ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরে ফেরা

শেষ দিনে কমলাপুরে মানুষের ঢল, মেলেনি কাক্সিক্ষত টিকেট

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৭ জুন ২০১৭

শেষ দিনে কমলাপুরে মানুষের ঢল, মেলেনি কাক্সিক্ষত টিকেট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির শেষ দিনে হাজারো অভিযোগ ছিল যাত্রীদের। কাক্সিক্ষত টিকেট না পাওয়া, দ্রুত টিকেট শেষ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা, লাইনে ধীরগতি এসব কিছুর মধ্যে দিয়েই শেষ হলো এবারের ঈদ যাত্রায় অগ্রিম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম। তবে রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ৬৫ ভাগ টিকেট সাধারণ যাত্রীদের জন্য রাখা হলেও প্রভাবশালীদের তদবিরের মুখে তা ৫০ ভাগেরও কম পৌঁছে সাধারণ মানুষের হাতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেলওয়ের সাধারণ কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কিছুই করার থাকে না। তারা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন মাত্র। অভিযোগ যাই থাক টিকেট হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না। সোনার হরিণ টিকেট হাতে পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। শুক্রবার দেয়া হয়েছে ২৫ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকেট। শেষ দিনের টিকেট সংগ্রহে বৃহস্পতিবার ইফতারের পরপরই অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। গল্প আর তাস খেলায় রাত কেটেছে। সকাল দশটাই প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে লাইন পৌঁছে কমলাপুর সড়ক পর্যন্ত। এ বছর অনলাইনে টিকেট কাটা নিয়েও নানা অভিযোগ যাত্রীদের। অনেকেই চারদিন চেষ্টা করেও অনলাইনে ঢুকতে পারেননি। যারা ঢুকতে পেরেছেন তারা টিকেট পাননি। আর এ জন্য ভুক্তভোগীরা দায়ী করেছেন রেলওয়ের অনলাইন টিকেট বিক্রির বিষয়টি দেখভালকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডিকে। রেলের টিকেট ছাড়ার ৪ দিনে প্রতিদিনই অনলাইনে টিকেট কাটতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন অনেকে। যাদের সবার সন্দেহ ‘সার্ভার ডাউন’ রেখে কেউ টিকেট কালোবাজারে ছাড়ছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা ৫ মিনিটের মধ্যেই টিকেট শেষ হয়ে যায় কিভাবে? অনলাইন বা মোবাইলে ডিজিটাল কারচুপি ধরার সুযোগ বাস্তবে রেলওয়ের কতটা আছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আরিফুজ্জামানের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, খোঁজ নিচ্ছি। সরাসরি তাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেশন ম্যানেজার সীতাশু চক্রবর্তীকে মৌখিকভাবে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেন। স্টেশন ম্যানেজার জানান, তিনি এর আগেই স্টেশনের তৃতীয়তলা থেকে যারা মোবাইলে টিকেট কেটেছে তাদের একটি লগ লিস্ট নিয়েছেন। সেখানে চেক করে দেখা যাচ্ছে, মোবাইলের পৃথক নম্বর থেকেই অর্থাৎ নিয়মানুযায়ী টিকেট কাটা হয়েছে। তবে ই-মেল ব্যবহার করে টিকেট কাটার আর কোন লগ লিস্ট তার কাছে নেই। বিষয়টি অবশ্য তিনি দেখছেন বলেও জানান। এ বছর বেশিরভাগ অভিযোগ এই ই-মেলে টিকেট কাটা নিয়ে। এই ১০ শতাংশের কোন হিসেবে দেখা যাচ্ছে না। টিকেট বিক্রির শেষ দিন আবারও স্টেশন ম্যানেজারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইন বা ই-টিকেটে রেলওয়ের কোন তদারকি ব্যবস্থা নেই। ২৫ ভাগ সিএনএসবিডির ওপরই ছেড়ে দেয়া। মানুষ অনলাইন এবং মোবাইলে এ সঙ্গে টিকেট কেটে সংগ্রহ করে থাকেন। যারা অনলাইনে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের অনেকেই শুক্রবার কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছিলেন। সাক্ষাত করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। নিজেদের অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার মেলেনি। রেলওয়ের তথ্যে দেখা গেছে, মোবাইলের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ এবং বাকি ১০ শতাংশ ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে সদ্য যোগ দেয়া মোফাজ্জল করিমের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে-মোবাইলে যেগুলো বিক্রি হয় না সেগুলো ৪৮ ঘণ্টা আগে কাউন্টারে ফেরত দেয়া হয়। যেগুলো বিক্রি হয় তার হিসেব নিশ্চয়ই তারা দেয়।’ কমলাপুর রেলস্টেশনের তৃতীয়তলায় অনলাইন ও মোবাইল টিকেট ছাড়ার কারিগরি অফিস কক্ষ। এখানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) রেলের ই-টিকেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। সরাসরি রেলওয়ের কোন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত থাকেন না। সিএনএসবিডি এই অনলাইন ও মোবাইল কোটার টিকেট ছাড়ে। তাদের তদারকি করার মতো কারিগরি দক্ষতা বা বিশেষজ্ঞ রেলের নেই! অনলাইনে টিকেট কাটতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে একজন বলেছেন, ‘স্নিগ্ধা, এসি বার্থ এবং এসি সিট অনলাইনে সকাল আটটার আগেই শেষ হয়ে যায়। ২৫ ভাগ কোটার অল্পকিছু ছাড়া (যেগুলো মোবাইল কাটা হয়) বাকি সব কিভাবে শেষ হয়ে যায়? শিহাব জামিল নামে একজন অভিযোগ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি সেকেন্ডও মিলিয়ে নিয়েছিলাম। সময় ০৮:০০:০৬-এ নীলসাগরের চিলাহাটি স্নিগ্ধার টিকেট শেষ। রায়হান সোবহান নামে একজন বলেন, ‘সিএনএস যে কোন উপায়ে সকাল দশটা পর্যন্ত সার্ভার ডাউন করে রাখে। তারপর সার্ভার যখন কার্যকর হয়, ততক্ষণে টিকেট প্রায় সব শেষ। আশরাফুল ইসলাম সাগর নামে আরেকজন বলেছেন, আমিও সাতটা ৫৫ মিনিট থেকে সাইটে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সার্ভার সেøা। কাজ হয় না! পরে যখন ঢুকতে পারলাম, টিকেট শেষ! শাহরিয়াল ইসলাম নামে আরেকজন লিখেছেন, অনলাইনে সকাল আটটা বাজার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সকল রুটের কয়েক হাজার টিকেট শেষ হয়ে যাওয়া ডিজিটাল চুরি ছাড়া কিছু নয়। এদিকে ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য আগাম টিকেট দেয়ার শেষ দিনে ভিড় হয় অনেক বেশি। টিকেট বিক্রি শুরু হয় সকাল আটটা থেকে। এক যোগে ২৩ কাউন্টার থেকে টিকেট দেয়া হয়। শেষ দিনে নারীদের জন্য দুটি কাউন্টার থেকে টিকেট সরবরাহ করতে দেখা গেছে। শেষ দিনে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে। নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি রাজশাহী, পার্বতীপুর ও দিনাজপুরগামী বিশেষ ট্রেনের টিকেটও দেয়া হয়। এদিকে ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে আগামী ১৯ তারিখ দেয়া হবে ২৮ জুনের ফিরতি টিকেট, ২০ জুন দেয়া হবে ২৯ জুনের টিকেট, ২১ জুন দেয়া হবে ৩০ জুনের টিকেট, ২২ জুন দেয়া হবে ১ জুলাইয়ের টিকেট এবং ২৩ জুন বিক্রি হবে ২ জুলাই ফিরতি টিকেট। কমলাপুর স্টেশন থেকে দিনে প্রায় ৫১ ট্রেনের ৫০ হাজার টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৩১ আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। ১২ জুন থেকে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়। পাঁচদিনব্যাপী ট্রেনের টিকেট বিক্রি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিনেই বাসের বেশিরভাগ টিকেট শেষ হয়ে যায়। লঞ্চের কেবিনের টিকেটও পাননি সাধারণ যাত্রীরা। এ বছর মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে না। পূর্বাঞ্চল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা সরাসরি টিকেট সংগ্রহ করে যেতে পারবেন। ২০ জুন থেকে অগ্রিট টিকেট বিক্রি শুরু করবে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি।
×