ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লন্ডনে ২৭ তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, প্রাণহানি ১২

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৫ জুন ২০১৭

লন্ডনে ২৭ তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, প্রাণহানি ১২

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পশ্চিম লন্ডনে লাটিমার রোডের একটি বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন লন্ডন পুলিশপ্রধান স্টুয়ার্ট কান্ডি। নর্থ কেনসিংটনে গ্রেনফেল টাওয়ার নামের এই আবাসিক ভবনটিতে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত একটা ১৫ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ভবনটিতে বহু মানুষ আটকা পড়ে আছে। আগুন লাগার সময় ভবনটিতে কয়েক শ’ লোক ছিল। এদের বেশিরভাগই ছিল ঘুমন্ত। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০০ দমকলকর্মী কাজ করে। ভবনটি যেকোন মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২৭তলা এ ভবনে অন্তত ১২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। লন্ডন দমকল বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, আগুন লাগার পর এ পর্যন্ত ৭০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে ভবনটিতে আগুন লাগার কারণ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। এই ভবনের আগুন কয়েক মাইল দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ভবনের বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত ৪০টি ফায়ার ব্রিগেড কাজ করে। লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের সহকারী প্রধান ডেন ডেনি বলছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ। এমন জটিল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অনেক বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। আগুনের কারণে লন্ডন পাতাল রেলের হ্যামারস্মিথ এবং সিটি ও সার্কেল লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলের পাশে থাকা অভিনেতা টিম ডাউনি বলেন, এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। পুরো ভবনেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। এখন সময়ের ব্যাপার, যেকোন মুহূর্তেই ভবনটি ধসে পড়বে। দমকল বাহিনীর পক্ষ থেকে টুইটারে বলা হয়েছে, ২৭তলা ভবনের দ্বিতীয়তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভবনটি ১৯৭৪ সালে নির্মিত হয়। একটি বাংলাদেশী পরিবার নিখোঁজ লন্ডনে বহুতল যে ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সেখানে বসবাসরত একটি বাংলাদেশী পরিবারের খোঁজ মিলছে না। অগ্নিকাণ্ডস্থল গ্রেনফেল টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে কমরু“ মিয়া, তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে থাকতেন। পশ্চিম লন্ডনে ১৯৭৪ সালে নির্মিত ২৪ তলা এই ভবনে দেড় শ’র মতো আবাসিক ফ্ল্যাট ছিল। ১৪২ নম্বর ফ্ল্যাটে কমরু পরিবার থাকতেন বলে তার স্বজনরা জানান। মঙ্গলবার রাতে ওই ভবনটিতে আগুন লাগে; তা নেভাতে বুধবার দুপুর গড়িয়ে যায়। কমরু মিয়ার ভাতিজা যুক্তরাজ্যেরই চেলসির বাসিন্দা আবদুর রহিম বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগুন লাগার পর রাতে তার চাচাত বোনের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়েছিল। তখন তিনি বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে তানিমার (হাসনা বেগম তানিমা) সঙ্গে শেষ কথা হয়। তার আকুতি এখনও আমার কানে ভাসে। সে বলছিল, আমরা সবাই এখন বাথরুমে, আমাদের বের হওয়ার কোন উপায় নেই, দোয়া করেন আমাদের যেন কষ্টে মৃত্যু না হয়। আগামী ২৯ জুলাই তানিমার বিয়ের দিন ঠিক ছিল জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রহিম বলেন, এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল আমাদের। বিয়ের পর বাংলাদেশেও তাদের যাওয়ার কথা ছিল। তানিমার হবু বর ব্রিটিশ যুবক লেস্টারও অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতে গ্রেনফেল টাওয়ারে ছুটে আসেন বলে জানান রহিম। মৌলভীবাজারের কৈয়াছড়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী কমরু“ মিয়া বছরখানেক আগে সপরিবারে গ্রেনফেল টাওয়ারে উঠেছিলেন। শেখ হাসিনার দুঃখ প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনের বহুতল ভবনে অগ্নিকা-ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে এমপির কাছে পাঠানো এক বার্তায় পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় তার দুঃখ ভারাক্রান্তের কথা উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমি গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। ফায়ার সার্ভিসের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় এ দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস পাবে বলে বার্তায় এই কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তিনি এই সঙ্কটকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে সমভাবে ব্যথিত।
×