ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে মুড়িতে মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া-হাইড্রোস

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৬ জুন ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ে মুড়িতে মেশানো হচ্ছে ইউরিয়া-হাইড্রোস

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৫ জুন ॥ সদর উপজেলা হরিনারায়ণপুর এলাকার হাতে মুড়ি তৈরির কারিগর মেঘলা রানী। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, মেশিনে ভাজা মুড়িকে আকর্ষণীয় ও আকারে বড় করতে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে ক্ষতিকারক হাইড্রোস। আর এ অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না ওই গ্রামের মেঘলার মতো পাঁচ শতাধিক নারী মুড়ি ব্যবসায়ী। তাই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে অনেকেই। অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসেই মুড়ির চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের হাতে ভাজা মুড়ির গ্রাম হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ির এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভোরে মুড়ি ভাজার কাজ শেষ করেই পায়ে হেঁটে মাথায় মুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এ গ্রাাম ও গ্রামে কেউবা আবার শহরে। একই গ্রামের মুড়ি ব্যবসায়ী কাকুলি রানী বলেন, রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক। কিন্তু পুঁজির অভাবে ঠিকমতো মুড়ি সরবরাহ করতে পারছি না। মিনতি রায় জানান, ভোর থেকে মুড়ি ভাজেন, সকাল সাড়ে ৬টায় বাড়ি থেকে বের হন। শহরের বিভিন্ন পাড়া, মহল্লায় মুড়ি বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু পুঁজির অভাব ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না এ গ্রামের নারীরা। তাদের হাতে তৈরি ভেজালমুক্ত মুড়ির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছে না তারা। কেউ কেউ ব্যবসায় টিকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে গেছে। মেশিনে যারা মুড়ি ভাজে তারা হাইড্রোস মিশিয়ে মুড়ি বড় ও সাদা করে কম দামে বিক্রি করে। এতে খরচ এবং পরিশ্রম উভয়ই কম। তাই এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেকা কষ্টকর। গোপাল ঘোষ বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ি, লাহিড়ী হাট থেকে মুড়ি এনে শহরের চাহিদা মেটানো হয়। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করি। তিন থেকে চারদিন মুড়ি বিক্রি করে লাভ হয় ৫৫০ টাকা। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছেÑ ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এদিকে রজমানকে সামনে রেখে মুড়ির কারখানাগুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক হাইড্রোস। এতে মুড়ি আকারে বড় হয় পাশাপাশি সাদাও হয়। মানবদেহের জন্য এটি ক্ষতিকারক জেনেও ব্যবসা করার জন্যই তা মেশাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরীর দুটি মুড়ির কারখানাতেই দেদার মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া এবং হাইড্রোস। ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরীর এক মুড়ি কারখানা মালিক রবিউল জানান, মুড়িতে হাইড্রোস মেশানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু জনসাধারণ পরিষ্কার মুড়ি ও আকারে বড় না হলে কিনছে না। তাই হাইড্রোস মেশানো হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও স্যানিটারি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, মুড়িতে হাইড্রোস মেশানোর কথা শুনেছি। মুড়িতে হাইড্রোস মেশালে মুড়ি সাদা ও আকারে বড় হয়। এই হাইড্রোস মেশানো কারখানাগুলোতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান চালানোর খবর আগেই কারখানায় চলে যায়। পরে মোবাইল কোর্টের লোকজন সেখানে গিয়ে হাতেনাতে প্রমাণ পায় না বলে তিনি জানান।
×