ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক স্থাপনাও সরাতে হবে

রাজধানীর অবৈধ স্থাপনা দশ মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ জুলাই ২০১৭

রাজধানীর অবৈধ স্থাপনা দশ মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানম-িসহ ঢাকা শহরের রাজউকের আওতাধীন এলাকার সকল অবৈধ স্থাপনা আগামী ১০ মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, ঢাকার আবাসিক এলাকার মধ্যে স্থাপিত সকল বাণিজ্যিক স্থাপনাও এই সময়ের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বুধবার এই রায় প্রদান করেছেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেন, এ্যাডভোকেট আহসানুল করীম, এ্যাডভোকেট ইদ্রিসুর রহমান, ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম, এ্যাডভোকেট ফারজানা খান, এ্যাডভোকেট আসিফ আলী খান ও এ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান প্রমুখ। অপরদিকে রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রায়ের পর বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গুলশান, বনানী ও ধানম-িসহ ঢাকা শহরের রাজউকের আওতাধীন সকল এলাকার আবাসিক প্লট থেকে সব অননুমোদিত বাণিজ্যিক ও অবৈধ স্থাপনা দশ মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলেছে আদালত। এ সংক্রান্ত ২৩৭টি রিটের নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট উক্ত রায় প্রদান করেছে। এই দশ মাসের মধ্যে ওইসব স্থাপনায় রাজউক বা কোন সেবা সংস্থা কোন ধরনের উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারবে না বা গ্যাস, বিদ্যুত, পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। দশ মাসের মধ্যে মালিকরা স্থাপনা সরিয়ে না নিলে রাজউক নোটিস ছাড়াই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারবে। অন্যদিকে রিটকারী পক্ষের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল কাইয়ুম বলছেন, এই দশ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আবাসিক এলাকায় বাণিজিক স্থাপনার বিষয়ে রাজউকের অনুমোদন নিতে হবে। সে অনুমোদন নিতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছে আদালত। তিনি আরও বলেন, মূলত ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান হামলার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অনুমতিবিহীন হোটেল ও স্থাপনাসহ ৫৫২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে রাজউক। এ প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য ২৫ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করেছিল রাজউক। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। রায়ের পর নিজের কার্যালয়ে এসে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে হোটেল, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছিল সেসব প্রতিষ্ঠান, গত বছর হলি আর্টিজানে হামলার পর রাজউক থেকে তাদের নোটিস দেয়া হয়েছিল। “বহু প্রতিষ্ঠান সে সময় ওই নোটিস চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করলে তাদের ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এই মামলাগুলোর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার রায় হয়েছে।” এক প্রশ্নের জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মালিকরা যে ২৩৭টি রিট আবেদন করেছিলেন, তার মধ্যে হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, হোটেল ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। “এই দশ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা যদি রাজউকের কাছে আবেদন করে, যেমন আবাসিক এলাকায় যদি কোন হোটেল থাকে এবং তারা যদি দরখাস্ত করে যে এটাকে তারা আবাসিক এলাকাতেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালাতে চায়, নিয়ম অনুযায়ী কনভার্সন ফি দিয়ে তা করা যায়। রাজউক যদি বিবেচনা করে, সেক্ষেত্রে তারা ব্যবসা করতে পারবে। কিন্তু আবাসিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয় এরকম কিছু করা যাবে কিনা- এটা বিচার্য হবে।” গত বছর জানুয়ারিতে এসব আবাসিক এলাকার অবৈধ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। পরে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর এই উচ্ছেদ অভিযানে গতি পায়। রাজউক কর্তৃক চিহ্নিত অবৈধ স্থাপনার তালিকায় রয়েছে বার, গেস্টহাউস, বেসরকারী কমিউনিটি সেন্টার, ফিটনেস সেন্টার, স্পা, বিউটি পারলার, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লিনিক, কলেজ, কোচিং সেন্টার, বুটিকের দোকান। রাজউক ২০০৭ সাল থেকে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক লাইসেন্স বন্ধ রেখেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে এরপরও অনেকে আবাসিক ঠিকানা ব্যবহার করে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন। এ ছাড়া আবাসিক এলাকার কোন প্লটে কেউ যদি বেসমেন্ট বা ভূতলের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা বন্ধ রাখেন বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করেন, সেগুলোও উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। রাজউকের উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সেসব রিটের নিষ্পত্তি করে হাইকোর্ট বুধবার এই রায় ঘোষণা করে ।
×