ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খরস্রোতা নদীকে মৃত দেখিয়ে সাঁকো নির্মাণের আদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৮ জুলাই ২০১৭

খরস্রোতা নদীকে মৃত দেখিয়ে সাঁকো নির্মাণের আদেশ

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ জেলা পরিষদ থেকে খেয়া ঘাটের ইজারা নিয়ে সেখানে জোর করে তৈরি করা হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। ঘাটটি ইজারা নিয়েছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল মান্নান। আবার ঘাটটি কুলতলি নামকস্থানে ইজারা দেয়া হলেও সাঁকো তৈরি করা হচ্ছে ২ কিলোমিটার দূরে গোিবন্দকাটি খেয়াঘাট এলাকায়। প্রবাহমান একমাত্র খরস্রোতা কাকশিয়ালি নদীকে মৃত দেখিয়ে জোর করে বাঁশের সাঁকো নির্মাণের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে এলাকার ৫টি গ্রামের মানুষ মাঠে নেমেছে। তারা সমাবেশ করে এই সাঁকো নির্মাণ বন্ধের প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। ইজারাদারের সাঁকো নির্মাণের প্রস্তুত আর গ্রামবাসীর প্রতিরোধের ঘোষণায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামবাসীর দাবি খরস্রোতা এই নদীর বুকে বাঁশের সাঁকো তৈরি হলে পলি ভরাটে নদী মরে যাবে। নদী মরে গেলে তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র পথ মাছের ঘের পানি শূন্য হয়ে পড়বে। আর সাঁকো তৈরি হলে শতভাগ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই এলাকার মানুষের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিও পড়বে ঝুঁকির মধ্যে। এ কারণে এলাকাবাসী, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করার পরও ইজারাদার সাঁকো নির্মাণের কাজ বন্ধ না করায় তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এলাকায় মাইকিং করেছে। শুক্রবার গোবিন্দকাটি খেয়াঘাট এলাকায় তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করে। নির্মাণাধীন সাঁকো এলাকার সামনে নারীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। আর এ ঘটনায় এলাকায় চলছে উত্তেজনা। গত ২০ জুন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এন এম মইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি দেয়া হয়েছে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। এই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলা ২০২৪ সালের জন্য জেলা পরিষদের মালিকানাধীন কুলতলি খেয়াঘাটটি সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুরের আবদুল মান্নানকে ১ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে এবং তাকে ঘাটের দখল বুঝে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আবদুল মান্নান আবেদন করেন, নদী মজে যাওয়ার কারণে নৌকাযোগে যাত্রী পারাপার অসুবিধা হওয়ায় তিনি নিজ খরচে খেয়াঘাট এলাকায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করে নেবেন এবং যাত্রী পারাপার করবেন। এই আদেশে জেলা পরিষদ থেকে কুলতলীতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়। ওসিকে লেখা চিঠিতে বলা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন সাঁকো তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে। নির্বাহী কর্মকর্তা ওসিকে ইজারাদারকে সাঁকো নির্মাণের জন্য প্রশাসনিক সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেন। সরেজমিনে বিষয়টি দেখার জন্য শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে কালিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি খেয়াঘাট এলাকায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ঘাটে তৈরি করা হয়েছে আংশিক বাঁশের সাঁকো। খরস্রোতা এই নদীতে চলছে খেয়া পারাপার। এলাকাবাসী ডেকেছে প্রতিবাদ সমাবেশ। তারা অপেক্ষা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জন্য। এখানে গোবিন্দকাটি, ঘোজা, টোনা, বাঁশদহ, ও বেড়াখালি গ্রামে ২৫ হাজার মানুষের বসতি। এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার সরকার এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেনÑ তাদের এই নদীনির্ভর গ্রামের গোবিন্দকাটিতে খেয়াঘাট রয়েছে। এখানে কোন বাঁশের সাঁকোর প্রয়োজন নেই। বাঁশের সাঁকোর ঘন ঘন বাঁশের কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নদী দ্রুত মরে যাবে। তারা এই সাঁকো নির্মাণ বন্ধের দাবি জানালেও প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করছে না। এ কারণে শুক্রবার সকালে গোবিন্দকাটি খেয়াঘাট এলাকায় জড়ো হয় ৫ গ্রামের কয়েকশ নারী-পুরুষ। ইজারাদার জোর করে শুক্রবার সাঁকো নির্মাণ করবে এমন ঘোষণায় এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার রাতে এলাকায় মাইকিং করে সমাবেশের ডাক দেয়। নারীরা অবস্থান নেন ঘাটের সামনে। আর পুরুষ সদস্যরা প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে যে কোন মূল্যে এই সাঁকো নির্মাণ প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দিন, ইউপি সদস্য বিভাস সরকার প্রমুখ। ১৫ দিন ধরেই ইজারাদারের লোকজন ও এলাকাবসি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। অফিস খুললে জনস্বার্থে যেটি প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এন এম মইনুল ইসলাম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, নদীতে স্রোত আছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। নদী বাঁচাতে প্রয়োজনে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ বন্ধ করা হবে।
×