ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেল ব্যবসা জমজমাট

তদারকি করলে মেক্সিকোয় বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়ানো সম্ভব

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৪ জুন ২০১৭

তদারকি করলে মেক্সিকোয় বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়ানো সম্ভব

তপন বিশ্বাস, কানকুন, মেক্সিকো থেকে ফিরে ॥ ব্যবসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক সম্ভাবনাময় দেশ মেক্সিকো। পোশাক শিল্পের পাশাপাশি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ওষুধ, সিরামিক্স, প্লাস্টিকস, সেমি ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের। পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে বাংলাদেশী কাঁকড়া, চিংড়ি মাছসহ সমুদ্রিক মাছের। এছাড়া রেস্টুরেন্ট ব্যবসাও জমজমাট। ভারতীয় (বাংলাদেশ) খাবারের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। মেক্সিকোতে বাংলাদেশের এম্বাসেডর সুপ্রদীপ চাকমা জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক মেক্সিকো আসে। তদারকি করলে এখানে এ ব্যবসার আরও প্রসার ঘটানো সম্ভব। সিরামিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যের মান অনেক উন্নত। ওই পণ্য মেক্সিকোতে পাঠালে আর্থিকভাবে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হতে পারে। এছাড়া হন্ডুরাস, কোস্টারিকা, ক্যারিবিয়ান দেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া পানামাতে ‘ডিউটি ফ্রি শপ’ এ গামেন্টস, সিরামিক্স, প্লাস্টিকস, সেমি ইঞ্জিানয়ারিং পণ্যের ব্যবসার প্রসার ঘটানো যেতে পারে। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম থেকে এ জাতীয় পণ্য এনে এ অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সকল পণ্য স্থানীয় ছোট ব্যবসায়িরা ‘পানামার ডিউটি ফ্রি শপে’ বিক্রি করছে। এ পণ্যর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের নোয়াখালীর চাটখিলের মোঃ আব্দুল হান্নান ২৩ বছর যাবত মেক্সিকোতে বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি দুটি রেস্টুরেন্টের মালিক। বিভিন্ন স্থানে চাকরির পর ২০১৫ সালে তিনি প্রথম এ ব্যবসা শুরু করেন। শুরুতে একটু কষ্ট হলেও এক মাসের মধ্যে ভারতীয় এ খাবারের বেশ চাহিদা বাড়ে। ২০১৭ সালে তিনি আরও একটি রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, কানকুন শহরে বছরে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক পর্যটক আসেন। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের মধ্যে ভারতীয় খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁকড়া, চিংড়ি মাছের চাহিদা অনেক। তার মধ্যে বাংলাদেশের কাঁকড়া ও চিংড়ির চাহিদা অনেক বেশি। সামুদ্রিক মাছও তাদের প্রিয় খাবার তালিকায় থাকে। তিনি বলেন, মেক্সিকোতে ১১৭ বাংলাদেশী পরিবার রয়েছে। আমাদের এ কমিউনিটির জন্য একটি সংগঠনও রয়েছে। বাংলাদেশীদের অনেকেই রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন। তবে পাশাপাশি না করে একটু দূরে দূরে আমরা ভারতীয় রেস্টুরেন্ট করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আনিছুহ হক নামের এক ব্যক্তি ১০ রেস্টুরেন্টের মালিক। সেখানে বেশকিছু বাংলাদেশী কর্মচারীও রয়েছে। বাংলাদেশী ১১৭টি পরিবার মেক্সিকোতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের এম্বাসেডর সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন অনুপ্রবেশের অভিযোগে বেশকিছু বাংলদেশী মিক্সিকোর কারাগারে আটক রয়েছে। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় মেক্সিকোর ভূ-খ- থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আটক হয়েছে এরা তাদের মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। মেক্সিকোর স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশটির জাতীয় অভিবাসন সংস্থার (আইএনএম) কর্মকর্তারা। তারা এ বিষয়ে সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন। বৈঠকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়া থেকে মেক্সিকোয় অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছেন। অভিবাসীদের মূল লক্ষ্য হলোÑ সুযোগ বুঝে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা। অবৈধ এ মানবপাচারের সঙ্গে দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ দেশটির। উন্নত ও সচ্ছল জীবনের আশ্বাস দিয়ে স্বপ্নভূমি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে গরিব ও খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষগুলোর কাছ থেকে ২৫-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মাইগ্রেশন, মেক্সিকো (আইএনএম) এবং ইউএস কাস্টমস এ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে যথাক্রমে ১৪৯, ১৬৭, ৩২৮, ৬৯০, ৬৪৮, ৬৯৭ ও ১২০ বাংলাদেশী আটক হন। তারা বর্তমানে মেক্সিকোর জেলে বন্দী। অন্যদিকে ইউএস বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সির হাতে গত ছয় বছরে আটক হয়েছেন দুই হাজার চারশর বেশি বাংলাদেশী।
×