ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডুবছে ময়মনসিংহ শিল্পনগরী, দেখার কেউ নেই

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১ জুলাই ২০১৭

ডুবছে ময়মনসিংহ শিল্পনগরী, দেখার কেউ নেই

বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে ॥ বেহাল দশার সড়ক আর জলাবদ্ধতার কারণে চলতি বর্ষায় ডুবতে বসেছে ময়মনসিংহের বিসিক শিল্প নগরী। ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দের সড়ক মেরামতে নেই কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানেও নির্বিকার বিসিকের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্থানীয় ক্ষুদ্র শিল্প মালিক ও শ্রমিক কর্মচারীরা। শিল্পবান্ধব পরিবেশ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। বিসিকের স্থানীয় উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ নূরুজ্জামান বরাবরেই মতোই আশার বাণী শুনিয়ে জানান, বিসিক শিল্প নগরীর উন্নয়নে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দের একটি প্রস্তাব অনুমোদন পেলে কোন সমস্যাই আর থাকবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পড়ে থাকা প্রস্তাবটির কবে নাগাদ মিলতে পারে অনুমোদন প্রশ্নে লা জবাব বিসিকের এই কর্মকর্তা। বিসিকের স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় সূত্র জানায়, গত ১৯৬৮ ও ১৯৯১ সালে দুই দফায় ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দায় প্রায় ২০ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় বিসিক শিল্প নগরী। এ সময়ে ১০৫টি প্লটে ছোট-বড় শতাধিক কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বেশকিছু কারখানা রুগ্ণ থাকার পরও এসব কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মচারী কাজ করছে। প্রতিষ্ঠাকালীন বিসিকের চারপাশ ছিল খালি ও নিচু এলাকা। আর অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে ছিল বিসিকের শিল্প কারখানা। ফলে বিসিকের পানি খুব সহজেই নেমে যেতে পারত। কিন্তু এ সময়ে বিসিকের চারপাশের খালি ও নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে উঠেছে ঘন বসতির আবাসিক এলাকা। এতে করে বিসিকের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিনেও বিসিকের ভেতরের রাস্তাঘাট মেরামত না করায় সবকটি রাস্তাঘাট ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় এসব খানাখন্দে হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানি জমে ডোবায় রূপ নিয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপসহ কভার্ডভ্যান এসব খানাখন্দ পার হওয়ার সময় পাতি ভেঙ্গে কিংবা টায়ার ফেটে প্রায়ই বিকল হয়ে রাস্তার ওপর পড়ে থাকছে। বিসিকের প্রধান সড়কে নিয়মিত এভাবে পণ্যবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যান বিকল হয়ে পড়ে থাকার কারণে বিঘিœত হচ্ছে পণ্য পরিবহন। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প মালিকরা। এদিকে নিয়মিত পরিষ্কার না করায় বিসিকের ড্রেনগুলোতে ময়লা আবর্জনা জমে এবং গাইড ওয়াল ভেঙ্গে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ড্রেন উপচে রাস্তা গড়িয়ে পানি ঢুকে পড়েছে কারখানার ভেতরে। এ সময় শ্রমিক কর্মচারীদের দুর্ভোগের সীমা থাকছে না। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এসবের বাইরে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজের সমস্যা তো আছেই। এসব নানা কারণে বিসিকের শিল্প মালিকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, অপেক্ষাকৃত নিচু বিসিক এলাকার পানি এখন আর নামতে পারছে না সহজে। কারণ ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কারণে নিষ্কাশন ব্যবস্থাটির অবস্থান উঁচুতে। ফলে বিসিকের নিচু এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য উঁচু ড্রেনে উঠতে পারছে না। এমতাবস্থায় বিসিকের জলাবদ্ধতা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ওমর বেকারির মালিক সালমান ওমর রুবেল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বিসিকের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিসিক ও পৌর কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সার্ভিস চার্জসহ নানাবিধ কর দেয়ার পরও মিলছে না বিন্দুমাত্র সহায়তা। ফলে অনেক কারখানা রুগ্ণ হতে চলেছে। শিল্প মালিক নজরুল ইসলাম জানান, বেহাল রাস্তার কারণে পণ্য পরিবহনে কোন ট্রাক বিসিকে আসতে চায় না। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনে পণ্যসামগ্রী পরিবহন করতে হচ্ছে মালিকদের।
×