ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর খাদ্যগুদামে গম সরবরাহ সিন্ডিকেটের কবলে

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১০ জুন ২০১৭

রাজশাহীর খাদ্যগুদামে গম সরবরাহ সিন্ডিকেটের কবলে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে কৃষকের নামে খাদ্যগুদামে গম সরবরাহের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। নিজ নিজ এলাকায় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বাইরে থেকে গম এনে গুদামে দিচ্ছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় গমের আবাদ হয়েছিল এক লাখ ৯ হাজার ১৫৬ হেক্টর। এ থেকে গম উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ১৮৪ টন। এ অঞ্চলে কৃষি উপকরণ সহায়তা পাওয়া কৃষক রয়েছেন ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৪ জন। এদের একটি অংশ এ বছর গম চাষ করেন। তবে খাদ্যগুদামে গম সরবরাহের সুযোগ পাননি তারা। তাদের নামেই গম সরবরাহ করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্র জানিয়েছে, এ বছর রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় সরকারী উদ্যোগে ৩৪ হাজার ৪৬৯ টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৫ হাজার ৩৩১, নাটোরে ৪ হাজার ৮১৯, নওগাঁয় ৬ হাজার ৩৯৯, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬ হাজার ৮৬০, পাবনায় ৮ হাজার ৪৪৮, সিরাজগঞ্জে এক হাজার ৪৯০, বগুড়ায় ৫৪৪ এবং জয়পুরহাটে ৪৭২ মেট্রিক টন। জানা গেছে, শুক্রবার পর্যন্ত বিভাগজুড়ে মাত্র ১৬ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৩ শতাংশ গম সংগ্রহ হয়েছে চাঁপানবাবগঞ্জে। আঞ্চলিক খাদ্য দফতরের কর্মকর্তারা জানান, নীতিমালা অনুযায়ী এ বছরও কৃষকের কাছ থেকে গম কেনার কথা। এ বছর প্রতি কেজি গমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা। এপ্রিলের ১৮ তারিখ থেকে গম ক্রয় শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। আরও জানা গেছে, এখনকার বাজারে প্রতি কেজি গমের দর ২০ টাকা। কেজিতে আট টাকা লাভে বাইরে থেকে কেনা গম খাদ্যগুদামে সরবরাহ করছেন স্থানীয় নেতা ও ব্যবসায়ীরা। তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিচ্ছেন খাদ্যগুদামের কর্মকর্তারা। প্রতি বস্তায় কমিশন পাচ্ছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, আগেভাগেই গোপন বৈঠক করে গম কেনায় নেমেছে চক্রটি। খাদ্যগুদামগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নেতা ও ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করেছেন কৃষকের কৃষি ভর্তুকির কার্ড। কৃষি ভুর্তকি কার্ডে সংশ্লিষ্ট কৃষকের স্বাক্ষর এর সঙ্গে ওজনমান ও মজুত ফরমের স্বাক্ষরের কোন মিল নেই। সেটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই সংগ্রহ হচ্ছে নিম্নমানের গম। রাজশাহীর গোদাগাড়ী খাদ্যগুদামে ৯৭০ টন এবং ওই উপজেলার কাঁকনহাট খাদ্যগুদামে ৩২৯ টন গম কেনার কথা। তবে কৃষকদের গম ছাড়াই পূরণ হওয়ার পথে সেই লক্ষ্যমাত্রা। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মিলে কৃষকদের নামে সেই গম সরবরাহ করেছেন বলে জানা গেছে। দিনাজপুর থেকে নি¤œমানের গম এনে দেয়া হয়েছে গুদামে। ওই নেতারা গম দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও সত্যতা স্বীকার করেন গোদাগাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শিহাবুল ইসলাম। তিনি দাবি করেন, কয়েক কৃষক পঞ্চগড়-দিনাজপুর থেকে এনে গুদামে গম দিয়েছেন। রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি দফতর থেকে পাওয়া কৃষক সহায়তার কার্ড দেখেই খাদ্যগুদামগুলোয় গম কেনা হয়। গম কেনার সময় মিলিয়ে দেখা হয় কৃষকের নাম-স্বাক্ষরসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। শেষে গমের মূল্য পরিশোধ করা হয় কৃষকের ব্যাংক হিসেবে। কৃষকের নামে কেউ গম সরবরাহ করলে তাও বোঝার উপায়ও নেই বলে স্বীকার করেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। গম ক্রয়ে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
×