ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বহুমাত্রিক পরিবেশনায় রবীন্দ্র নজরুল ও সুকান্তজয়ন্তী উদ্যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৫ জুলাই ২০১৭

বহুমাত্রিক পরিবেশনায় রবীন্দ্র নজরুল ও সুকান্তজয়ন্তী উদ্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক আয়োজনে স্মরণ করা হলো বাংলা সাহিত্যের তিন মহীরুহকে। উদযাপিত হলো- কালজয়ী তিন কবির জন্মদিন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সাম্যবাদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যকে জানানো ভালবাসা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কথনের সঙ্গে ছিল নৃত্যগীত এবং আবৃত্তি ও নাটকের পরিবেশনা। শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে কবিত্রয়ীর জন্মদিনের নিবেদনটি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। তিন মহান সাহিত্যিকের জন্মতিথি উদযাপনের আয়োজনটি করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঢাকা মহানগর সংসদ। গিটারের সুর মূর্ছনায় অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরিবেশনাটি উপস্থাপন করে উদীচী পরিচালিত শিল্পকলা বিদ্যালয় ‘বিশ্ববীণা’র শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বকুল। এরপর প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে তিন কবিকে স্মরণ করেন অতিথিরা। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিবাস দে’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা পর্ব। এ পর্বে সুকান্ত ভট্টাচার্য্যরে বিষয়ে আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হিমেল বরকত। তিনি বলেন, এক বিক্ষুব্ধ সময়ে জন্মেছিলেন সুকান্ত। প্রায় দুশো বছরের ইংরেজ শাসনে-শোষণে পীড়িত-ক্ষিপ্ত জনতার উত্থানলগ্নে সুকান্তের আবির্ভাব। এ উত্তাল সময়েই মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে সাম্যবাদ ও কবিতাকে বেছে নিয়েছিলেন মাত্র ১৪-১৫ বছরের কিশোর সুকান্ত। রাজনীতি ও শিল্পকে তিনি একপাত্রে পান করেছেন। তার কাব্যাদর্শ ও জীবনাদর্শে এ ঐক্য সবসময়ই পরিলক্ষিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য-রচনা বিষয়ে আলোচনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা জলী। তিনি বলেন, অনেক কবি-সাহিত্যিকই অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-নিপীড়ন বিরোধী হন। কিন্তু তাদের লেখায় কবিতায় এসবের সরাসরি প্রতিবাদ বা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন না। এ ক্ষেত্রে নজরুল সবার থেকে আলাদা। যখনই তিনি অন্যায়-অনিয়ম দেখেছেন, রাজনৈতিক হানাহানি প্রত্যক্ষ করেছেন তখনই তার সংগ্রামী চৈতন্যেও দ্রোহের প্রকাশ ঘটেছে। এছাড়া, বাংলা সাহিত্যে নজরুল এমন একজন কবি যিনি একইসঙ্গে রোমান্টিকতার দুটো সত্তাকে ধারণ করতে পেরেছিলেন। প্রেমিক সত্তা এবং বিদ্রোহী সত্তাকে তিনি অসাধারণভাবে নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, আমাদের প্রাণের স্তরে স্তরে রবীন্দ্রনাথের দানের মাটি সোনার ফসল তুলে ধরেছে। তিনি আমাদের দিয়েছেন গৌরব ও ঐশ্বর্য। আমাদের ভাষা ও সাহিত্যে, শিল্প ও সংস্কৃতিতে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে, সভ্যতা ও দর্শনে এবং আমাদের সমগ্র জাতিসত্তার প্রাণ স্পন্দন তার সাহিত্যকর্মে অনুভূত হয় বলেই তিনি আমাদের মহাকবি। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু। সভাপতির বক্তব্যে নিবাস দে বলেন, বাঙালীর মানস গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রেখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুকান্ত ভট্টাচার্য্য। তাদের রচনা সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, সাম্রাজ্যবাদসহ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং সাম্যবাদী সমাজ গঠনের সংগ্রামে আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রতিনিয়ত আমাদের পথনির্দেশ করে চলেছে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কথায় ও কবিতায়, সঙ্গীত, নৃত্যে, নাট্যে তিন কবির বন্দনা করেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। এ পর্বে বহুমাত্রিক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হনÑ উদীচী ঢাকা মহানগর, উত্তরা, গুলশান, মাতুয়াইল, কল্যাণপুর, কাফরুল, ধানম-ি, মিরপুর, তেজগাঁও, সাভার, তুরাগ এবং বাড্ডা শাখার শিল্পী-কর্মীরা। অনুষ্ঠানের শেষাংশে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ভূতের ভয়’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন করে উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের নাটক বিভাগ। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ আয়োজন বাঙালীর সংস্কৃতির প্রতি অবিচল আনুগত্যে স্থির থেকে নিয়মিত নাট্যচর্চার প্রত্যয়ে ১৯৮৩ সালের ১৪ জুলাই যাত্রা শুরু করে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পূর্তি হয় শুক্রবার। সাফল্যের এ উদযাপনে দলের পক্ষ থেকে ছিল আনন্দ আয়োজন। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আয়োজন করা হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। এতে স্মরণ করা হয় সম্প্রতি সময়ে অকাল প্রয়াত দলের সহযোদ্ধা আকলিমা খান টগর, গাজী সাইফুল হায়াত, আনসার আহমেদ, কানু বাবু এবং সাহিদ হোসেন ডলারকে। আলোচনায় সম্মানিত অতিথি ছিলেনÑ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সহযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ করেন মীর জাহিদ হাসান। সভাপতিত্ব করেন এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন। এরপর সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজনা ‘নীলাখ্যান’। দ্রোহ ও প্রেমের কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ আশ্রয়ে আনন জামান রচিত এ নাটক নিদের্শনা দেন ইউসুফ হাসান অর্ক। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনামী ইসলাম কনক, জেরিন তাসনীম এশা, শাহিনুর প্রিতী, সুরেলা নাজিম, স¤্রাট, মানিক চন্দ্র দাশ, সুমাইয়া তাইয়ুম নিশা, জাহিদ কামাল চৌধুরী দীপু, সৈয়দ ফেরদৌস ইকরাম, আমিনুল আশরাফ, আসাদুজ্জামান রাফিন, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, তৌহিদুর রহমান শিশির, ফারাভি হীরা, তারেকেশ্বর তারোক, ইকবাল চৌধুরী, মোঃ শাহনেওয়াজ ও মীর জাহিদ হাসান। গ্যালারি চিত্রকে সুলতান ইসতিয়াকের চিত্রপ্রদর্শনী রাজধানীর গ্যালারি চিত্রকে শুরু হলোÑ তরুণ চিত্রশিল্পী সুলতান ইসতিয়াকের একক চিত্র প্রদর্শনীর ‘ফিগারেশন অফ কম্পিলিকসিটি এ্যান্ড আরবান এক্সপোলোরেশন’। শুক্রবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সংগ্রাহক আব্দুর রহিম ফিরোজ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় সভাপতিত্ব করেন শিল্প সমালোচক অধ্যাপক স্থপতি সামসুল ওয়ারেস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক শিল্পী মুনীরুজ্জামান। ১২ দিনের এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ৪০টি চিত্রকর্ম। আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
×