ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও ইমরুল বাদে ঢাকায় ফিরেছেন সবাই

অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে চান মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৮ জুন ২০১৭

অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগাতে চান মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মাত্র কয়েকদিন আগেই নতুন করে ইতিহাস লিখেছিলেন তারা ইংল্যান্ডের মাটিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অভাবনীয় এক সাফল্যগাঁথা রচনা করা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল শনিবার সকালেই দেশে ফিরেছে। বিশ্বের শীর্ষ আট দল নিয়ে আয়োজিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে টাইগাররা। দেশের মানুষ তাই এ দলটির বিস্ময়কর সাফল্যে দারুণ গর্বিত। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য মনে করছেন ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ানো প্রয়োজন, তাহলেই বড় পর্যায়ে বড় ম্যাচে কিভাবে খেলতে হয় সেটা জানা যাবে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এই অভিজ্ঞতা দলের জন্য দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে দাবি টাইগার অধিনায়কের। আর এই অভিজ্ঞতা ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কাজে লাগবে বলেও বিশ্বাস তার। দলের সঙ্গে অবশ্য দেশে ফেরেননি মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েস। তারা কিছুদিন ছুটি কাটাবেন ইংল্যান্ডেই। আর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের শনিবার বিকেলেই ফেরার কথা। এবার শুরু থেকেই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ছিল ব্যাপক আলোচনা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভাবনীয় কিছু করে দেখাবে এমন গুঞ্জন ছিল সবখানে। সেটা সত্য হয়েছে গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। এই প্রথম কোন টুর্নামেন্টের শেষ চারে পা রাখতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। সেমিতে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিরুদ্ধে যেন বাংলাদেশই ছিল ফেবারিট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড় মঞ্চে বড় ও অভিজ্ঞ দলের কাছে হারতে হয়েছে মাশরাফিদের। সেমি খেলে পরদিনই লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিমান ধরেছে দল। সেখানে ছিলেন না মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল ও সাকিব। দল ফিরেছে শনিবার সকালেই। বিকেলে ফেরার কথা সাকিবের। বাকি তিনজন পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে ইংল্যান্ডেই থেকে গেছেন। অবশ্য ঈদের আগেই ফেরার কথা রয়েছে তাদের। গর্ব করার মতো সাফল্য নিয়ে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন মাশরাফিরা। এ সময় টাইগার অধিনায়ক দল সেমিফাইনালে খেলার অনুভূতি নিয়ে বলেন, ‘ভাল লাগছে। তবে সুযোগ ছিল ফাইনালে যাওয়ার। নকআউট পর্যায়ে খেলায় সবসময় সুযোগ থাকে। কিন্তু আমরা সুযোগটা নিতে পারিনি। আশাকরি সামনে আরও অনেক টুর্নামেন্ট আছে, সেগুলোতে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো এখন গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি সামনে এমন সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে পারব।’ সেমিতে সুযোগ কাজে লাগানোটা কঠিনই ছিল। ভারত অনেক অভিজ্ঞ দল। বড় সব টুর্নামেন্টের শিরোপাই জিতেছে তারা। আর সেই অভিজ্ঞ দলের কাছে বড় ম্যাচের চাপেই হারতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। মাশরাফি বলেন, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা আরও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। বড় ম্যাচে কিভাবে নিজেদের মেলে ধরতে হয় সেই জায়গায় উন্নতি করতে হবে আরও।’ গত ২৬ এপ্রিল দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মোট ৫০ দিনের সফরে চারটি প্রস্তুতি ম্যাচসহ মোট ১২ ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফিরা। মাত্র ৫ ম্যাচ হেরেছে, জিতেছে ৭টি। র‌্যাঙ্কিংয়েও উন্নতি ঘটিয়েছে এর মধ্যে। উঠেছে ৬ নম্বরে। সাফল্যে ভরা সফর থেকে ফিরে আপাতত ব্যাট-প্যাড থেকে দূরে থাকবে ক্রিকেটারা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগস্টের শেষদিকে শুরু হতে যাওয়া দুই টেস্টকে সামনে রেখে ঈদের পরই সবাই মাঠে ফিরবে। দলের উন্নতির গ্রাফটা ক্রমেই উর্ধমুখী হচ্ছে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ দল। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলল সেমিফাইনাল। এ বিষয়ে মাশরাফি বলেন, ‘বিশ্বকাপ তো বিশ্বকাপই। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিচারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভীষণ কঠিন। ওখানে গ্রুপ পর্ব পেরনোই অনেক কঠিন। সেই জায়গায় আমরা সেমিফাইনাল খেলেছি। সেই হিসেবে আমি দুই বছর আগের (২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল) অর্জনের চেয়ে এবারের সাফল্যকে এগিয়ে রাখব। সেমিফাইনাল খেলেছি ওটা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে যে গ্রুপ থেকে খেলেছি। কাজটা এতটা সহজ ছিল না। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বড় প্রাপ্তি। হয়তো আরও সুযোগ ছিল কিন্তু সেটা আমরা নিতে পারিনি। পরবর্তী সময়ে আমাদের আরও দায়িত্বশীল হয়ে খেলতে হবে। স্কোরটা বড় না হওয়াতেই হয়তো আমরা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলাম। তবে এটা কখনও হওয়া উচিত নয়। আমরা যে সংগ্রহ দাঁড় করেছি সেটা নিয়ে আমাদের লড়াই করা উচিত ছিল।’ এবার বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার ছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে। এরমধ্যে অন্যতম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আর সেজন্য তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন মাশরাফি। দুই বছর পর ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ যেহেতু ইংল্যান্ডেই বসবে তাই এবারের অভিজ্ঞতা তখন তরুণদের সঙ্গে দলের প্রত্যেকেরই ভীষণভাবে কাজে লাগবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘তরুণ ক্রিকেটারদের এই পর্যায়ের ক্রিকেটে পারফর্ম করা এতটা সহজ নয়। তবে এটা বলব তাদের উন্নতিও করতে হবে। এ ধরনের টুর্নামেন্টে সিনিয়র খেলোয়াড়দের ভাল খেলাটা খুবই জরুরী। সেই সঙ্গে তরুণ খেলোয়াড়দেরও ভাল খেলতে হবে। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। ২০১৯ বিশ্বকাপে এরাই হয়তো অনেক দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারবে। আরও দুই বছর পর তারা আরও অভিজ্ঞ হবে। তবে এখন উন্নতির সময়। এখানে তারা যে পর্যায়ে তাদের খেলার উন্নতি করেছে, এখন উচিত সেটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। উন্নতির ধারাটা যদি ধরে রাখতে পারে তাহলে আমার বিশ্বাস ২০১৯ বিশ্বকাপে ওরা ভাল করবে।’
×