ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের টিকে থাকার লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৫ জুন ২০১৭

বাংলাদেশের টিকে থাকার লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ লন্ডন থেকে ॥ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি লন্ডনের কেনিংটন ওভালে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হবে। ম্যাচটি লন্ডনের সময় অনুযায়ী দিবারাত্রির ম্যাচ। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেবে। তাই এই ম্যাচ বাংলাদেশের সামনে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার লড়াই হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করেও হেরেছে বাংলাদেশ। সেটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচ। বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ৮ উইকেটে হেরেছে। ম্যাচটিতে হেরে এমনিতেই টুর্নামেন্ট থেকে পিছিয়ে পড়েছে। তবে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ৯ জুন কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে সেমিফাইনালে উঠে যাবে মাশরাফিবাহিনী। কিন্তু আজ হারলেই বিদায় ঘটবে। ইংল্যান্ডের কাছে হেরেই পয়েন্ট তালিকায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশসহ স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড আছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতায় এই গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার সবার ওপরে আছে ইংল্যান্ড (২ পয়েন্ট)। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দুই দলই ১ পয়েন্ট করে পেয়েছে। দুই দলই সমান অবস্থানে আছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ সবার নিচেই আছে। বাংলাদেশের পয়েন্ট তালিকায় কোন পয়েন্ট এখনও যে যোগ হয়নি। আজ যদি বাংলাদেশ জিতে তাহলে পয়েন্ট যোগ হবে। সঙ্গে সেমিফাইনালে ওঠার একটা সুযোগও থাকবে। নয়ত বিদায় ঘটবে। আজ বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ শেষে সামনে এই গ্রুপে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড খেলা আছে। এরপর নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া খেলা আছে। যদি আজ বাংলাদেশ হেরে যায় তাহলে বিদায় নেবে; কারণ অস্ট্রেলিয়ার ৩ পয়েন্ট হয়ে যাবে। বাংলাদেশ শেষ ম্যাচটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও তখন কোন লাভ হবে না। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচ যে আছে। যে দলই জিতুক তখন বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পয়েন্টই থাকবে। আজ হেরে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতলেও ২ পয়েন্ট হবে। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ইংল্যান্ড জিতলে হবে ৪ পয়েন্ট। আর নিউজিল্যান্ড জিতলে হবে ৩ পয়েন্ট। তার মানে আজ হারলেই বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত। কোনভাবেই বিদায় ঠেকানো যাবে না। তখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি হয়ে যাবে আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে আজ জয় ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা নেই। অবশ্য দলটি অস্ট্রেলিয়া বলেই বাংলাদেশ জিতবে, এমন আশা করা যাচ্ছে না। দলটি খুবই শক্তিশালী। এরআগে সাতবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়েছে। সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০০৬ ও ২০০৯ সালে টানা দুইবার শিরোপা জিতেছে দলটি। দুইবার ফাইনালে খেলেছে। দুইবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ভারতও দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে একবার যুগ্মচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এককভাবে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দলটি এখন পর্যন্ত একবারই শুধু গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। সেবারও অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপে ছিল ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড এবং উপমহাদেশের দল শ্রীলঙ্কা। সেবারও খেলা হয়েছিল ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসেই। এবার শ্রীলঙ্কার জায়গায় বাংলাদেশ যোগ হয়েছে। ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে অস্ট্রেলিয়ার খুব ভাল অবস্থান নেই। তবে ২০০৪ সালে যখন ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়, তখন সেমিফাইনালে খেলে অস্ট্রেলিয়া। এবার তৃতীয়বারের মতো ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হচ্ছে। এ আসরে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলছে। যদিও প্রথম ম্যাচটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দলটি হারের মুখে পড়েও বৃষ্টির জন্য বেঁচে গেছে। তবে দলটি যে কোন সময় ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। একটি জয় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের ভেতর অনেক আত্মবিশ্বাস এনে দিতে পারে। সেই আত্মবিশ্বাসেই তারা শিরোপায় ছোঁয়াও দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এখন থেকে সব ম্যাচকেই ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করছেন। বলেছেন, ‘আমরা টুর্নামেন্ট জিততে চাই। জিততে হলে এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই জিততে হবে। প্রতিটি ম্যাচই আমাদের ফাইনাল।’ স্মিথ শিরোপায় দৃষ্টি দিচ্ছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে সেখানে ভাবনাই নেই। ভাবনা একটাই যেভাবেই হোক জিততে চান। বাংলাদেশ কী করবে? ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর প্রেরণা আছে। তবে সেটি বহু বছর আগে। স্মৃতি এখনও সুমধুর। এ একটিবারই যে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো গেছে। কিন্তু সেই স্মৃতি নিয়ে কি আর বসে থাকলে চলবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বসেও নেই। দলের একটিই লক্ষ্য। সুযোগ পেলেই জয় তুলে নেয়া। সেটি অবশ্য অনেক কঠিন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এরআগে যে চারবার খেলেছে বাংলাদেশ, খুব ভাল কোন ফল পাওয়া যায়নি। ২০০০ সালে প্রথমবার একটিমাত্র ম্যাচ খেলতে পারছে। বাছাইপর্ব খেলেছে। ২০০২ ও ২০০৪ সালে সরাসরি টুর্নামেন্টে খেললেও গ্রুপ পর্বই অতিক্রম করতে পারেনি। ২০০৬ সালেও বাছাই পর্ব খেলা পর্যন্তই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এবার বাংলাদেশ দল আবার সরাসরি খেলছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থেকে টুর্নামেন্টে খেলছে। যোগ্যতা অর্জন করেই খেলছে। সেই যোগ্যতার প্রমাণও দিতে চায় দল। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই যেমন বলেছিলেন, ‘কিছু করে দেখাতে চাই।’ বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট। সবার দৃষ্টি থাকবে টুর্নামেন্টে। এখানে ভাল কিছু করতে পারলে সবার দৃষ্টিতে তা পড়বে। তাই বাংলাদেশ দল কিছু করে দেখানোর চেষ্টায় আছে। সুযোগ পেলে অস্ট্রেলিয়াকেও যে হারিয়ে দেবে না, তা কে বলতে পারে। মাশরাফির আশা সামনে ভাল কিছু করার, ‘প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংটা ভাল হয়েছে। দল ভাল করেছে। জয় উপহার দেয়া যায়নি। তবে সামনে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ভাল করতে পারব আশাকরি।’ যদিও প্রথম ম্যাচ হেরে গেছে বাংলাদেশ। এখনও দুটি ম্যাচ বাকি। শেষ ম্যাচটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার আগে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা রয়েছে। এ ম্যাচটি জিততেই হবে বাংলাদেশকে। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে এর কোন বিকল্প নেই।
×