এইচ এম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ চকরিয়া শহর মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে রক্ষা বাঁধ ও ফাসিয়াখালী ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। মাতামুহুরী নদীতে বন্যা ও ঢলের পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার পর থেকে দুই তীরে নদীভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহররক্ষা বাঁধ। গণি সিকদারপাড়ার অন্তত ১২টি বসতঘর ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে। এমনকি বর্তমানে মাতামুহুরী নদীতে হেলে পড়েছে বিদ্যুত লাইনের খুঁটি। যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরী প্রকল্পের আওতায় টেকসই উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ভাঙ্গন এলাকাটি রক্ষা করা না গেলে চলতি বর্ষা মৌসুমে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড ও ফাসিয়াখালীর অন্তত ১২টি গ্রামের জনবসতি। রাস্তা-ঘাট, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল ও মন্দিরসহ একাধিক স্থাপনা নদীগর্ভে একাকার হয়ে যেতে পারে। পাশপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে যে কোন মুহূর্তে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তলিয়ে যাবে। ফাসিয়াখালী ও পৌরসভার অন্তত লক্ষাধিক জনগণের মধ্যে ভাঙ্গন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদী থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে যাওয়ার পরপর ইতোমধ্যে নদীর তীর এলাকায় গণী সিকদারপাড়ার ১২টি বসতঘর, আবাদি জমি ও কয়েকটি স’মিল বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িভিটা হারিয়ে স্থানীয় জসিম উদ্দিন, সাহাব উদ্দিন, আবু তালেব, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আবছার, আমির হোসেন, নুরুল হোসেন, গুরা মিয়া, সামসুল আলম, ছৈয়দ নুর ও ছৈয়দ আলমসহ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। নদীভাঙ্গন এলাকা পরির্দশন করে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে। এ অবস্থার উত্তোরণের লক্ষ্যে আমরা পাউবোর পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে নদীতে স্পার বসানো শুরু করেছি। তিনি বলেন, প্রয়োজনে ভাঙ্গন এলাকায় আরও স্পার বসানো হবে।
পানছড়িতে শতবর্ষী গ্রাম বিলীনের পথে
সংবাদদাতা পানছড়ি, খাগড়াছড়ি থেকে জানান, অপরূপ সৌন্দর্যের দর্শনীয় স্থানটির নাম শান্তিপুর রাবার ড্যাম। এ ড্যাম এলাকাটি প্রতিনিয়ত মুখরিত থাকে দর্শনার্থীর পদচারণায়। কিন্তু ইতোমধ্যে এ দর্শনীয় স্থানটিতে বিরাজ করছে আতঙ্ক। রাবার ড্যামের পশ্চিম পাশের দক্ষিণ শান্তিপুর এলাকার শতবর্ষী গ্রাম তারক সেন মহাজনপাড়া। চেংগীর প্রবল শ্রোতে এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বিশালাকার অংশ। যে কোন মুহূর্তে বিলীন হওয়ার প্রহর গুনছে কল্যাণ মিত্র চাকমার বসতভিটা। তার গোয়ালঘর, নারিকেল গাছ, কাঁঠাল গাছ, আম গাছসহ বাঁশ বাগানের অস্তিত্ব ভেসে গেছে পানিতে। বসতঘরের মাঝামাঝিতে দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। বৈদ্যুতিক চারটি খুঁটি রয়েছে ঝুলন্ত অবস্থায়। ইউপি চেয়ারম্যান, পানছড়ি সাব-জোন, অফিসার ইনচার্জ পানছড়ি থানা ইতোমধ্যে কল্যাণ মিত্রকে অন্যত্র সরে যেতে বলে দিয়েছেন। সরেজমিনে রাবার ড্যাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গনের চিত্র। এ ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে কল্যাণ মিত্র চাকমার বসতঘর। তিনি অন্যত্র পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে ঘরের জিনিসপত্রাদি বাক্সবন্দী করছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, কিভাবে যে পুরনো এ ঘরটি ছেড়ে যাই। মন তো মানে না।
ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা, স্থানীয় মৃণাল কান্তি চাকমা, প্রতিরঞ্জন চাকমা, সত্যব্রত চাকমা জানান, রাবার ড্যামটি নির্মাণের সময় নকশা জটিলতা ছিল বলেই গ্রামটি আজ বিলীনের পথে। এ গ্রামে শতাধিক পরিবারের বসবাস ছিল। ভাঙ্গনের ভয়ে বর্তমানে ২০ পরিবারও নেই। ড্যাম নির্মাণকালে নদীর দুই পাশে পাথরের ব্লক বসানো হয়েছে অতি সামান্য।