ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার শ্রিংলা

বাংলাদেশের ভিশনের সর্বাত্মক সমর্থক ভারত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ জুলাই ২০১৭

বাংলাদেশের ভিশনের সর্বাত্মক সমর্থক ভারত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশের ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ভিশনের সর্বাত্মক সমর্থক ভারত। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী ভারতীয় সৈন্যদের নিকটাত্মীয়দের সম্মান জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সাধারণ সৌজন্যে ভারতের ১২৫ কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিদেশী পর্যটক আগমনের সাপেক্ষে এখন বাংলাদেশের পর্যটকরা ভারতের এক নম্বর পর্যটনকারী। এ বছর জুন মাস নাগাদ ছয় মাসে মানুষ বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১৩ লাখের বেশিবার যাতায়াত করেছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর ডিফেন্স কলেজে এক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ আয়োজিত ‘সমসাময়িক ভারত, তার পররাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কৌশল এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’-শীর্ষক এক বক্তৃতা প্রদান করেন ভারতীয় হাইকমিশনার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সরওয়ার্দী (বীরবিক্রম), ডিফেন্স কলেজের উর্ধতন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, এনডিসি কোর্স ও সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধবিষয়ক কলেজের সদস্যবৃন্দ। ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা তার বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃতে ভারত ‘সবার আগে প্রতিবেশী’ নীতি গ্রহণ করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্যসমূহ প্রতিবেশী দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের মধ্যে সহযোগিতার যেসব উপাদান রয়েছে আমাদের উচিত সেগুলোকে কাজে লাগানো। আমাদের পণ্য ও জনগণের নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পাশাপাশি আমাদের কৌশলগত ও নিরাপত্তা স্বার্থসমূহ নিয়েও আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা আমাদের সকলকে প্রভাবিত করে এবং এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুমকিগুলোর একটি। নিরাপত্তা হুমকির বিশ্বায়ন, সন্ত্রাসী-অর্থায়ন অথবা ভৌত নেটওয়ার্ক, যা সীমানা অতিক্রম করে রাষ্ট্রগুলোকে তাদের সম্পদ সংগ্রহ এবং এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য একে অপরকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী সংগঠন এবং নেটওয়ার্কগুলো ভেঙ্গে দেয়া বা নির্মূল করাই নয় বরং যেসব রাষ্ট্র ও সংস্থা যারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত ও সমর্থন করেছে এবং এতে অর্থায়ন করেছে, সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে ও তাদের গুণাবলীর মিথ্যা প্রশংসা করেছে তাদের সকলকে চিহ্নিত করা, দায়ী করা ও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে ভারতের রয়েছে শূন্য-সহনশীলতা এবং এ বিষয়ে আপনাদের প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সব পর্যায়ে চমৎকার নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে। চার হাজারেরও বেশি দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত পাহারা দিতে গিয়ে আমাদের সীমান্তরক্ষীদের প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে হয়। আমাদের দুই দেশের মধ্যে স্থলসীমান্ত ও সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশে ঐতিহাসিক সফরের সময় ঐতিহাসিক স্থলসীমানাসহ ২২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ২০১৫ সালে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখার সুযোগ হয়েছে। এই সফর উভয় দেশের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বর বন্ধন নিশ্চিত করে এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের বাইরে এক সর্বব্যাপ্ত অংশীদারিত্ব দিয়ে আমাদের সম্পর্কে এক সোনালি অধ্যায়ে সূচনা করেছে। সংযোগ, উন্নয়ন ও অবকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্র, তথ্যপ্রযুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি প্রভৃতির মতো ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব জোরদার করে তার সফরকালে রেকর্ডসংখ্যক ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক রয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুত ও জ্বালানি, লজিস্টিকস, শিক্ষা ও মেডিক্যাল সেক্টরের মতো ক্ষেত্র যেখানে ভারতীয় সরকারী-বেসরকারী কোম্পানিসমূহ এক হাজার কোটি ডলারের অধিক বিনিয়োগ করছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার অভিন্ন মূল্যবোধের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে আপনাদের মুক্তিযুদ্ধে একযোগে লড়াই করেছি। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী ভারতীয় সৈন্যদের নিকটাত্মীয়দের সম্মান জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য সাধারণ সৌজন্য ভারতের ১২৫ কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমাদের সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা অপরিসীম ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের অবদানের স্বীকৃতি এবং বিশেষ সৌজন্য হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি (বাংলাদেশী টাকায় ৪৬ কোটি) প্রদান, ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে বছরে ১০০ মুক্তিযোদ্ধাকে বিনামূল্যে চিকিৎসাদান এবং তাদের জন্য ৫ বছরের দীর্ঘমেয়াদী মাল্টিপল ভিসা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামো সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে অন্যান্য দলিলের বিনিময় দুই দেশের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এনডিসিবৃন্দ; এখানকার ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ এবং ভারতের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং ভারতের টাটা মেডিক্যাল সেন্টার ও বাংলাদেশের ডিরেক্টর জেনারেল মেডিক্যাল সার্ভিসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানিক সহযোগিতার একটি শক্তিশালী ভিত্তি রচনা করছে। ভারত বাংলাদেশের এক নিবেদিতপ্রাণ উন্নয়ন অংশীদার। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার জন্য আপনাদের ভিশনের আমরা সর্বাত্মক সমর্থক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে ভারত ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিশেষ সুবিধানজনক আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছে। এতে ৩০০ কোটি ডলারের প্রথম এবং দ্বিতীয় ঋণরেখা মিলিয়ে মোট ৮০০ কোটি ডলার দাঁড়াল। আমাদের সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম এবং আমরা সঠিক পথেই চলছি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মডেল। আমরা শুধু আমাদের সব অমীমাংসিত সমস্যা বাস্তবোচিতভাবে সমাধান করিনি, বরং আমাদের উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছি এবং আমাদের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে নিবেদিত রয়েছি। আমাদের জনগণে-জনগণে বন্ধন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। ভিসা উদারিকরণে আমাদের উদ্যোগে লক্ষণীয় ফল পাওয়া গেছে। বিদেশী পর্যটক আগমনের সাপেক্ষে আজ বাংলাদেশের পর্যটকরা ভারতের এক নম্বর পর্যটনকারী। এ বছর জুন মাস নাগাদ ছয় মাসে মানুষ বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১৩ লাখের বেশিবার যাতায়াত করেছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিসীম এবং এটা ধরে রাখতে আমরা পূর্ণ প্রতিশ্রুতবদ্ধ।
×