ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

থাকবে শুধু ভ্যাট

এলএনজি আমদানির শুরুতেই গ্যাসের শুল্ক প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩০ জুন ২০১৭

এলএনজি আমদানির শুরুতেই গ্যাসের শুল্ক প্রত্যাহার

রশীদ মামুন ॥ তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির শুরুতেই গ্যাসের ওপর থাকা ৯৩ দশমিক ২৪ ভাগ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এলএনজির দাম নিয়ন্ত্রণে দেশীয় গ্যাসের ওপর থাকা শুল্কও প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। শুধু গ্যাসের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট থাকবে। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এলএনজি আমদানির শুরুতেই গ্যাসের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারে সাম্প্রতিক নেয়া সরকারের সিদ্ধান্তটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পেয়েছি। সম্পূরক শুল্ক তুলে দিয়ে শুধু ১৫ ভাগ ভ্যাট রেখে হিসাব করলে এখনকার গ্যাসের দামের থেকে ইউনিটপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। এরপরও বাড়তি দামের এই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করলে খরচ বেশি পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। কাতার ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে এলএনজি আমদানির চেষ্টা করছে সরকার। আগামী বছর শেষ নাগাদ এলএনজি আমদানি শুরু হবে। তবে বাড়তি দরের এলএনজি ব্যবহারে শুরুতেই দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা অনিহা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে ব্যবসায়ীরা এলএনজির কারণে গ্যাসের দরের পরিবর্তনে শিল্প বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান। তারা গ্যাসের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিও জানায়। সরকার বলছে শুরুতে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হবে। এতে দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে এলএনজির দামের সমন্বয় ঘটানো হবে। তবে যেহেতু দেশীয় গ্যাসের ঘাটতি দিন দিন প্রকট হচ্ছে তাই এলএনজি আমদানিও বৃদ্ধি করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমান আবিষ্কৃত মজুদ ২০৩০ এর মধ্যে শেষ হবে। তখন নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া না গেলে পুরোপুরিভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে হবে। যাকে একটি আশঙ্কার বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার এখন মহেশখালিতেই তিনটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এর বাইরে কুতুবদিয়াতে আরও দুটি স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এখন নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা এলএনজি টার্মিনালের প্রতিদিনের ক্ষমতা হবে তিন হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বাইরে পায়রাতেও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ সরকার মনে করছে ভবিষ্যতে দেশের চাহিদার বড় অংশই আমদানি করতে হবে। সরকারের পর্যালোচনায় বলা হচ্ছে দেশে এখন গ্যাসের বিক্রিমূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটে দুই দশমিক ১৭ ডলার। এখন সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি মূল্য ৮ মার্কিন ডলার। এই সময়ে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা দৈনিকের দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করলে রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় এবং সকল রকমের কর অন্তর্ভুক্ত করলে দাম পড়বে ৪ দশমিক ৩৫ ডলার। আর এলএনজি পৃথকভাবে বিক্রি করতে চাইলে দাম পড়বে ২৩ দশমিক ১১ ডলার। তবে সকল কর রেয়াত করলে এলএনজির দর পড়বে ১০ দশমিক ৪০ ডলার আর মিশ্রিত গ্যাসের দাম পড়বে ৪ দশমিক ১৪ ডলার। অর্থাৎ এখনই মিশ্রিত গ্যাসের দাম সরাসরি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এই দাম বৃদ্ধি পাবে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশে গ্যাসের সঙ্কট সামাল দিতে ক্রমান্বয়ে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যত বেশি এলএনজি আমদানি হবে গ্যাসের দামও ততই বৃদ্ধি পাবে। দেশে গ্যাসের মজুদ এবং ব্যবহারের হিসেব বিবেচনা করলে এলএনজি আমদানির কোন বিকল্প নেই। পেট্রোবাংলাই বলছে, ২০২০ এর পর থেকে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ২০৩০ নাগাদ দেশে সকল খনির মজুদ একেবারে শেষের পথে থাকবে। সরকার এখন কেবল বিদ্যমান খনিগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চলেছে; যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় রকমের হুমকি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশের স্থলভাগে আর নতুন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ সে ক্ষেত্রে সাগরে অনুসন্ধান শুরু করা উচিত। তবে এক্ষেত্রে সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দর পড়ে যাওয়ায় সাগরে বিশাল ব্যয়ে অনুসন্ধানে আগ্রহী হচ্ছে না বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
×