা আক্তার সাথী নামে এক গৃহবধূর বহুমুখী পরকীয়া ও মাদকাসক্তির জেরে প্রাণ দিতে হলো একই উপজেলার শুভপুর গ্রামের সিএনজি চালক রাসেলকে। হত্যাকা-ের ৩ সপ্তাহ পর জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকার একটি জঙ্গল থেকে রাসেলের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। ঘটনার ক্লু উদঘাটনসহ আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে ৩ জন বৃহস্পতিবার কুমিল্লার আদালতে ওই সিএনজি চালক রাসেলকে অপহরণের পর হত্যার চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। জানা যায়, জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের শুভপুর গ্রামের সিএনজি চালক রাসেল (২১) গত ১৮ জুন যাত্রী নিয়ে নাঙ্গলকোটের উদ্দেশে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়। পরে এক সপ্তাহে তাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে গত ২৫ জুন রাসেলের পিতা জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি আবুল ফয়সালের নেতৃত্বে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শুভপুর গ্রামের শাহীন (২৩), একরামুল হক পাগলা (৪৫) এবং সন্দেহভাজন আসামি আসমা আক্তার সাথীকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে শাহীনের কাছ থেকে সিএনজিটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে টুংকুকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে রাসেল হত্যাকা-ের চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার বড় ভাই গিয়াসউদ্দিনসহ আরও দুজন শাহীন এবং অলি আহাম্মদ মিলে রাসেলকে হত্যার পর কুমিল্লার পুরাতন বিমানবন্দরের একটি জঙ্গলে লাশ ফেলে রেখেছে। এদিকে গত ৮ জুলাই জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকার জঙ্গল থেকে একটি লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। পরে টুংকুর কাছ থেকে হত্যার বিষয়টি অবগত হয়ে রাসেলের বাবা-মাকে পুরাতন বিমানবন্দর সংলগ্ন ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় তারা রাসেলের পরিহিত জামা ও প্যান্ট এবং মোবাইল দেখে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি রাসেলের বলে শনাক্ত করে। এদিকে ফেনীর রেল স্টেশন থেকে আসামি গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ভিকটিম রাসেলের সঙ্গে তার ভাবী আসমা আক্তার সাথীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। গিয়াসের সঙ্গে সাথীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে রাসেল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাসেল সাথীর নিকট গিয়াসের ব্যাপারে নানান কুৎসা রটনাসহ সে একজন মাদকাসক্ত এবং তার স্বভাবচরিত্র ভাল নয় বলে জানায়। বিষয়টি সাথী গিয়াসকে অবগত করলে সে রাসেলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ জুন গিয়াস, শাহীন, অলি নাঙ্গলকোট যাওয়ার কথা বলে রাসেলের সিএনজিটি ভাড়া নেয়। দিনভর বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরার পর রাতে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজাপাড়া রাস্তার মোড়ে সিএনজি রেখে ইয়াবা খাওয়ার কথা বলে রাসেলকে পুরাতন বিমানবন্দর এলাকা নিয়ে যায়। সেখানে ঘাতকরা ইয়াবা সেবন করে রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যার পর লাশ জঙ্গলে লুকিয়ে রাখে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতারকৃত ৫ জনের মধ্যে শাহীন, গিয়াস উদ্দিন ও টুংকু মিয়া কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাঃ সাইফুল ইসলামের আদালতে এমন চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, রাসেলকে হত্যার পর আসামিরা তাদের হাতের ছাপ মুছে ফেলার উদ্দেশে ভিকটিমের মুখে ও শরীরে কাদা মেখে দেয়। আসমার সাথে চতুর্মুখী প্রেম ও মাদকাসক্তির কারণে খুন হয় সিএনজি চালক রাসেল। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম ও সদর দক্ষিণ থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
×