ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট চায় এফবিসিসিআই

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২ জুলাই ২০১৭

ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট চায় এফবিসিসিআই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্ট চায় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে আইনটির বিভিন্ন দিক সংশোধন করে তা বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে বলে মনে করে সংগঠনটি। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত এবং ব্যাংক আমানতের ওপর প্রস্তাবিত আবগারি শুল্ক হ্রাস করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ব্যবসাবান্ধব সরকারকে ধন্যবাদও জানিয়েছে এফবিসিসিআইসহ দেশের শীর্ষ ৯টি বাণিজ্যিক সংগঠন। শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সদ্য পাস হওয়া জাতীয় বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিগণ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যের বাইরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই শেষ মুহূর্তে প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচিত করে। ভোট হচ্ছে জবাবদিহিতা, তাই জনগণের ইচ্ছা ও মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনবান্ধব বাজেট দিয়েছে বর্তমান সরকার। আমরা ব্যবসায়ী সমাজ এই বাজেটকে স্বাগত জানাই, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তিনি বলেন, এই বাজেট ব্যবসাবান্ধবও। ব্যবসায়ীদের আস্থার সঙ্কট দূর হওয়ায় এখন শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসবে, বাড়বে কর্মসংস্থান। ব্যবসায়ীদের সকল দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দিন বলেন, কোন চাপ তৈরি হবে না। আমরা তো বলেছি, ভ্যাট ও ট্যাক্সের রেট না বাড়িয়ে বরং আওতা বাড়ান। আওতা বাড়ানো গেলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ট্যাক্স আদায়ের সুযোগ রয়েছে। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছি বারবার। এছাড়া দুর্নীতি কমিয়ে আনতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশে ট্যারিফ কমিশন আছে, কিন্তু তাদের কোন অনুমোদন গ্রহণ করা হয় কি না আমার জানা নেই। আবার এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলেও মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা কতটুকু রক্ষা করছে সেটিও কিন্তু একটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের একটি উক্তি স্মরণ করে মহিউদ্দিন বলেন, একটি পাখি থেকে পালক তুলে নিলেও তার বিউটি বা সৌন্দর্য যাতে নষ্ট নয়, ঠিক তেমনি ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সেইভাবেই আদায় করতে হবে যাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। ভ্যাট ও ট্যাক্সের বিষয়টি জোর করে চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। ব্যবসায়ীদের সব দাবি পূরণ হওয়ায় এনবিআরের পরাজয় হলো কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এটা জয়-পরাজয়ের কোন বিষয় নয়। আমরা একে অন্যের পরিপূরক, তাই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ঘাটতি হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, আমরা যার যার অবস্থান থেকে দেশকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাই এটা জয়-পরাজয়ের কোন বিষয় নয়। এদিকে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় নিহতদের স্মরণ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে লিখিত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এনবিআরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার নতুন মূল্য সংযোজন কর আইন স্থগিত করে পুরনো আইন অব্যাহত রাখার বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য এখনও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় এনবিআর ও ব্যবসায়ীবৃন্দ নতুন মূসক আইন বিষয়ে আরও সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ পাবে। অন্যদিকে, নতুন আইন অনুযায়ী একক ভ্যাটহারজনিত মূল্যস্ফীতি ও ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বেগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করায় সরকার ও বেসরকারী খাতের পারস্পরিক আস্থার জায়গাটি আরও জোরালো হবে বলে আমরা মনে করি। এর ফলে দেশীয় বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। নতুন ভ্যাট আইনের ইতিবাচক দিকগুলোকে আমরা সবসময় স্বাগত জানিয়ে আসছি। আমরা আশা করি নতুন ভ্যাট আইনের যে সমস্ত বিষয়ে সংশোধন প্রয়োজন সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে আগামীতে মূসক আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেহেতু দুই বছর সময় সামনে থাকছে সেহেতু ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাধীন সংস্থার মাধ্যমে ইমপ্যাক্ট এ্যাসেসমেন্টের কথা বলা হয়েছে। আইনটি সংশোধন করা হলে ভ্যাট আইন দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত খাদ্যসহ সকল রফতানি খাতের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত খাদ্যসহ সকল রফতানি খাতের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের হার ০.৫০ ভাগ নির্ধারণ করার জন্য আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতাগণও পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস করছে। এ ছাড়াও ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বেড়েছে ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের গত ৫ বছরে দুই দফায় ২১৯ ভাগ মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পোশাক শিল্প নিদারুণ চাপের মধ্যে রয়েছে এবং অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব ও সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে আমাদেরকে টিকে থাকতে হলে উৎসে কর হ্রাস করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ছে। যেহেতু রফতানি খাতগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তাই সার্বিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা অথবা কর রেয়াতের মাধ্যমে সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, রেয়াতি সুবিধা না থাকার কারণে ক্ষুদ্র কারখানা মালিক, শ্রমিক ও গরিব ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও প্লাস্টিকের পাদুকা এবং হাতে তৈরি পাউরুটি ও বিস্কুটের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও বিকেএমইএ সভাপতি এ কেএম সেলিম ওসমান। ওই সময় এফবিসিসিআইয়ের অন্যান্য পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।
×