ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৯ জুন ২০১৭

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির জামাত

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ সকল ভয় আর দুশ্চিন্তাকে জয় করে নিñিদ্র নিরাপত্তায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে ১৯০তম ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় জামাত শুরুর ১৫, ৫ ও ১ মিনিট আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে নামাজ আরম্ভের ঘোষণা দেয়া হয়। জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ফরীদউদ্দীন মাসঊদ। গত বছর ঈদ-উল-ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহের পাশে জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন ছাড়াও পাঁচ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এছাড়া মাঠ ও মাঠের বাইরে সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। প্রত্যেক মুসল্লিকে তল্লাশি করে ঈদগাহে প্রবেশ করানো হয়। মাঠে আটটি ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে না দেয়ায় অনেক মুসল্লি মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। জামাত শেষে ইমাম দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় মোনাজাতে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতাসহ মানবতার শান্তির জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। এবারও শোলাকিয়া মাঠ থেকে জামাত সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আইসহ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। জামাত শুরুর আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, শোলাকিয়া মাঠের সদস্য সচিব সদরের ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাসউদ প্রমুখ। ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বাবুল আহমেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ মাঠে নামাজ আদায় করেন। দিনাজপুরে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, তিন লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুরে। এবারেই প্রথম প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দিনাজপুর শহরের বড় ময়দানে ঈদগাহ মিনার প্রাঙ্গণে ঈদ-উল-ফিতরের নামাজে অংশ নিলেন ৩ লক্ষাধিক মুসল্লি। এটি দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত। সকাল ৯টায় মওলানা শামসুল ইসলাম কাসেমী নামাজে ইমামতি করেন। দেশ ও জাতির মঙ্গল, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে ১ মাসের সিয়াম সাধনার পর মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে মোনাজাত করেন লাখ লাখ মানুষ। সকাল ৭টা থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুসল্লিরা ঈদগাহে ছুটে আসে। জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী বিরল, চিরিরবন্দর, কাহারোল, বীরগঞ্জ ও বোচাগঞ্জ উপজেলার মুসল্লিরা বাসে-ট্রাকে করে আসে। বিশাল ঈদগাহ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বিপুলসংখ্যক বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও রোভার স্কাউট মোতায়েন করা হয়। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশির পর ঈদগাহে প্রবেশ করানো হয়। সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। চট্টগ্রামে আনন্দঘন পরিবেশে স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম থেকে জানান, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দঘন পরিবেশে সোমবার চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে ঈদ-উল-ফিতর। ঈদগাহ ও মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাতে শরিক হন লাখো মানুষ। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং শান্তি কামনায় করা হয় বিশেষ মোনাজাত। বরাবরের মতো এবারও চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতটি অনুষ্ঠিত হয় জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে। সেখানে নামাজ আদায় করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও শ্রেণী পেশার মানুষ। সকাল ৮টায় জমিয়তুল ফালাহ মাঠের প্রধান ঈদ জামাতে ইমামতি করেন ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদরি। যেন মিলেছিল সকল মত ও পথের মহাসম্মিলন। নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
×