ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের ভাবনায় এখন বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৫ জুলাই ২০১৭

টাইগারদের ভাবনায় এখন বিশ্বকাপ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শেষ ॥ অনেক জল্পনা-কল্পনার পর এবার টানা দুই আসরে অনুপস্থিত থাকা বাংলাদেশ দল এ মর্যাদার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। আর প্রত্যাবর্তনের এ সিরিজেই খেলেছে সেমিফাইনালে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই সেরা সাফল্য। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে নিজেদের সেরা সাফল্য পেয়েছিল টাইগাররা। এবার সেই সাফল্যকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। এবার পরবর্তী বড় আসর ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। সেখানে খেলার জন্যও বড় একটি চ্যালেঞ্জ আছে, হিসাব-নিকাশ আছে। এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ঘোষিত ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটের মধ্যে থাকতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দল নিজেদের সেরা সাফল্য পেলেও ৬ নম্বর থেকে নেমে গেছে ৭ নম্বরে। ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে ন্যুনতম রেটিংয়ে পিছিয়ে থেকে আট নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কা। চ্যাম্পিয়ন্স হওয়ার কারণে আট থেকে ছয়ে ওঠা পাকিস্তান সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে। এ তিনটি দলের জন্যই হুমকি ৯ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে তারা রেটিংয়ে অনেক পিছিয়ে। তাই খুব বেশি শঙ্কা নেই বাংলাদেশের সরাসরি ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার ক্ষেত্রে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে প্রত্যাশার পারদ স্তম্ভ অনেক উঁচুতে তোলা বাংলাদেশ দল অবশ্য ভারতের কাছে হেরে গেছে। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা দাবি করেছেন এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে ২০১৯ বিশ্বকাপে। এখন যারা তরুণ তারাই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে তখন। সার্বিকভাবে তাই এখন বাংলাদেশের ভাবনায় ২০১৯ বিশ্বকাপ! বাংলাদেশের ইতিহাসে যে অর্জন কখনই কোনদিন মিলেনি। সেই অর্জন মাশরাফিবাহিনী বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এনে দিয়েছেন। এর চেয়ে আনন্দ কি হতে পারে। সেই আনন্দ নিয়ে ফিরেছ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দেশের মাটিতে ২০১৫ সাল থেকে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিদেশের মাটিতে জয় যেন অধরাই হয়ে থাকে। জয়ের ধারাবাহিকতা নেই। সাফল্যও সেই রকম ইদানীং দেখা যায়নি। দেশে এত ভাল দল হয়েও বিদেশের মাটিতে ব্যর্থ দলের তকমা গায়ে লেগেছিল। গত বছর ডিসেম্বর থেকে টানা বিদেশের মাটিতে খেলে বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ মিলিয়ে টানা হার হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ভারতের বিপক্ষে হারে। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে জিতে বাংলাদেশ। টি২০ জিতে। কিন্তু তখনও যেন বিদেশের মাটিতে জেতার যে ধারাবাহিকতা সেটা তৈরি হচ্ছিল না। যখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশনে ইংল্যান্ড মিশনে গেল তখন থেকেই যেন সেই ভিত মজবুত হতে থাকে। আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হারায়। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিউজিল্যান্ডকে হারানো হয়। বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার জিতে বাংলাদেশ। দল সেমিফাইনালেই খেলে। কিন্তু ফর্মের তুঙ্গে থাকা ভারতের কাছে বড় এক টুর্নামেন্টের বড় মঞ্চে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই পরাজিত হয় বাংলাদেশ। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘সুযোগ ছিল ফাইনালে যাওয়ার। নকআউট পর্যায়ে খেলায় সবসময় সুযোগ থাকে। কিন্তু আমরা সুযোগটা নিতে পারিনি। আশা করি সামনে আরও অনেক টুর্নামেন্ট আছে, আশা করছি সামনে এমন সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে পারব। আমাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা আরও বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। বড় ম্যাচে কিভাবে নিজেদের মেলে ধরতে হয় সেই জায়গায় উন্নতি করতে হবে আরও।’ ধাপে ধাপে উন্নতি করছে বাংলাদেশ দল। হয়ে উঠছে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দলে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল টাইগাররা। এবার সেটাকেও ছাপিয়ে গেছে। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই’। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিচারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভীষণ কঠিন। ওখানে গ্রুপপর্ব পেরনোই অনেক কঠিন। সেই জায়গায় আমরা সেমিফাইনাল খেলেছি। সেই হিসেবে আমি দুই বছর আগের (২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল) অর্জনের চেয়ে এবারের সাফল্যকে এগিয়ে রাখব। সেমিফাইনাল খেলেছি ওটা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে যে গ্রুপ থেকে খেলেছি। কাজটা এতটা সহজ ছিল না।’ এবার বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বেশ কয়েকজন উঠতি তরুণ ক্রিকেটার ছিলেন। একাদশে খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ, সাব্বির রহমান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। আর দলের সঙ্গে ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় প্রাপ্তি। হয়তো আরও সুযোগ ছিল কিন্তু সেটা আমরা নিতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে আমাদের আরও দায়িত্বশীল হয়ে খেলতে হবে। স্কোরটা বড় না হওয়াতেই হয়তো আমরা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলাম। তবে এটা কখনও হওয়া উচিত নয়। আমরা যে সংগ্রহ দাঁড় করেছি সেটা নিয়ে আমাদের লড়াই করা উচিত ছিল। যে তরুণরা দলে ছিল তারাই পরবর্তী সময়ে এটিকে অভিজ্ঞতা হিসেবে নিয়ে কার্যকর কিছু করতে পারবে বলে আশা করি।’ এক সেমিফাইনালই বাংলাদেশকে অন্যরকম দলে পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ দল যে অনেক উন্নত হয়ে গেছে তাতো বিশ্ব ক্রিকেট দেখেছেই। কিন্তু বৈশ্বিক আসরেও যে বাংলাদেশ এখন উন্নত দল, তাও দেখে ফেলল। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। তখন থেকেই বাংলাদেশ যেন নতুন রূপে বিশ্ব ক্রিকেটে আবির্ভূত হয়। এরপর নিজ মাটিতে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা আট দলের একটি হয়। যে অর্জন মিলেছে সেটি ইতিহাস রচনা করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করেও হেরেছে বাংলাদেশ। ভাল ক্রিকেট খেলেই হেরেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। ১ পয়েন্ট পেয়ে যেন বাংলাদেশ দলও উজ্জীবিত হয়ে গেল। নিউজিল্যান্ডকে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠতে পারবে বাংলাদেশ। এমন সম্ভাবনা যখনই সামনে ধরা দিল দল যেন আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিল। গত বিশ্বকাপের দুই ফাইনালিস্ট অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করল। এতেই তো বোঝা যায় বাংলাদেশ যোগ্য দল হিসেবেই সেমিতে উঠেছে। বিশ্ব ক্রিকেটও এবার আবার দেখল বাংলাদেশ এখন আর হেলাফেলার দল নয়। তাইতো ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দল যোগ্যতা বলেই এখানে এসেছে। সেরা আট দলের হয়ে টুর্নামেন্ট খেলেছে। আবার সেমিফাইনালেও উঠেছে। দলটি অনেক উন্নতি করেছে। প্রতিপক্ষের জন্য বাংলাদেশ দলটি এখন আর নিরাপদ নয়। বিপজ্জনক দল।’ এরপরও ওয়ানডে বিশ্বকাপ সরাসরি খেলার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে। সম্প্রতিই ৬ নম্বরে ওঠা বাংলাদেশ দলকে হটিয়ে পাকরা দখল করেছে জায়গাটি চ্যাম্পিয়ন হয়ে। তাদের রেটিং ৯৫! ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ঘোষিত আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকতে হবে। এখন ৯৪ রেটিং নিয়ে ৭ নম্বরে নেমে যাওয়ায় তাই কিছুটা শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ দল। ৯৩ রেটিং নিয়ে আটে থাকা শ্রীলঙ্কা কাছেই। ৯ নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৭৭ রেটিং নিয়ে এ তিনটি দলের জন্যই হুমকি। বিশ্বকাপ খেলার জন্য অন্তত সেরা আটে থাকতে হবে তাদের, কিন্তু কোনভাবে আটে নামলেও ৯ নম্বরে নামার তেমন কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই বাংলাদেশের। কারণ রেটিংয়ের বিস্তর ব্যবধান ক্যারিবীয়দের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের। তবু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। আর তাই আগামী বিশ্বকাপকে ঘিরেই যত ভাবনা এখন টাইগারদের।
×