ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা অলস

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৪ জুলাই ২০১৭

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা অলস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিনিয়োগে কাক্সিক্ষত গতি না আসায় প্রচলিত ধারার ব্যাংকের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকগুলোরও অলস টাকা বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রায় আট হাজার ১৬১ কোটি টাকার অলস অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে অলস রয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। এ সময়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত বাড়লেও রেমিটেন্স আহরণ কমেছে উল্লেখযোগ্যহারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দেশে বর্তমানে পরিপূর্ণ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এগুলো হলো-ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মোট শাখা রয়েছে ১ হাজার ৪৮টি। এর মধ্যে ৬২৯টি শহরে এবং ৪১৯টি শাখা গ্রামে অবস্থিত। এছাড়া বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৯টি ব্যাংক ১৯টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা খুলে এ ব্যাংকিং করছে। একইসঙ্গে প্রচলিত ধারার আরও ৮টি ব্যাংক ২৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো খুলে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে অলস অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৯ টাকা। মূলত বিনিয়োগ কম হওয়ায় তাদের অলস টাকার পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত তিন মাসে এ খাতে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ আমানত করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। মার্চ পর্যন্ত ব্যাংটির আমানত সংগ্রহের হার দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউটি ব্যাংক ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংক ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক দশমিক ৫৭ শতাংশ, প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামী শাখায় ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও তাদের উইন্ডোর মাধ্যমে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ আমানত সংগৃহীত হয়েছে। অন্যদিকে, এ সময়ে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। যা চলতি বছরের মার্চে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত তিন মাসে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রেমিটেন্স সংগ্রহে প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসা রেমিটেন্স দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এ সময়ে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। এদের সংগৃহীত রেমিটেন্সের হার ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান। তারা সংগ্রহ করে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সংগ্রহ করে সাড়ে ৬ ৪৬ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংক ১ দশমিক ৬১ শতাংশ ও ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বাকি রেমিটেন্স সংগ্রহ করে অন্যান্য ব্যাংকগুলো। এদিকে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট জনবল দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৪৭ জন। যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ২৯ হাজার ১৭৬ জন। ফলে গত তিন মাসে এ খাতে জনবল বেড়েছে ৮৭১ জন। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংকগুলোর জনবল রয়েছে ২৯ হাজার ৪৭৮ জন।
×