ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নিহত ১২ ;###;আইএসের দায় স্বীকার ও রক্তাক্ত ভিডিও প্রকাশ

এবার তেহরানে হামলা ॥ খোমেনির মাজারে আত্মঘাতী নারী, পার্লামেন্ট ভবনে এলোপাতাড়ি গুলি জঙ্গীদের

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৮ জুন ২০১৭

এবার তেহরানে হামলা ॥ খোমেনির মাজারে আত্মঘাতী নারী, পার্লামেন্ট ভবনে এলোপাতাড়ি গুলি জঙ্গীদের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ এবার সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলায় কাঁপল ইরান। বুধবার দেশটির রাজধানী তেহরানের পার্লামেন্ট ভবন ও ইসলামী বিপ্লবের জনক আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে হামলা চালায় জঙ্গীরা। একই সময়ে তেহরানের একটি মেট্রো স্টেশনে জঙ্গী হামলার চেষ্টা চলে। অবশ্য নিরাপত্তা বাহিনী মেট্রো স্টেশনে এই হামলা চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে এদের আটক করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসব হামলায় ১২ জন নিহত ও বহুলোক আহত হয়েছে। ইসলামিক স্টেট আইএস এসব জঙ্গী হামলার দায় স্বীকার করেছে। ইরানের অভ্যন্তরে এটি প্রথম ইসলামিক স্টেটের বড় কোন সন্ত্রাসী হামলা। খবর আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি ও গালফ নিউজের। খবরে বলা হয়েছে, চার বন্দুকধারী বুধবার সকালে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। এদের একজনের হাতে পিস্তল ও বাকিদের হাতে একে-৪৭ রাইফেল ছিল। গুলি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের সব দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং নিরাপত্তারক্ষীরা একজন হামলাকারীকে ঘিরে ফেলে। এর ৩০ মিনিট পর ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়া আয়াতুল্লাহ খোমেনির মাজারে হামলা হয়। এখানে আসা দর্শনার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয় এবং অপর একজন নারী জঙ্গী আত্মঘাতী হামলা চালায়। পুলিশের গুলিতে একজন হামলাকারী নিহত হয়। এবং কয়েক হামলাকারীকে পুলিশ আটক করেছে। ইরানে এসব হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মস্কো এই ধরনের হামলার কঠোর নিন্দা জানায়। পেসকভ বলেন, এই ধরনের হামলায় এটা স্পষ্ট যে আইএসের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরী। ইরানের ডেপুটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন মহিলাদের ছদ্মবেশে অস্ত্রধারীরা পার্লামেন্টের ভেতরে ঢুকে গুলি করা শুরু করে। এদের একজন শরীরে বাঁধা বোমার বেল্টের বিস্ফোরণ ঘটায়। তিনি বলেন, পুরো পার্লামেন্ট ভবন এখন ঘিরে রাখা হয়েছে। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে থেকে ধারণ করা ভিডিওতে প্রচ- গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সেখানে একজন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ তেহরানে খোমেনির মাজারে হামলায় কয়েকজন আহত হয়েছে। একজন আত্মঘাতী হামলাকারী ও কয়েকজন বন্দুকধারী সেখানে হামলায় অংশ নেয়। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে পার্লামেন্ট ভবনে ঠিক কী ঘটছে সে সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন খবরে বলা হচ্ছে সেখানে একটি আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। বন্দুকধারীরা সেখানে লোকজনকে জিম্মি করেছে। কিন্তু বিবিসি এখনও কোন সূত্র থেকে এসব খবরের সত্যাতা যাচাই করতে পারেনি। ইরানের একজন এমপি সৈয়দ হোসেইন নাকভি হোসেইনি বলেছেন, পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে এখনও তিন বন্দুকধারী রয়েছে। ইরানের পার্লামেন্টের সদস্য ইলিয়াস হযরতি বলেছেন, একজন হামলাকারী পার্লামেন্ট ভবনের চতুর্থ তলায় আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। এদিকে বুধবারের এই হামলার পর ইরানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে রাস্তায় নেমে শোক প্রকাশ করেছে। আর জনসাধারণকে চলাচলের সময় সতর্ক থাকতে বলেছে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক সাংবাদিক বলেন, পার্লামেন্টে যখন গুলি শুরু হলো তখন আমি পার্লামেন্টের ভেতরেই ছিলাম। সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি দেখলাম দুইজন লোক নির্বিচারে গুলি করছে। তেহরানের গবর্নর হোসেইন হাশেমি বলেন, মানুষের ওপর গুলি চালানোর পর মাজারের হামলাকারী সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া হামলাকারীদের একজন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ও বাকিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার ইরানের এসব হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে আইএস। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক বুধবার জানায়, ‘ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা খোমেনির মাজার এবং ইরানের পার্লামেন্ট ভবনে হামলা করেছে। বিবৃতির পাশাপাশি এসব হামলার একটি রক্তাক্ত ভিডিও প্রকাশ করেছে আইএস। আইএস যেভাবে টার্গেট করছে ইরানকে ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর বুধবার এযাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয় ইরানে। এই ঘটনায় ইরানের সাধারণ মানুষ এক বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য অনেক দেশের তুলনায় ইরানের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত এবং স্থিতিশীল। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সিরিয়া এবং ইরাকে সক্রিয়ভাবে লড়াই করছে ইরান। কিন্তু ইসলামিক স্টেট বুধবারের আগে পর্যন্ত ইরানের ভেতর এ রকম কোন সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারেনি। এর একটা কারণ হয়তো ইরানের শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের ঢোকার কোন রাস্তা ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী ফার্সি ভাষায় তাদের প্রচার জোরদার করে। এরা টার্গেট করেছিল ইরানের সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলিমদের। ইরানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করেছে যে ইসলামিক স্টেটের মদদে ইরানের ভেতরে কিছু হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেগুলো তারা ভ-ুল করে দেয়। ইসলামিক স্টেট কিছু প্রোপাগান্ডা ভিডিও ছেড়েছিল যেগুলোতে ইরানের ভেতর হামলায় উস্কানি দেয়া হয়। ডকুমেন্টারি স্টাইলে তৈরি করা আইএসের এক ভিডিওতে কিছু জঙ্গীকে দেখানো হয় যাদের ইরানী বলে পরিচয় দেয়া হচ্ছে। এরা ইরাকে আইএসের বিভিন্ন ঘাঁটিতে কাজ করছে। এসব জঙ্গীকে ফার্সি ভাষায় ইরানের সরকার এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনিসহ ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করতে দেখা যায়। আইএস এবং এর আগে আরেক সুন্নি জিহাদী গোষ্ঠী আল কায়েদা অতীতে ইরানকে টার্গেট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সফল হয়নি। কিন্তু বুধবারের হামলার পর আইএস হয় তো দাবি করতে পারে যে এক্ষেত্রে তারা এবার সফল হয়েছে।
×