ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুশির বন্যায় ছিল সেলফি তোলা আর ফেসবুকে ছবি ও স্ট্যাটাস দেয়ার ধুম

তৃণমূলের মিলনমেলা ভাঙল... এবার ফেরার পালা

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৩০ জুন ২০১৭

তৃণমূলের মিলনমেলা ভাঙল... এবার ফেরার পালা

সমুদ্র হক ॥ ঈদের মিলনমেলার গ্র্যান্ড ফিনালে (পুনরায় শুরুর আগে শেষ) চলছে। এবার ফেরার পালা শুরু। ঈদের রেশ টেনে ধরতে পুনর্মিলনীর আয়োজন। ঈদের আগের দিন, ঈদ হয়ে পরের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় ‘ঈদ মুবারক’। এই সময়ের প্রশ্নমূলক কথা, কেমন কাটলো ঈদ! কারও উত্তর হতাশার। কারও আনন্দের। কারও উত্তর আশা জাগানিয়া। কিছু বেদনার। বয়স্ক ও মধ্য বয়সীদের উত্তর- ‘আ...র ঈদ..’। একই বয়সী কারও উত্তর আমাদের আর ঈদ। ছেলেমেয়েদের চোখে ঈদ দেখি। ছেলেমেয়ে নাতি- নাতনির হাসিতে আমাদের মুখে হাসি আসে। ওদের সাজে আমরা সাজি...’ (কি সুন্দর উত্তর তাই না)। তরুণ-তরুণীদের উত্তরের ধরন এ রকম-কে কত সেট পোশাক পেয়েছে। ঈদের দিন পরের দিন কোন পোশাক পরে আত্মীয়স্বজন বন্ধুদের বাড়িতে গিয়েছে। ঈদের সালামি কার কত জমা হয়েছে। কে কার বন্ধুবান্ধবী ও প্রণয়ের মানুষকে কি গিফট দিয়েছে। কে কাকে নিয়ে কোথায় বেড়াতে গেছে। কত সেলফি তুলেছে। ইন্টারনেটে কে কিভাবে বিশ্ব ঘুরে এসেছে। ফেসবুকে কার কত ছবি ও স্ট্যাটাস গেছে। ঈদের আরও কোন টাস্ক আছে কি না। উচ্ছ্বাসের যেন অন্ত নেই। গৃহকর্ত্রীর কথাÑ ঈদে কি ধকলটাই না গেল। ঘর দোর গোছানো। আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো কি যেমন তেমন কাজ। চাকরিজীবী গৃহকর্ত্রীর কথাÑ কাজের লোকদের আসার নাম গন্ধ নেই। স্বগোক্তিÑ ওরা কি মনে করে কাজ পারি না। ওরা না থাকলেও কাজ করতে পারব। অফিস যাওয়ার আগে খাবার তৈরি। সন্তানদের টিফিন দেয়া। স্কুলে পৌঁছে দেয়া। তারপর অফিসে যাওয়া। সাহেবও চাকরি করে। একটু সাহায্য করবে তা নয়। ফিটবাবু হয়ে চললেন। অফিস থেকে ফিরে সব কাজ সামলানো। কাজের লোক না থাকলেও পারা যাবে। এই সময় পাশের বাড়ির আপা এসে বললেন ‘৫-৭ দিন এভাবে কাজ করা যায়। তারপর দেখবেন আর সইছে না।’ এর মধ্যে ঈদের ছুটিতে আসা নিকটজনদের ফেরার পালাও শুরু হয়ে গেছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতার ছন্দ ‘দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি বেলা দ্বিপ্রহর......গভীর ক্রন্দন যেতে নাহি দিব হায় তবু যেতে দিতে হয় তবু চলে যায়...’। ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিরা এই কদিন বাড়িটিকে ভাবেই না মাতিয়ে রেখেছিল। দুই বোনের দিনে রাতে কতই না কথা। কত খুনসুটি। ভাইবোনদের আড্ডা। তাদের প্রত্যাবর্তনের ঘণ্টা বেজে ওঠার সঙ্গে মা বাবার চোখ অশ্রু সজল। একজন বললেন ‘ওরা যখন ছোট তখন ¯েœহের সুরে শাসন করেছি। এখন ওরা আমাদের ভালবাসার সুরে শাসন করে। এভাবেই তো স্বর্গ নেমে আসে ভুবনে। সন্তানরা যাওয়ার পর কিছুদিনের জন্য বাড়ি শূন্য হওয়া। এই কদিন ছেলেমেয়েদের একটু ভাল খাওয়ানোর জন্য মায়েদের কতই না আকুতি। সন্তানরা বাইরে থেকে এলে মায়েদের চোখে সব সময় শুকনো মনে হয়। সন্তানরা কর্মস্থলে ও লেখাপড়ার জন্য ফিরে যাচ্ছে। মায়েরা চোখের জল লুকাচ্ছে আড়ালে। জীবন সংসারে ঈদ প্রতিবছর সময়মতো আসে। রেখে যায় স্মৃতিময় অধ্যায়। এই অধ্যায়ে শুধুই ¯েœহ, ভালবাসার পরশ। ঈদের দিন কয়েক আগে আনন্দের যে জলোচ্ছ্বাস উছলে ওঠে ঈদের পর তা ধীরে ধীরে চলমান জীবনের ঢেউয়ের সঙ্গে মিশে যায়। হয়ে ওঠে স্বাভাবিক। ঈদের পর নগরীগুলোতে সংযোজন- ঈদ পুনর্মিলনী।
×