ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা পেটের দায়ে ভিক্ষা করেন

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৩ জুন ২০১৭

কুড়িগ্রামে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা পেটের দায়ে ভিক্ষা করেন

রাজুমোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ জীবন বাজি রেখে সম্মুখযুদ্ধে করে যারা দেশটাকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল তাদের মধ্যে একজন নুরত আলী। স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি জয়ী হয়েছেন সেই ’৭১ সালে। কিন্তু আজ সেই নুরত আলী জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পেতে খাবার নিচ্ছেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বয়সের ভারে নুহ্য মুক্তিযোদ্ধা নুরত আলী। মুক্তিযোদ্ধা নুরত আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষা ফেরুষা গ্রামে। স্ত্রী অকিতনকে নিয়ে বর্তমান জীবন। দুই মেয়ের বড় মেয়ে ফাতেমার বিয়ে দিয়েছেন পাশের লালমনিরহাট জেলা সদরের সাপটানায়। ছোট মেয়ে লতিফার বিয়ে দিয়েছেন একই জেলার মোঘলহাট এলাকায়। নুরত আলীর মুক্তিবার্তা নং (লাল বই) হচ্ছে ০৩১৬০৮০১৮২, ২১ মে ২০১৫ তারিখের গেজেট নং ২০১৮। যুদ্ধ করেছেন ভুরুঙ্গামারী এলাকায়। কোম্পানি কমান্ডার বোরহান উদ্দিনের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন নুরত আলী, তিনি জানান, দার্জিলিংয়ের মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ভুরুঙ্গামারীর সাহেবগঞ্জে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাক সেনাদের এক লেফটেন্যান্ট, তার গাড়ির চালক, ও নাপিতকে গুলি করে হত্যা করেন। তিনি আরও জানান, ‘যৌবনে যুদ্ধ করেছি সর্বস্ব দিয়ে। স্বাধীন দেশে এখন হয়েছি নিঃস্ব, হতভাগ্য, রিক্ত। স্ত্রী আকিতনের দিনমজুরের টাকায় সংসার চলে। যেদিন কাজ পায় সেদিন খায় অন্যদিন ভিক্ষা করে। প্যারালাইসিস হওয়ায় কাজ করতেও পারি না’। তিনি জানান, আমি কোন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বা কোন সাহায্য পাই না। বিভিন্ন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বলেও কোন লাভ হয়নি। শুধু একবার সরকারের তরফ থেকে দেড় বান্ডিল ঢেউটিন সাহায্য পেয়েছিলাম। সে সময়ে বড় মেয়ে ফাতেমার যৌতুকের দাবি মেটাতে সেই ঢেউটিন তিনি বিক্রি করতে বাধ্য হন। নুরত আলী আবার করে আবেদন করেছেন। সেই আবেদন করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মজিবরের তত্ত্বাবধানে। সেখানে জীবিত নুরত আলীকে দেখানো হয় মৃত হিসেবে। জাতীয়তা বাংলাদেশী উল্লেখ করলেও জাতীয় পরিচয় নং দেয়নি বলে সুপারিশ করে উপজেলা কমান্ডার। অথচ নুরত আলীর জাতীয় পরিচয় নং(এনআইডি) ১৯৪৭৪৯১১৮৬৭০০০০০১. কুরুষা ফেরুষা গ্রামের ইয়াদুল আলী মুক্তিযোদ্ধা নুরত আলী সম্পর্কে জানান, স্বাধীন দেশে বর্তমান সরকারের সময়ে কোন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নেই এরকমটা আছে বলে তার জানা নেই। কিন্তু তার কেন হলো না জানি না। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ভাতার জন্য তিনি আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে। আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। সমস্ত তথ্যের সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা সমাজসেবা অধিদফতরের মাঠকর্মী হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান নুরত আলীর আবেদন ও তদন্তের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধা নুরত আলীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে সবকিছু তথ্যের সতত্যা পাওয়া গেছে। আসছে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধার আবেদন মঞ্জুরের সুপারিশ করা হবে।
×