ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নিয়ে সঙ্কট

আইনী লড়াইয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২ জুলাই ২০১৭

আইনী লড়াইয়ে যাচ্ছে প্রতিপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সর্ববৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় চরম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এখন মামলা ও পাল্টা মামলার দিকে এগুচ্ছে। ফলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ফিশারিঘাটের এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা শুক্রবার থেকে জন ও যানবাহন চলাচলের রাস্তায় মাছ বিক্রি শুরু করেছে। কারণ আদালত নির্ধারিত ওই কেন্দ্রে মৎস্য বেচাকেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর বিরোধিতায় নেমেছে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য সমবায় সমিতি নামের সংগঠন। তাদের পক্ষ থেকে রবিবার সার্বিক বিষয় নিয়ে আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে বলে সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বছরের পর বছর ধরে পাথরঘাটার ইকবাল রোডে জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মালিকানাধীন পাইকারি মৎস্য ব্যবসার কর্মকা- চালিয়ে আসছে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতি। পক্ষান্তরে, এ ঘাটের অনতিদূরে কর্ণফুলী সেতুর পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে নতুন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। এ নতুন কেন্দ্র নিয়ে নানা অভিযোগ ও চাঁদাবাজির ঘটনাকে ঘিরে আড়তদারদের বড় একটি অংশ সেখানে যাওয়ার বিরোধিতায় আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। তাদের এ সংগ্রামকে সমর্থন দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি তাদের পক্ষে দু’দফায় সমাবেশ করে নতুন অবতরণ কেন্দ্রে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছেন। এ পরিস্থিতিতে ফিশারিঘাটের আড়তদাররা পুনরায় নিজেদের অবস্থানে থেকে মৎস্য ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এ অবস্থায় ফিশারিঘাটে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মৎস্য বিক্রি ও অবতরণের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের নির্দেশে অবতরণ কেন্দ্রের গেটে নোটিস টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে আড়তদাররা আদালতের আদেশ মেনেছে সত্য, কিন্তু নতুন কেন্দ্রে না গিয়ে চলাচলের সড়কের ওপর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছে। পাশাপাশি আড়তদারদের একটি অংশ নতুন কেন্দ্রে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে বছরের শুরুর দিকে ফিশারিঘাটের আড়তদারদের জোর করে নতুন কেন্দ্রে নেয়া হয়েছিল। প্রায় তিনসপ্তাহ সেখানে থাকার পর তারা পুনরায় পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। তাদের অভিযোগ, সেখানে ব্যাপক চাঁদাবাজি ও আড়ত দখল-বেদখলের ঘটনা রয়েছে। যাদেরকে বিভিন্ন আড়ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তারা মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে প্রকৃত আড়তদারদের বরাদ্দ দিয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। পক্ষান্তরে ইকবাল রোডের ফিশারিঘাটের আড়তদারদের যে অংশ নতুন কেন্দ্রে যেতে চায় তাদের বক্তব্য হচ্ছেÑ পুরাতন কেন্দ্রটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিচালিত হচ্ছে। নব প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রটি স্বাস্থসম্মত। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। সুতরাং তারা নতুন কেন্দ্রে গিয়ে ব্যবসা শুরুর পক্ষে। কিন্তু সোনালী যান্ত্রিক মৎস্য সমবায় সমিতির অধিকাংশ সদস্য নতুন কেন্দ্রে যাওয়ার বিরোধিতায় রয়েছে। সর্বশেষ তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আজ আদালতে গিয়ে আইনী লড়াই চালিয়ে যাবে। স্বার্থান্বেষী একটি চক্র তাদের দীর্ঘদিনের পৈত্রিক ব্যবসা ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি সংস্কার করে নতুন অবয়বে সৃষ্টি করা যায়। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা তা না করে নিজেদের স্বার্থে নতুন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মালিকানা নিয়েও মামলা রয়েছে। যে স্থানে এ অবতরণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তি রয়েছে। এছাড়া জমির মালিকানাও পরিষ্কার নয়। সুতরাং মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে আড়ত বরাদ্দ নিয়ে সেখানে স্থায়ী করার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ হওয়ায় তারা সেখানে যেতে অনিচ্ছুক। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের এ বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের চলমান ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সঙ্কট। যে সঙ্কট আগামীতে আরও হয়তবা গভীর হয়ে মৎস্য অবতরণ, পাইকারদের কাছ থেকে খুচরা পর্যায়ে মৎস্য সরবরাহে নিয়মিত কর্মকা- ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
×