ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মলয় বিকাশ দেবনাথ

তৃতীয় কপ্পলা

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৮ জুন ২০১৭

তৃতীয় কপ্পলা

গডফাদার সিনেমা খ্যাত অষ্কারজয়ী নির্দেশক ফ্র্যাঞ্চাইজ ফোর্ড কপ্পলার পিতা ছিলেন বিখ্যাত বংশীবাদক ও মিউজিক কম্পোজার কার্মাইন কপ্পলা যিনি নিনো রোটার সঙ্গে যৌথভাবে চলচ্চিত্রে মিউজিক কম্পোজের জন্য অষ্কার জিতেছিলেন। ইতিহাসে হাষ্টন পরিবারের পর কপ্পলা পরিবার তিন পুরুষ অষ্কার লাভ করেন। ফ্র্যাঞ্চাইজ ফোর্ড কপ্পলার মেয়ে সফিয়া কপ্পলা অষ্কার জয়ের পর কান চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৭তে তিনি তার ‘বি গাইল্ড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা নির্দেশকের পুরস্কার জিতে নেন যা ৭০ বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী নির্মাতা। এর পূর্বে ১৯৬১ সালে রাশিয়ান নারী নির্মাতা জুলিয়া সলন্তসেভা তার ‘ক্রানিক্যাল অব ফ্লেমিং ইয়াস’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা নির্মাতা পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। সফিয়া ১৯৭১ সালের ১৪ মে নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রযোজক ও চিত্রনাট্য লেখক ফ্রাঞ্চি ফোর্ড কপ্পলা। আর মাতা অভিনেত্রী ইলেনর কপ্পলা। সফিয়া ১৫ বছর বয়সে নিজেকে মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েট শেষ করে ‘মিল্কফেড’ নামে একটি দামী ব্র্যান্ডের কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। সেটি এখন জাপানে খুব সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করছে। কপ্পলার মিডিয়াতে শুরুটা ছিল অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তার বাবার সেরা নির্মাণ ‘দ্যা গডফাদার’ ছবিতে কপ্পলা শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেন। এরপর পার্ট টুতে অভিবাসী কিশোরী হিসেবে এবং গডফাদার পার্ট থ্রিতে মাইকেল কর্লিয়নীর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর তিনি তার বাবার নির্মিত ছবি ‘দ্যা আউট মাইডাস’ (১৯৮৩), রাম্বল ফিশ (১৯৮৩), দ্যা কটন ক্লাব (১৯৮৪) ইত্যাদি সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ফ্র্যাঙ্কেন উইনি’ মুভিতে সফিয়া অভিনয় করেছিলেন যা তার পিতার নির্মিত ছিল না। এরপর তিনি ১৮ বছর বয়সে তার বাবার সঙ্গে ‘লাইফ উইদাউট জু’ নামে একটি শর্ট ফিল্মের স্ক্রিপ্ট নির্মাণ করেন এবং এর নির্দেশনা দেন। এরপর থেকেই অভিনয়ের প্রতি থেকে বেশি আনন্দবোধ করতে লাগল পেছনে কাজ করতে। এর মধ্যে তিনি কিছু মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেন যার মধ্যে ‘দ্যা ব্ল্যাক ক্রউজ, সামটাইমস সলভেশন, মাইলড্রেড পিয়াস, ম্যাডোনার ডিপার এ্যান্ড ডিপার, দ্যা কেমিক্যাল ব্রাদার্স, ইলেক্ট্রোব্যাংক অন্যতম। এরপর ১৯৯৮ সালে সফিয়া ‘লিক দ্যা স্টার’ নামক শর্টফিল্ম নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু করেন তার একক চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং এটি বহুবার ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম চ্যানেলে প্রচারিত হয়। পরের বছরই নির্মাণ করেন ‘দ্যা ভার্জিন সুইসাইড’ যা ২০০০ সালে উত্তর আমেরিকার সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে জায়গা করে নেয়। ২০০৩ সালে তার দ্বিতীয় বাণিজ্যিক ছবি ‘লস্ট ইন ট্রান্সলেশন’ মুক্তি পায় এবং চিত্রনাট্যের জন্য একাডেমি এ্যাওয়ার্ড পায় সেই সঙ্গে তিনটি শাখায় গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড পায়। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। কপ্পলা একাডেমি এ্যাওয়ার্ডের জন্য ৩য় নারী নির্দেশক হিসেবে মনোনীত হয়। ২০০৩ সালের এই সাফল্যের জন্য তাকে ৩য় প্রজন্মের অস্কার উইনার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর ২০০৪ সালে সফিয়া কপ্পলা ডাক পায় ‘একাডেমি অব মোশন পিক্সচার আর্টস এবং সাইন্সেস’-এ কাজ করার জন্য। তিনি ৩য় সিনেমাটি নির্মাণ করেন একজন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদের জীবনী নিয়েÑ যার নাম ছিল ‘বায়োপিক মেরি এন্টোনিট।’ ২০০৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই চলচ্চিত্রটি স্থান পেয়েছিল। পরবর্তীতে ২০১০ সালে নির্মাণ করেন ‘সামহোয়্যার’ যা ১১ সেপ্টেম্বর ২০১০ এ ভেনিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভল থেকে সেরা পুরষ্কার হিসেবে “গোল্ডেন লায়ন” পুরষ্কার জিতে নেন। এছাড়াও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন দ্যা ব্লিংরিং (২০১৩), দ্যা লিটল মারসেইড (২০১৪), এ ভেরি মেরি ক্রিসমাস (২০১৫)। নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি মডেলিং ও করেন । ২০১৬ সালের মে মাসে জানা যায়, তিনি ইতালির ‘টিয়েট্রো নাজিনেইল ইন রোম’ নামক একটি থিয়েটার গ্রুপের জন্য ‘লা ট্রাভিয়াটা’ নামক একটি মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা দিচ্ছেন।
×