ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রক্ষা পাচ্ছে ভূমিদস্যুরা

পাহাড়ধসে মৃত্যুতে পুলিশের অপমৃত্যু মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ জুলাই ২০১৭

পাহাড়ধসে মৃত্যুতে পুলিশের অপমৃত্যু মামলা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পাহাড় নিষ্কণ্টকের পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়খেকোদের কারণে প্রতিবছরই পাহাড়ের মাটিধসের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে ভূমিদস্যুদের রক্ষা করে। ফলে পাহাড়ের মাটি কেটে ভাড়া বাণিজ্য গড়তে দ্বিধাবোধ করে না ভূমিদস্যুসহ প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার অসাধুরা। তবে চট্টগ্রামে ভূমিধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যত করণীয় বিষয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ গুরুত্বপূর্ণ সভা পরিচালনা করেন ওই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. অর্ধেন্দু শেখর রায়। এদিকে সভায় ভূমিধসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে করণীয় বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক উন্মুক্ত আলোচনা করেন। তিনি পাহাড় নিষ্কণ্টক করার ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, পাহাড়কে রক্ষা করা না গেলে আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) বলেন, বেশিরভাগ সময় মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ভূমিধসের ঘটনা ঘটছে। বেআইনীভাবে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার পাশাপাশি পাহাড়ে বসবাস বন্ধ করতে পারলে অন্তত পাহাড়ের মাটি ধসের মতো ঘটনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা গুনতে হবে না। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহকে একযোগে কাজ করার মতামত ব্যক্ত করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন)। গত ১২ ও ১৩ জুন তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের মাটি ধসের ঘটনায় জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে অতি বৃষ্টির কারণে আবারও পাহাড়ের মাটি ধসের ঘটনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কমিটিকে ভাবিয়ে তুলেছে। এদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সরকারী ও বেসরকারী পাহাড় কাটার ফলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। মূলত মানুষ দ্বারা এ দুর্যোগের সৃষ্টি বলে সচেতনদের ধারণা। অভিযোগ উঠেছে, কমিটি পাহাড়খেকোদের আইনের আওতায় না এনে বরং এসব অসাধুকে ভাড়া বাণিজ্যে উৎসাহিত করেছে। টানা বর্ষণ শুরু হলে জেলা প্রশাসন ও চসিক ৩শ’ টাকার ভাড়া করা মাইক নিয়ে পাহাড়ী এলাকায় দুর্যোগের ঘোষণা দেয়। অথচ ধসের পর এসব সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তারা ভূমিদস্যুদের সঙ্গে অর্থ বাণিজ্যে মেতে ওঠে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত পাহাড়ের মাটি ধসের ঘটনায় চট্টগ্রামের পাহাড়ী এলাকাগুলোতে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঘর সরিয়ে নিতে প্রতি বর্ষা মৌসুমের আগেই চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেও চসিক ও জেলা প্রশাসনের এ ধরনের কার্যক্রমকে দায়িত্বে অবহেলা বলে দাবি করছেন সচেতন নাগরিকরা। দুটি সংস্থার উচ্ছেদের আল্টিমেটামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড়কেন্দ্রিক ভাড়া বাণিজ্যে মেতে ওঠা ভূমিদস্যুরা চাঙ্গা অবস্থানের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, পাহাড় কাটা ও ভাড়া বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এসব ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ না নেয়া, পাহাড়ের পাদদেশে গৃহ নির্মাণে প্রশ্রয় দেয়া, অহেতুক অভিযান ও নিষ্ফল বৈঠকের আয়োজন থেকে নগরবাসী নিশ্চিত হয়েছে পাহাড়খেকোদের সঙ্গে সরকারী সংস্থাগুলোও অভিযুক্ত। দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেয়াটাই হচ্ছে প্রশ্রয় দেয়ার নামান্তর। মৃত্যুর মিছিল হলেও প্রশাসনের টনক নড়ছে শুধু বর্ষা এলেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা চলে গেছে অপমৃত্যুর দিকে। আর জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার পদক্ষেপ বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে নগরবাসী পাহাড় ধসে এমন মৃত্যুর মিছিল আবারও দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিলের বিপরীতে সরকারী সংস্থাগুলো বৈঠকের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এর কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। পাহাড়ের পাদদেশে যারা গৃহ নির্মাণ করছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সরকারী সংস্থাকে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বৈঠকে। দীর্ঘ সময়ের এই বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের যুগ্মসচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, যুগ্মসচিব, স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপসচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা উপ-পরিচালক, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
×