ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরতী, সাবানারা পেলেন সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২১ জুন ২০১৭

আরতী, সাবানারা পেলেন সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমাজ নারীর কর্ম ও পেশার একটি বৃত্ত তৈরি করে। কর্মের নানা ক্ষেত্রে নারীর প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করে রাখা হয়। এই বৃত্ত ও বন্ধ দ্বার ভেঙ্গে প্রান্তিক সমাজের আদিবাসী নারী আরতী রানী বিশ্বাস মৎস্যজীবী পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মাধব লক্ষ্মীকোলের বাসিন্দা আরতী রানী ৪৩ বছর ধরে মৎস্যজীবী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি হাটে বসে যখন মাছ বিক্রি করেন মাছ ব্যবসায়ী ও অন্য হাটুরেদের নানা বিদ্রƒপ, অপমানের সম্মুখীন হতে হয়। নারী হিসেবে বিভিন্ন সময় নানা সহিংসতার সম্মুখীনও তাকে হতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন ও প্রতিবাদী হয়েছেন। তার ছয় সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সমাজের সকল প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রথা ভেঙ্গে আত্মশক্তিতে মৎস্যজীবী হিসেবে সফলতা অর্জন করেছেন। অন্যদিকে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের আন্দোলনে একক ও সাহসী প্রতিবাদে নতুন অধ্যায় যোগ করেছে সাবানা আক্তার। রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার পশ্চিম কচুয়া গ্রামের মেয়ে সাবানা নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় তার বিয়ে ঠিক হয়। সাবানা বিয়েতে রাজি হয় না, সে পড়াশোনা করতে চায়। বিষয়টি সাবানা ও তার বন্ধুরা স্কুলে শিক্ষকদের অবহিত করে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেও বিয়ে বন্ধ করতে না পারায় সে এক ব্যতিক্রমী ও সাহসী প্রতিবাদ জানায়। নিজের চুল কেটে ন্যাড়া হয়ে সে তার বিয়ে বন্ধ করে। কেননা ছেলেপক্ষ তার চুলের প্রশংসা করেছিল। এখন সে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এ দেশের সমাজ প্রগতি আন্দোলনের অগ্রপথিক মানবতার মৃন্ময়ী জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামালের ১০৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা সফল চার নারীকে মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ‘সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক’ প্রদান করা হয়েছে। মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা প্রদানসহ সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রথা ভেঙ্গে আত্মশক্তিতে মৎস্যজীবী হিসেবে সফলতা অর্জনের জন্য রাজবাড়ী জেলার আরতী রানী বিশ্বাস, কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা অর্জনের জন্য জামালপুর জেলার মোতাহেরা নাসরিন, অনুর্ধ-১৬ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অনুর্ধ-১৬ জাতীয় নারী ফুটবল দল বাংলাদেশ, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করে জীবনের অগ্রযাত্রায় সাহসী ভূমিকা গ্রহণের জন্য রংপুর জেলার সাবানা আক্তারকে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের অন্যতম সহ-সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘অসাম্প্রদাকি রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে আমরা প্রতিনিয়ত আঘাত পাচ্ছি। কিন্তু আমরা এখনও বিশ্বাস করি আমরা সাম্প্র্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে একটি সুন্দর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। সুফিয়া কামাল বলেছেন, আমার বিবেক হচ্ছে আমার সবকিছু। যত দিন না আমাদের নিজের বিবেক জাগ্রত হবে, মানব সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে তত দিন পর্যন্ত আমরা এটি মানবিক সমাজ পাব না।’ ‘মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং শিক্ষা ও সুফিয়া কামাল’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন বিশিষ্ট সামজবিজ্ঞানী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ বৈষম্য, শ্রেণী বৈষম্য, শিক্ষার বৈষম্য এই বৈষম্যগুলো দূরীভূত না করলে সমাজের উন্নতি হবে না। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনেই সুফিয়া কামালের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। সুফিয়া কামাল যখন কবিতা লেখেন তার সেই কবিতা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রেখেছে এবং রেখে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধীরে ধীরে আমরা দেখি সাম্প্রদায়িকতার বীজ রাষ্ট্রে ঢুকে যাচ্ছে। সেই সময় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যারা মাঠে নেমেছেন, আন্দোলন করেছেন তার মধ্যে জননী সাহসিকা কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন অন্যতম। ’৭৫ উত্তরকালে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভূমিকা অপ্রতিরোধ্য ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার বিষয়বস্তু, শিক্ষার মান এ বিষয়গুলোর পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব পরিচালনা করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম। সম্মাননার অংশটি পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ঢাকা মহানগর শাখার সদস্যবৃন্দ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ দুই শতাধিক উপস্থিত ছিল।
×