ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পুতিন চক্রের দুর্নীতিতে ফুঁসে উঠছে তরুণরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৫ জুলাই ২০১৭

পুতিন চক্রের দুর্নীতিতে ফুঁসে উঠছে তরুণরা

রাশিয়ায় পুতিন শাসনের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ফুঁসছে। তারা প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও তার চক্রের দেশ লুটেপুটে খাওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, রাজপথে নামছে, পুলিশের লাঠিপেটা খাচ্ছে এবং জেল-জুলুম সইছে। এদের অনেকের বয়স পুতিন যে ১৭ বছর ধরে দেশ শাসন করছেন তার চেয়েও কম। পুতিন শাসনের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ গত কয়েক বছর ধরে ধুমায়িত হচ্ছিল। সহসা তার বিস্ফোরণ ঘটেছে গত ২৬ মার্চ। ঐদিন রাশিয়ার ৮০টিরও বেশি শহর ও নগরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমাবেশ হয়। পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। শুধু মস্কোতেই এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয় যাদের মধ্যে ৯২ জনই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। ১৯৮৫ সালের পর থেকে বহু বছর রাশিয়ায় ছাত্র বিক্ষোভ হয়নি। ১৯৮৫তে তরুণ সমাজ মুক্তদ্বার, সংস্কার ও পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নই ভেঙ্গে গিয়েছিল। কিন্তু এই নতুন প্রজন্মের রুশ তরুণরা আলাদা। তাদের ক্ষোভের কারণ কমিউনিস্ট শাসন নয় বরং রাশিয়ার শাসক শ্রেণীর লোভ। জেনারেল ও টেকনোক্র্যাটরা পুতিনের শাসনামলে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছে বেশুমার লুটপাটে। প্রায় দুই দশকের লুটপাটে নতুন প্রজন্মের এলিটদের হাতে বিপুল সম্পদ করায়ত্ত হয়েছে। পুতিনের বন্ধুবান্ধব এমনকি পরিবার পরিজনদের আর্থিক লেনদেনে এই লুটপাটের ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। এদের জীবন কাটে অমিত প্রাচুর্যে। এদের সম্পদ জমা হয় সুইস ব্যাংকে। এদের প্রমোদতরী বিচরণ করে ভূমধ্যসাগরে। এই নব্য অভিজাত শ্রেণী গ্রীষ্ম অবকাশ কাটায় ফ্রান্সের সৈকতে। পুতিন চক্রের এই কীর্তিকলাপ আজ ওপেনসিক্রেট। রাশিয়ার তরুণ প্রজন্ম এই বাস্তব চিত্র দেখতে পাচ্ছে। তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিতে শুরু করেছে। রাষ্ট্র পরিচালিত মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য পরিবেশনের সুযোগ নেই। তারা সামাজিক মাধ্যম ও রাজপথের বিক্ষোভের ওপর নির্ভর করছে। এতে আতঙ্কিতবোধ করে শাসকশ্রেণী হার্ডলাইন নিচ্ছে। ১২ জুন রাশিয়া দিবসে ব্যাপক বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই প্রেসিডেন্টের ডিক্রিবলে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর কড়া নজরদারি শুরু হয়। ব্যাপক দুর্নীতিতে রুশ সমাজে এতই পচন ধরেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা পর্যন্ত এর পক্ষে সাফাই গাইছে। এক অধ্যাপক তো ক্লাসরুমে বক্তৃতায় বলেছে ‘যদি দুর্নীতি না থাকে তো সে রাষ্ট্র কোন কাজের নয়। চুরি তো সবখানেই হচ্ছে।’ কথাটা এক অর্থে ঠিক। পুতিনের আমলে রাশিয়ায় খুব দুর্নীতি তৃতীয় বিশ্বের ক্লেপটোক্রেমির পর্যায়ে পৌঁছেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে ঘুষ দুর্নীতিতে রাশিয়ার অবস্থান ১৭৬টি দেশের মধ্যে ১৩১তম। হন্ডুরাস ও সিমেরা লিওনের নিচে রাশিয়ার অবস্থান। গত বছর রাশিয়ায় প্রদত্ত ঘুষের মোট পরিমাণ ছিল ৫শ’ কোটি ডলার। পুতিন যে তা জানেন না তা নয়। নিজের আমলাদের অর্থবিত্তের ক্ষুধা তিনি কখনই খর্ব করতে পারেননি। তার গোটা ব্যবস্থাটাই আনুগত্য বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। আনুগত্যের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে টাকা মেরে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির অভিশপ্ত ফল প্রত্যক্ষ করছে। রাস্তাঘাট ভাঙ্গাচোরা। স্কুলগুলোতে অর্থ সঙ্কট। শিক্ষকরা নগদ টাকায় গ্রেড বিক্রি করে। ওপর মহলের সঙ্গে বাবা-মায়ের কানেকশন থাকলে সন্তানরা ভাল চাকরি পায়। ওদিকে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে ক্রেমলিন এলিটদের স্বপনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে নানা কাহিনী ছড়িয়ে পড়ছে। ফুটেজে দেখানো হচ্ছে পুতিনের বন্ধুদের বিলাবহুল ভিলা। পুতিনের বশংবদ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি পরোক্ষভাবে বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ইতালিতে তার বাগানবাড়ি, রাশিয়ায় প্রাসাদোপম অট্টালিকা ও দুটি প্রমোদতরীর ভিডিও দেখানো হয়েছে। তবে দুর্নীতির রাজা বলা হয় স্বয়ং পুতিনকে। তার বেশিরভাগ সম্পদ রয়েছে বিভিন্ন ছশ’ কোম্পানিতে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন। ধারণা করা হয় তার সম্পদের পরিমাণ কয়েক শ’ কোটি ডলার। ফ্রান্সের বাস্ক নগরীর সমুদ্রতীরে পুতিনের ছোট মেয়ে ও জামাতা এবং প্রাক্তন স্ত্রীর সুরম্য অট্টালিকা আছে। রাশিয়ার শাসক পরিবারের বেআইন পথে অর্জিত এসব সম্পদের কাহিনী ধীরে ধীরে ফাঁস হয়ে পড়ছে এবং তা প্রচার লাভ করছে সামাজিক নিটওয়ার্কগুলোতে। যতই তা প্রচার পাচ্ছে ততই বিক্ষুব্ধ করে তুলছে তরুণ সমাজকে। তারা তাদের ক্ষোভ ও রোষের প্রকাশ ঘটাচ্ছে রাজপথে নেমে এসে। ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের সমালোচনা ও মন্তব্য করে। একদিন হয়ত তরুণ সমাজের এই রুদ্ররোষই রাশিয়ার নব্য জারদের ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে দেবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×