ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৩ জুন ২০১৭

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ রমজানুল মোবারকের আজ ১৭তম দিবস। পবিত্র মাহে রমজানের এ অখ- সিয়াম সাধনার সময় প্রকৃতই ধর্ম ও জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি ও অনুশীলনের। ইদানীং সকালবেলার মক্তবের গুরুত্ব কমে যাওয়াতে সারা বছর আমাদের শিশুরা কুরআন তিলাওয়াত ও এর নিত্য আমল থেকে গাফিল হয়ে পড়েছে। ধর্মীয়ভাবে এ অবস্থা খুবই মারাত্মক। শুধু রমজান এলেই কোন কোন পরিবার সন্তানদের তিলাওয়াত শিক্ষায় উজ্জীবিত করে। আমাদের বোঝা দরকার একটি সন্তানকে কুরআনের প্রাথমিক তিলাওয়াত ও আদব শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা মানেই তার ধর্মীয় শিক্ষার মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া। আমরা জানি ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য এবং মানব জাতির জন্য কল্যাণকর একমাত্র প্রমাণসিদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ও সর্বাধুনিক জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। এজন্য শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামের সঠিক ও সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামী শিক্ষা শুধু বৈষয়িক কিংবা কোন ধর্মীয় শিক্ষা নয়। গোটা মানব জাতির সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা তথা পার্থিব ও বৈষয়িক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যে শিক্ষা গ্রহণ করা অপরিহার্য, সে শিক্ষাকে যদি ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে পরিবেশিত করা হয়, তা’হলেই সেটা ইসলামী শিক্ষা। ইসলামী শিক্ষা একটি সমন্বিত শিক্ষা। এটি পুরোপুরি অহিভিত্তিক। এ শিক্ষা যার কাছে বা যার ঘরে থাকবে সে প্রকৃত দ্বীনদার। ইসলামের প্রথম বাণী: পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, মানবজাতিকে জমাট বাঁধা রক্ত থেকে। পাঠ কর তোমার পালনকর্তা মহাদয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। Ñ(সূরা আলাক ১-৫)। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ যেমনিভাবে আমি তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্যে থেকেই রাসূল প্রেরণ করেছি, যিনি তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করছেন, তোমাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করছেন আর তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন কিতাব ও হিকমাহ। আর সেসব বিষয় যা তোমরা জানতে না। Ñ(সূরা বাকারা: ২ : ১৫১)। হালাল উপার্জনে উৎসাহিত করা ও আত্মকর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্মসংস্থানে সক্ষম করে গড়ে তোলা ইসলামী শিক্ষার অন্যতম বড় উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা যেমন বান্দাকে সালাত, সওম ও অন্যান্য ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন। তেমনি তিনি জীবিকা উপার্জনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) হালাল জীবিকা উপার্জনকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন : ‘হালাল জীবিকা উপার্জন ফরযের পরও একটি ফরজ।’ (বাইহাকী)। রাসূলুল্লাহ (স.) আত্মকর্মসংস্থানের প্রতি খুবই তাকিদ দিয়েছেন। তিনি আরও ঘোষণা করেছেন: তোমরা ফজরের সালাত আদায় করার পর তোমাদের জীবিকার সন্ধান না করে ঘুমিয়ে যেওনা। প্রকৃত শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শ ছাড়া সৎভাবে জীবন যাপন কখনও সম্ভব নয়। তাই মহানবী (স.) শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। তার পরিবার ও সমাজকে করেছিলেন পাঠশালায় রূপান্তর। রমজান মাসে তার এ প্রয়াস বৃদ্ধি পেত মুষলধারে বৃষ্টির ন্যায়। হযরত মুহম্মদ (স.) নবুয়াত লাভের পর থেকে তার গৃহকে শিক্ষাগার হিসেবে প্রস্তুত করেন। নবী করীম (স.) নিজে লোকদের শিক্ষা দিতেন। তার স্ত্রী খাদীজা (রা:) আজীবন শিক্ষা দিয়েছেন। তার ইন্তেকালের পর মদিনায় তার স্ত্রীদের গৃহে নারীদের শিক্ষা দানের জন্য ছিল উন্মুক্ত। হযরত আয়েশা (রা:), হাফসা (রা:) উম্মে সালমা (রা:) নারীদের মাঝে শিক্ষা দান কাজে ব্যস্ত ছিলেন। নবুয়াত লাভের প্রাথমিক পর্যায় মক্কায় নিরিবিলি স্থানে অবস্থিত হযরত আরকাম (রা:)-এর বাড়িকে একটি শিক্ষায়তনে পরিণত করেন। হিজরতের পর মদিনায় মসজিদে নববীকে শিক্ষার মহাকেন্দ্র বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ দেয়া হয়। মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে ‘সুফ্ফা’ নামে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়েও গড়ে তোলা হয়। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স:) নিরক্ষরতা দুরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারে এত গুরুত্ব দিতেন যে, বদরের শিক্ষিত যুদ্ধ বন্দীদের মুক্তিপণ নির্ধারণ করেছিলেনÑ কয়েকজন নিরক্ষর মুসলিমকে শিক্ষা দান করার মাধ্যমে। তখনও ছিল রমজান মাস। আজকের মুসলিম সমাজ শিক্ষা-দীক্ষায় আবার পিছিয়ে। এ রমজানে বিষয়টি অনুধাবন করে আমাদের বেশি বেশি করে কুরআন হাদিস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নে সময় দেয়া উচিত।
×