ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আষাঢ়ের প্রথম সকালে বহুমাত্রিক পরিবেশনায় বর্ষবরণ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১৬ জুন ২০১৭

আষাঢ়ের প্রথম সকালে বহুমাত্রিক পরিবেশনায় বর্ষবরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আষাঢ় মাসের প্রথম দিনের সকাল। তাই বলে অঝোর ধারায় ঝরেনি বৃষ্টি। মাঝে মাঝে আকাশজুড়ে ছিল মেঘের আনাগোনা। আর এমন দিনে বিনা বরিষণেই হয়ে গেল রূপময় ঋতু বর্ষার উদ্্যাপন। বর্ষা বন্দনায় বহুমাত্রিক পরিবেশনায় উৎসবমুখর হলো বাংলা একাডেমি আঙ্গিনা। নজরুল মঞ্চে ভেসে বেড়াল মেঘ-বৃষ্টির কথা বলা গানের সুর। নাচের ছন্দে ও কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে ধরা দিল বর্ষা। নৃত্য-গীত ও কবিতার সম্মিলনে এ বর্ষাবরণের আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঢাকা মহানগর সংসদ। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে বর্ষামঙ্গল নামের আয়োজনে হাজির হয়েছিল সংস্কৃতিপ্রেমী শহরবাসী। তাদের আলোড়িত মননের সঙ্গে পোশাকেও ছিল বর্ষাবরণের আবহ। প্রতি বছর উদীচী বর্ষা উৎসব পালন করলেও এবার রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে প্রাণ হারানো মানুষের স্মরণে পরিবর্তিত হয় উৎসবের শিরোনাম। নিহতসহ সবার মঙ্গল কামনায় অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয় বর্ষামঙ্গল। আগের রাতের বৃষ্টিজনিত কারণে সকালে উৎসব প্রাঙ্গণের কিছু স্থানে জমে থাকা জলের দেখা মেলে। সেই জলকে উপেক্ষা করে পাহাড় ধসে নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বাঁশির সুরে শুরু হয় পরিবেশনাপর্ব। বংশীবাদক শেখ আবু জাফরের বাঁশিতে উঠে আসে ‘মেঘ মেদুর বর্ষায় কোথা তুমি/ফুল ছড়ায়ে কাঁদে বনভূমি’ গানের সুর। প্রখর খরতাপহীন সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশে বাঁশির সুরেলা শব্দধ্বনি মুগ্ধতা ছড়ায় দর্শক-শ্রোতার অন্তরে। এরপর ‘নীল অঞ্জন ঘন কুঞ্জ ছায়ায়’ গানের সুরে একক নৃত্য পরিবেশন করেন বেনজীর আহমেদ লিয়া। বর্ষাকে স্বাগত জানিয়ে কবিতা পাঠ করেন বাচিকশিল্পী ডালিয়া আহমেদ। আবৃত্তি শেষে নাচ নিয়ে মঞ্চে আসেন অনিক বসুর পরিচালনায় স্পন্দনের একঝাঁক শিল্পী। ‘মেঘের পালক’ গাানের সুরে পরিবেশিত হয় সম্মেলক নৃত্য। এরপর একক কণ্ঠে শিল্পী বিমান চন্দ্র বিশ্বাস পরিবেশন করেন ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে’ গানটি। এরপর আবৃত্তি নিয়ে উপস্থিত হন বাচিকশিল্পী বেলায়েত হোসেন। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেনের গ্রন্থনায় গীতি আলেখ্য ‘বিহ্বল বর্ষায়’ পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। নাচ-গান ও আবৃত্তির সমন্বয়ে রচিত গীতি-নৃত্যালেখ্যে প্রকাশিত হয় বর্ষার নানা রূপ। এরপর মঞ্চে দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করেন উদীচী কাফরুল শাখা, স্বপ্নবীণা এবং উদীচী মিরপুর শাখার শিল্পীরা। ইকবাল খোরশেদের কবিতা আবৃত্তি শেষে একক কণ্ঠে গান শোনান শামীম আল মামুন, সাজেদা বেগম সাজু, অবিনাশ বাউল, মায়েশা সুলতানা ঊর্বি ও জাকির হোসেন। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রহমান মুফিজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় বর্ষাকথন। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সহ-সভাপতি একরাম হোসেনের সভাপতিত্বে এ পর্বে অংশ নেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। এ পর্বে বর্ষাকথন পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম আর বর্ষা ঘোষণা পাঠ করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ভুক্ত দফতরের মধ্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বৃহস্পতিবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ১৭টি দফতর বা সংস্থার মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খানসহ বিভিন্ন দফতরের পক্ষে এর প্রধানগণ স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মসিউর রহমান, অতিরিক্ত সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব সামছুন্নাহার বেগম, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন, গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার, নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা, গ্রন্থাগার ও আর্কাইভস্ অধিদফতরের পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান আল-মামুন, লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান বলেন, আজ এ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর দফতর/সংস্থাসমূহের যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো তা একটি তাৎপর্যময় ঘটনা। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি আধুনিক ও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি, সে স্বপ্ন পূরণের পথে এ চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগত কৌশল। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা আনয়নে এ চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতা বাড়াতেও এ চুক্তি সাহায্য করবে।
×