ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির আমলে খাল দখল

সামান্য বৃষ্টিতেই টরকী বন্দরে হাঁটু পানি

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৯ জুন ২০১৭

সামান্য বৃষ্টিতেই টরকী বন্দরে হাঁটু পানি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সামান্য বৃষ্টিতেই দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ীক বন্দর গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরে হাঁটু সমান পানি জমে ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভোগান্তি লাঘবের বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। এ নিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদীসংলগ্ন টরকী বন্দরে মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শাখা খালের দক্ষিণ পাশ থেকে শুরু করে উত্তর প্রান্তের বন্দরের মধ্যে প্রায় আধা কিলোমিটার খাল অবৈধভাবে ভরাট করে সেখানে সুরম্য পাকা আবাসিক ভবনসহ দোকানপাট নির্মাণ করার প্রতিযোগিতা হয়। ওইসময় বিএনপির কতিপয় নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা যে যেভাবে পেরেছে দখল করে নিয়েছে সরকারী খাল। দখলদাররা সরকারী খালে পজিশন বিক্রয়ের বাণিজ্যও করছে দেদার। সব দখল টিকিয়ে রাখতে প্রভাবশালীরা খালের দখলীয় সম্পত্তিতে মসজিদও নির্মাণ করেছে। প্রভাবশালীদের দখল বাণিজ্যের কারণে দিনে দিনে বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশন পথ। আর এ কারণেই সামান্য বৃষ্টিতেই টরকী বন্দরের বিভিন্ন সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে পুরো বন্দরের প্রায় তিন হাজার ব্যবসায়ী, ক্রেতা, তিনটি স্কুলের শিক্ষার্থীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের উত্তর প্রান্তে (দখলের শেষ প্রান্তে) এখনও রয়েছে বিশাল চওড়া খালের মুখ কিন্তু নদী থেকে পানি প্রবেশের মুখ ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে টরকী বন্দরের প্রধান সড়কসহ বাড়িঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। কাদা একাকার হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে অনেক পরিবার। প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না কেউ। বন্দরের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বৃষ্টি হলেই বন্দরের সড়ক পানির নিচে থাকায় ক্রেতাসমাগম কমে বিকিকিনি বন্ধ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা আরও বলেন, প্রভাবশালীর দখল বাণিজ্যের কারণে এখন বন্দরের তিন সহস্রাধিক ব্যবসায়ীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা সরকারী খাল থেকে অবৈধ ভবন উচ্ছেদ করে পানি নিষ্কাশনের পথ তৈরি করে বন্দর রক্ষা ও বন্দরের ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। ভুক্তভোগী টরকী বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকার আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একটু বৃষ্টিতেই বন্দরের সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় টরকী হাইস্কুল, বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রি-ক্যাডেট স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী এবং কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ বাসিন্দাদের বাসা থেকে বের হয়ে হাঁটু সমান পানি ভেঙ্গে বের হতে হয়। পানি কমে যাওয়ার পর শুরু হয় তাদের কর্দমাক্ত রাস্তায় যাতায়াত। আর এ জন্য দায়ী খাল দখলকারীরা। তারা নিজেদের স্বার্থে পানি নিষ্কাশনের সরকারী খাল অবৈধভাবে দখল করে ভবন নির্মাণের কারণে বন্দরের ব্যবসায়ী ও পার্শ¦বর্তী বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। খুব শীঘ্রই দখলকৃত খাল উদ্ধারসহ পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×